Monday, 26 January 2015

প্রশ্নঃ শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী(রঃ) এর হাদীশাস্ত্রে কি অবদান রেখেছেন তাঁর আলোচনা কর।


শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী(রঃ) এই ভারতীয় উপমহাদেশের একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুসলিম চিন্তাবিদ,আলিম,মুহাদ্দিস এবং মুফাসসিরীন হিসেবে বিশেষ খ্যাতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন। একদিকে যেমন মুঘল সম্রাজ্যের পতন ঘটছে ঠিক তেমনিভাবে চারিদিকে মুসলিমগণ বিভিন্ন ধরনের অশিক্ষা,কুশিক্ষা,কুসংস...্কারসহ সাথে নিমজ্জিত হচ্ছিল এবং সেই সাথে হিন্দু,শিখ,মারাঠা, ইংরেজ জাতি একে একে সকল জাতি যখন এই উপমহাদেশের মুসলিমগণের উপর অত্যাচার-নির্যাতন চালানো শুরু করে ঠিক তখন শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী(রঃ) এর ন্যায় মহাপুরুষের আবির্ভাব এই উপমহাদেশে ঘটল। তিনি এই উপমহাদেশের মুসলিমগণকে সকল প্রকারের কুসংস্কার ও বিজাতীয়দের ধ্যান-ধারনা থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হন। তিনি মুসলিমগণের বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাবলী কুরআন-হাদীসের সাহায্যে প্রণয়ন করতে থাকেন। তিনি আল-কুরআনের অনুবাদ সর্বপ্রথম এই ভারতীয় উপমহাদেশে নিয়ে আসেন। তার মাধ্যমে এই উপমহাদেশে হাদীসশাস্ত্রের বিশেষ প্রসারত লাভ করে। তিনিই সর্বপ্রথম মহান ব্যক্তিত্ব যিনি কুরানের আলোকে সামাজিক,অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক চিন্তা-ধারার সমাধান প্রদান করেন।তার এই দর্শন কার্যকর না হলে এই উপমহাদেশে ইংরেজ হুকুমত আরও বিশেষভাবে প্রসারতা লাভ করত। তার গ্রন্থাবলী ইতিহাসে অমর হয়ে আছে।
জন্ম ও বংশ
হিজরীর ১১১৪ সালে মোতাবেক ১৭০৩ খৃষ্টাব্দে দিল্লীর এক ধর্মীয় সম্ভ্রান্ত পরিবারে তার জন্ম হয়।তার প্রকৃত নাম ছিল আবুল ফুয়াদ আহমদ কুতুবউদ্দীন। ওয়ালী উল্লাহ ছিল তার উপনাম।তার পিতামহ ছিলেন ওয়াজিউদ্দিন যিনি সম্রাট শাহজাহানের সময় সেনাবাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তার পিতার নাম ছিল  শাহ আব্দুর রহীম। তিনি সেই সময়কারের একজন বিখ্যাত আলিম ছিলেন এবং তিনি ফাতওয়ায়ে আলমগীরির একজন অন্যতম বিচারক ছিলেন। তিনি মুজাদ্দিদে আলফে সানী তথা উমর(রাঃ) এর  বংশধর ছিলেন।তিনিএকজন যুগশ্রেষ্ঠ চিন্তানায়ক মুজাদ্দিদ-ই-জামান ছিলেন এবং তাকে ইমামুল হিন্দ বা শায়খুল হিন্দ বলা হয়।
শিক্ষা জীবন ও শিক্ষকতা
৫ বছর বয়সে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভের জন্য মক্তবে প্রেরিত হন। সাত বছর বয়সে তিনি সমগ্র কুরআন হিফয করতে সক্ষম হন।অতঃপর তিনি তার পিতার কাছে থেকে আরবী ও ফার্সী ভাষার শিক্ষা তিনি অর্জন করেছিলেন।তিনি মাত্র ১৫ বছর বয়সে তার পিতার কাছে থেকে কুরআন,হাদীস,তাফসীর,ফিকহ,উসূল ফিখ,আরবী ব্যাকরণ প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেছিলেন। তিনি তার পিতার কাছে থেকে ইলমে তাসাউফ অর্জন করেছিলেন। অতঃপর তার পিতা ১৭১৯ সালে মৃত্যুবরণ করলে তিনি তার পিতার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা তথা মাদ্রাসাতে রহমানিয়াতে কিছুদিন শিক্ষকতা করেছিলেন। এখানে অধ্যাপনাকালে তিনি জ্ঞান সাধনায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে তিনি দক্ষতা অর্জন করেছিলেন।১৭৩০ সালে তিনি হাজ্জ পালনে জন্য মক্কা ও মদীনায় গমন করেন এবং সেখানে গিয়ে তিনি জ্ঞান ভাল করেন। সেখানে তিনি আবূ তাহির মুহাম্মদ বিন ইবরাহীম মাদানী এবং আব্দুল্লাহ বিন শায়খ সুলায়মানের কাছে থেকে হাদীসশাস্ত্র এবং শায়খ তাজুদ্দীন হানাফী,শায়খ আলাকী মাক্কীর কাছে থেকে তিনি ইসলামী বিষয়ে তিনি বিশেষ শিক্ষা অর্জন করে তিনি১৭৩২ মতান্তরে ১৭৩৩ সালে তিনি স্বদেশে ফিরে আসেন এবং স্বপ্নে দেখেন যে, তিনি হাসান(রাঃ) ও হুসাইন(রাঃ) এর কাছে থেকে কলম উপহার পাচ্ছে। তখন সেখানকার আলিমগণ এই অভমত দেন যে, তিনি অতি শীঘ্রই তিনি উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ আলিম হিসেবে খ্যাতি লাভ করবেন।
তিনি প্রায় দুইশোর অধিক গ্রন্থ রচনা করেন। এগুলোর ভিতর কেবলমাত্র ৩৪টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। অনেক পাণ্ডুলিপি ব্রিটিস কর্তৃক আক্রমণের মাদ্রাসা আক্রমনের সময় নষ্ট হয়ে যায়। তার গ্রন্থাবলীর ভিতর হুজ্জাতুল বালিগা ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ যেখানে তার চিন্তা-ধারার বিকাশ ঘটেছিল। এছাড়া ফাতহুর রহমান, আলখিলাফাতুল খলীফা, আল ফাউযুল কবীর, আল কাউলুল জামীল,খয়ের কাছীর, ফাতহুল খাবীর সর্ববিখ্যাত কিতাব।
তার কর্মকে ছয় ভাগে ভাগ করা যায় যা হল কুরআন,হাদীস,ফিকাহ,তাসাউফ,মুসলিম দর্শন ও শিয়া-সুন্নী বিরোধ নিরসন।
 হাদীসশাস্ত্র তাঁর অবদান
শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস রহ. বর্ণনা করেন, দীর্ঘ বার বছর পর্যন্ত এ বিষয়ে গবেষণা করার পর আমার মন আমাকে মক্কা-মদিনার দিকে সফর করার জন্য উদ্ভুদ্ধ করল। আমি আমার মনের তাকাযায় ১১৪৩ হিজরীতে পবিত্র মক্কা শরিফ চলে যাই এবং সেখানে দু বছর অবস্থান করে প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস শায়খ আবু তাহির রহ. এবং অন্যান্য আলেমগণের নিকট হাদীস চর্চা করি। এভাবে তিনি তাসাউফের ক্ষেত্রেও কঠিন মেহনত করে শায়খ আবু তাহির রহ. থেকে তাসাউফের খিরকা লাভ করেন। অতপর ১১৪৫ হিজরীতে দিল্লিতে ফিরে এসে তার কাঙ্ক্ষিত সংস্কার আন্দোলন শুরু করেন। সংস্কার আন্দোলনের জন্য ফিকাহ ও ইলমে হাদীস শাস্ত্রে স্বাধীনভাবে ইজতেহাদ করার যোগ্যতা থাকা আবশ্যক। মক্কা-মদিনায় অবস্থান কালে শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস রহ. এ বিষয়ে পরিপূর্ণ যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হন। তার হাদীসসুন্নাহের কর্মসূচীকে কয়েকটি ধারায় বিভক্ত করা যায়।
১। মুসলিম জাতির আকীদার সংশোধন ও কুরআনের-সুন্নাহের প্রতি আহবান:
প্রকৃতপক্ষে শুধুমাত্র সংস্থার আন্দোলন দ্বারা কোন দেশের মানুষের আত্নশুদ্ধি করা অত্যান্ত কঠিন ব্যপার । এর জন্য প্রয়োজন আম্বিয়ায়ে কেরামের সংস্কার ধারা ঠিক রেখে দ্বীনের পরিপূর্ণ জাগরণ সৃষ্টি করা। তৎকালীন সম্রাট আকবরের প্রবর্তিত দ্বীনে এলাহীর উদার নীতির ফলে মুসলমানদের ঈমান-আকীদার ক্ষেত্রে যে বিশৃঙ্ক্ষলা বিরাজ করছিল তা সকলেরই জানা। সহজ-সরল মুসলিম জাতি বিভিন্ন ভাবধারা ও দর্শনপন্থিদের সাথে উঠা-বসা, চলা-ফেরার কারণে, বিশেষ করে সম্রাট আকবরের আমলে হিন্দু সাংস্কৃতির একক প্রাধান্যতার কারণে ভারতবর্ষে শুধুমাত্র নামধারী মুসলমানেরই অস্তিত্ত্ব বাকি ছিল। ইসলামী ধ্যান-ধারনা, ইসলামী আকীদা, ইসলামী অনুশাষনের সাথে তাদের পার্থক্য ছিল আকাশ পাতালের ন্যায়।
শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস রহ. এ সত্যকে উপলব্দি করতে পেরে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, এ বিপর্যয় থেকে মুসলিম জাতীকে উদ্ধার করতে হলে ব্যাপকভাবে কুরআনের দাওয়াত প্রচার করতে হবে। মহাগ্রন্থ আল কুরআন সার্বজনিন ও আন্তর্জাতিক। যে কোন যুগে যে কোন স্থানে এর বৈপ্লবিক নীতিকে অনুসরণ করলে ইসলামের স্বর্ণ যুগের (সাহাবাদের যুগের) ন্যায় নব জাগরণের সূচনা ঘটবে। এ কাজকে তিনি আঞ্জাম দিতে সর্বপ্রথম তিনি ফার্সী ভাষায় কুরআনের অনুবাদ করেন যার নাম করন করেন, “ফুতুহুর রহমান” করে। শাহ্ ছাহেব কুরআন ও হাদীছের প্রচার ও প্রসারে নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেন। তার প্রথম কর্মসূচী ছিল মানুষকে কুরআনের পথে আহবান জানানো। কারণ তৎকালীন সময়ের মানুষেরা শিরক ও বিদ‘আতের সাগরে এমনভাবে হাবুডুবু খাচ্ছিল যে, হাদীছের উপর মানুষের বিশ্বাস ঠুনকো হয়ে পড়েছিল। ভারতীয় উপমহাদেশে নিয়মতান্ত্রিকভাবে তিনিই প্রথম হাদীছের দারস চালু করেন।
f২.  জনসাধরণের মাঝে হাদীস ও সুন্নাহ ব্যাপকভাবে প্রচার ও প্রসার ঘটানো।
এ বিষয়ে আমাদের জানতে হলে প্রথমেই আমাদের জানতে হবে যে, ইসলামের মধ্যে হাদীসের গুরুত্ত্ব কতটুকুন। হাদীসের প্রচার ও তার সংরক্ষণ কেন প্রয়োজন? হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞ থাকা বা অবহেলা করলে ক্ষতি কী? প্রকৃতপক্ষে হাদীস হল উম্মতের ঈমান-আকীদার জন্য মান দন্ড সরূপ। শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. এর প্রথম কর্মসূচী ছিল আল কুরআনের প্রতি দাওয়াত। এই কাজের জন্য হাদীসের জন্য কতটুকুন তা আর আলোচনার অপেক্ষা রাখে না। তার কারণ হল পবিত্র কুরআনের ব্যাখাই যে, হাদীসে নববী । যেমন কুরআনের মাঝে আছে, اسوة حسنة রাসূলুল্লাহ সাল্ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাঝে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। ভারতের মাঝে যে শিরক-বিদআতের সয়লাব দেখা দিয়েছিল। তার এও একটা কারণ ছিল যে, হাদীসে নববীর প্রতি অবজ্ঞা ও অবহেলা প্রদর্শন করা। রাসূলে কারীম সাল্ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেন, যখন কোন সম্প্রদায় একটি বিদআতে লিপ্ত হয়, তখন তাদের থেকে একটি সুন্নত উঠিয়ে নেয়া হয়। (মিশকাত) শাহ সাহেব সমাজ থেকে শিরক বিদআতের অন্ধকারকে দূর করার লক্ষ্যে সুন্নতে নববীর প্রচার প্রসার মনোযোগি হলেন। মূলত তিনিই প্রথম মানুষ যিনি ভারত উপমহাদেশে সর্ব প্রথম হাদীসের দরস চালু করেন।
এছাড়া ফিকাহ ও হাদীসের মাঝে সমণ্বয়: অনেক কাল আগে থেকেই মুসলমানগণ ফিকাহ ও হাদীস নিয়ে চর্চা করে আসছেন। তবে তা ছিল নিতান্তই বিচ্ছিন্ন। শাহ সাহেবই সর্ব প্রথম ইলমে হাদীস ও ইলমে ফিকার মাঝে সমণ্বয় ঘটান।
২। যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যার আলোকে আল কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন ও সুন্নতে নববীর রহস্য উদঘাটনঃ
 অনেকের ধারণা যে, শরিয়তের কোন হুকুম আহকাম কোন উদ্দেশ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। কাজের সাথে তার কোন প্রকার ফলাফলের সম্পর্ক নেই। এই ধারণা ভুল। ইজমা, কিয়াস ও খাইরূল কুরুন উক্ত মতবাদকে খন্ডন করেন যেমন, নামায। এই হুকুমটি আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করা ও তার কাছে মুনাজাত করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গরীব ও অসহায়দের দুখ দূর্শদশা ও অভাব অনটনকে অনুভব করার জন্য আল্লাহ তায়ালা যাকাতের জন্য বিধান দান করেছেন। মানুষের অন্তরকে কুপ্রবৃত্তির প্রভাব থেকে দূর করার জন্য আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য রোযাকে ফরয করে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালার মহা গ্রন্হ আল কুরআনের প্রচার প্রসার ও সুজলা সুফলা সুন্দর এই পৃথিবী থেকে সকল প্রকার ফেতনা ফাসাদ দূর করার লক্ষ্যে আল্লাহ তায়ালা জিহাদকে ফরয করেছেন। অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদেশ নিষেধের মাঝেও অনেক রহস্য লুকায়িত রয়েছে। যেমন যোহরের পূর্বে চার রাকাত নামায সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ঐ সময় আকাশের দরজা উন্মুক্ত করা হয়, আমার ইচ্ছে হয় এ সময় যেন আমার নেক আমল উর্ধোরহন হয়। এভাবেই প্রত্যেক হুকুমের মাঝেই কোন না কোন রহস্য লুকায়িত রয়েছে। এক শ্রেণীর মানুষ মনে করে যে, ইসলামী হুকুম আহকাম যুক্তির আলোকে বিশ্লেষণ করা এবং এগুলোর রহস্য উদঘাটন করা ইসলামের জন্য ক্ষতিকারক। শাহ সাহেব বলেন যে, এই ধারণা ভুল। কারণ ইসলামী হুকুম আহকামকে যুক্তির আলোকে বিশ্লেষণ করলে কোন প্রকার ক্ষতি নয় বরং উপকার হবে। যেমন আমলের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। এছাড়াও ফিকহি ইজতেহাদের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি হবে। এদিকে লক্ষ্য করেই শাহ সাহেব এ কাজ হাদীসশাস্ত্রে এক বিশেষ স্থান দখল করতে সক্ষম হয়েছে।
৩। হাদিসের আলোকে  উম্মতে মুহাম্মাদীর সর্বস্তরের জনগণের প্রতি সংশোধনের আহবান:
শাহ সাহেব হাদীসের দরস ও তাদরিসের পাশা-পাশি সমাজের সকল প্রকার অনৈতিক কর্ম কাণ্ড সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে অবগত ছিলেন। তিনি সমাজের এহেন সকাল প্রকার রোগ থেকে মুক্তির জন্য সমাজের সর্বস্তরের জনগণের প্রতি বিশেষ আহবান জানান।
৪। শিক্ষা ও তারবিয়্যাতের মাধ্যমে যুগ্য উত্তরসূরী তৈরী করা।
তিনি তাঁর ছাত্রদের মাঝে অত্যন্ত চমৎকারভাবে হাদিসের দরস(শিক্ষা) দিতেম।যাতে করে তাঁর মৃত্যুর পরেও যাতে করে হাদিসের ধারক ও বাহকেরা যেন এই অঞ্চল হতে বিলীন হয়ে না যায়। এরই প্রতি ফলন হল শাহ আব্দুল আজীজ রহ. শাহ মুহাম্মাদ ইসহাক রহ. শাহ মুহাম্মাদ বেলায়েত আলী রহ. সৈয়দ আহমাদ বেরলভী রহ. হযরত শাইখুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দি রহ. শাইখুল ইসলাম হযরত হুসাইন আহমাদ মাদানি রহ. প্রমুখ।
৫। সমকালীন রাজনৈতিক অস্তিরতা ও দুর্যোগের কবল থেকে মুসলিম জাতিকে উদ্ধার করা:
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, সম্রাট আলমগীরের মৃত্যুর পর ভারতে যে রাজনৈতিক বিশৃংখলা দেখা দিয়েছিল, তা মুসলমানদের জন্য খুবই বিপদজনক ছিল। শাহ সাহবে মুসলিম জাতিকে এ দুর্যোগ থেকে উদ্ধারের লক্ষ্যে জনসাধরণের মাঝে হাদিসের শিক্ষা প্রসারের কর্মসূচী গ্রহণ করেন। যাতে করে মুসলিমগণ হাদিসের চর্চ্চার মাধ্যমে এই বিষয়টি স্পষ্টভাবে উপলব্দ্বি করতে পারে যে, কুফরী সরকারের কোন আনুগত্য নেই। এই অঞ্চল এখন দারুল হারব। তাই হাদীসের আলোকে তিনি এই ব্যাখ্যা প্রদান করতেন যে, এই কুফরী শাসিত অঞ্চল এখন দারুল হারব তাই দারুল ইসলামে তা পরিণত করার জন্য আমাদের একযোগে কাজ করে যেতে হবে।
৬। হাদীসের কিতাবসমুহের স্তরবিভাগ
হাদীসের কিতাবসমূহকে মোটামুটিভাবে পাঁচটি স্তরে বা তাবাকায় ভাগ করা হয়েছে। শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী (রঃ) তাঁর ‘হুজ্জাতুল্লাহহিল বালিগা’ নামক কিতাবে এরূপ পাঁচ স্তরে ভাগ করেছেন।
প্রথম স্তর:এ স্তরের কিতাবসমূহের কেবল সাহীহ হাদিসই রয়েছে। এ স্তরের কিতাব মাত্র তিনটিঃ মুওয়াত্তা ইমাম মালিক, বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। সকল হাদীস বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে একমত যে, এ তিনটি কিতাবের সমস্ত হাদীসই নিশ্চিতরূপে সহীহ।
দ্বিতীয় স্তর:এ স্তরের কিতাবসমূহ প্রথম স্তরের খুব কাছাকাছি। এ স্তরের কিতাবে সাধারনতঃ সহীহ ও হাসান হাদীসই রয়েছে। যঈফ হাদীস এতে খুব কম আছে। নাসাঈ শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ ও তিরমিযী শরীফ এ স্তরের কিতাব। সুনান দারিমী, সুনান ইবন মাজা এবং শাহ ও ওয়ালি উল্লাহ (রঃ)-এর মতে মুসনাদ ইমাম আহমেদকেও এ স্তরে শামিল করা যেতে পারে। এই দুই স্তরের কিতাবের উপরই সকল মাজহাবের ফাকীহগণ নির্ভর করে থাকেন।
তৃতীয় স্তর:এ স্তরের কিতাবে সহীহ, হাসান, যঈফ, মা’রুফ ও মুনকার সকল প্রকারের হাদীসই রয়েছে। মুসনাদ আবী ইয়া’লা, মুসনাদ আবদুর রাযযাক, বায়হাকী, তাহাবী ও তাবারানী (রঃ)-এর কিতাবসমূহের এ স্তরেরই অন্তর্ভুক্ত।
চতুর্থ স্তর:হাদীস বিশেষজ্ঞগণের বাছাই ব্যাতিত এ সকল কিতাবের হাদীস গ্রহণ করা হয় না। এ স্তরের কিতাবসমুহে সাধারনতঃ যইফ হাদীসই রয়েছে। ইবন হিব্বানের কিতাবুয যুআফা, ইবনুল-আছীরের কামিল ও খতীব বাগদাদী, আবূ নুআয়ম-এর কিতাবসমূহ এই স্তরের কিতাব।
পঞ্চম স্তর:উপরের স্তরেগুলোতে যে সকল কিতাবের স্থান নেই সে সকল কিতাবই এ স্তরের কিতাব।
অর্থাৎএমনিভাবে পরবর্তীতে তিনি মুহাদ্দিসদের জন্য পথ উন্মুক্ত করে যান যে, কীভাবে করে হাদীসের শিক্ষা মুহাদ্দিস ছাত্রদের প্রদান কতে হবে আর এদিক হতে তিনি একটি হাদীসশাস্ত্র মাইলফলক স্থাপন করে যান।
গ্রন্থাবলীঃ
হাদীসের ক্ষেত্রে হযরত শাহ সাহেবের অনেক অবদান রয়েছে। তার লিখিত হাদীস গ্রন্থসমূহ থেকে উল্লেখযুগ্য কয়েকটি: মুছাফ্ফা, মুছাওয়া, শরহে তরজমায়ে সহীহ বুখারী, আল-ফসলুল মুবীন মিন হাদীসিন নাবিয়্যিল আমীন।
ইন্তিকাল: ১১৭৬ হিজরীর ২৯ শে মুহাররম যুহরের সময় হযরত শাহ সাহেব এই অস্থায়ী পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে চিরস্থায়ী ধরার প্রতি যাত্রা শুরু করেন। মৃত্যুর সময় তিনার বয়স হয়েছিল ৬১ বৎসর। মৃত্যুর সময় তিনি চার জন যুগ্য সন্তান রেখে যান । তারা হলেন, শাহ আব্দুল আযীয, শাহ বদিউদ্দীন, শাহ আব্দুল কাদির, শাহ আব্দুল গণী।
রচনাবলী: বিশেষজ্ঞদের মতে তার রচনাবলী দুইশতের অধিক। হাদীস, তাফসীর, ফিকাহ, উসুলে ফিকাহ, রাষ্ট্রনীতি, তাসাউফ নির্বিশেষে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই তার

No comments:

Post a Comment

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...