Monday, 26 January 2015

সামাজিক জীবনে ইসলাম


আশেপাশের সকল পরিবেশ নিয়ে সমাজ গঠিত হয়েছে। একটি সমাজ ছাড়া মানুষ চলতে পারে না।এই সমাজ জীবনের প্রতি ইসলাম অত্যাধিক গুরত্বারোপ করেছে। সমাজের কথা আল কুরআনে বলা হয়েছে যা হলঃ
হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের... দুজন থেকে অগণিত পুরুষ নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচঞ্ঝা করে থাক এবং আত্নীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন।   [নিসাঃ১]
সকল মানুষ একই জাতি সত্তার অন্তর্ভুক্ত ছিল। [বাকারাঃ২১৩]
তারা সকলেই তোমাদের ধর্মের; একই ধর্মে তো বিশ্বাসী সবাই এবং আমিই তোমাদের পালনকর্তা, অতএব আমার বন্দেগী কর[আম্বিয়াঃ৯২]
হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও।  [হুজুরাতঃ১৩]
মুসলিমগণ পরস্পর ভাই ভাই। [হুজুরাতঃ৯]
অর্থাৎ,উপরোক্ত আলোচনা হতে এই বিষয়টি প্রতীমান হয় যে, পৃথিবীর সকল আদি মানুষ এক।তারা সকল আদম(আঃ) ও হাওয়া(আঃ) এর সন্তান। পরবর্তীতে আল্লাহ তাদের বিভন্ন গোত্র ও পরিবারে বিভক্ত করেছেন। সকল মানবজাতি এক।তাদের মধ্যকার কোন পার্থক্য নেই। তারা সকলে ভাই ভাই।
এই সমাজের সকল স্তরের মানুষের সাথে আল্লাহ পাক ইনসাফপূর্ণ আচরণ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন।আল্লাহ বলেন,
তোমরা আল্লাহর উপাসনা করবে, তাঁর সাথে কদাচ অন্যকে অংশীদার করবে না, এবং পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন-অসহায়, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূরবর্তী প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী এবং তোমাদের অধীনস্থদের সাথে সুন্দর-কল্যাণকর (এহসান) আচরণ করবে। নিশ্চই আল্লাহ আত্মম্ভরী দম্ভপ্রকাশকারীদের ভালবাসেন না। (কোরান নিসা:৩৬)
পিতা-মাতার সাথে সদয় ব্যবহার করো স্বীয় সন্তানদেরকে দারিদ্রেø কারণে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে তাদেরকে আহার দেই, নির্লজ্জতার কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য, যাকে হত্যা করা আল্লাহ হারাম করেছেন, তাকে হত্যা করো না; কিন্তু ন্যায়ভাবে। [আনআমঃ১৫১]
হুজুরাত হল সামাজিক আদবের জন্য আর নূর হল দণ্ডবিধির জন্য।
ইসলাম পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন,সমাজের অসহায় দুঃস্থ মানুষদের সাহায্য করতে বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছে।
আত্মীয় স্বজনদের অধিকার
মানুষ পৃথিবীতে সংসারের মায়ায় আবদ্ব।এ সংসারে মাতাপিতা,ভাইবোন,চাচা,চাচি,ফুফু,ফুপা এবং বৈবাহিক সম্পর্কের দিক দিয়ে অনেকে আত্মীয়।মাতাপিতার কর্তব্য আদায়ের পর এ সকল আত্মীয়-স্বজন আমাদের নিকট সহযোহিতা ও সদ্বব্যবহার পাওয়ার হকদার।ইসলাম আত্মীয়-স্বজনদের অধিকার আদায় করার ব্যাপারে যেভাবে তাগিদ দেয় তা নিম্নরুপঃ
ইসলামী জীবন-যাপনে আত্নীয়-স্বজনের হক যথাযথভাবে আদায় করার নির্দেশ রয়েছে।এ সম্পর্কে কুরআনে এরশাদ হয়েছে,
তুমি তোমার আত্মীয়ের অধিকার আদায় কর” [বনী ইসরাইলঃ২৬]
আত্মীয়-স্বজনকে কখনও কষ্ট দেওয়া যাবে না।তাদের জীবনব্যবস্থা সুখের হয় এজন্য ইসলাম তাদেরকে দান করার ব্যাপারে বিশেষভাবে উৎসাহ দেওয়া। নিকট আত্মীয়দের দান করার ব্যাপারে নবী করিম (সাঃ) বলেন,
নিকট আত্মীয় অর্থ দান করা হলে এক সংগে দুইটি কাজ হয়একটি হল আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা এবং দ্বিতীয়টি হল দান করা
তাই নিকট আত্মীয়দের দান না করে দূরবর্তী লোকদের দান করলে আল্লাহ তা পছন্দ করেন না।বরং নিকটাত্মীয়দের দান করা সর্বপ্রথম কর্তব্য।
আত্মীয়তার সাথে সম্পর্ক রক্ষাকারী ব্যক্তিবর্গের আয়ু আল্লাহ বৃদ্বি করেন।রাসূল(সাঃ) বলেন,
উত্তম চরিত্র, প্রতিবেশীর সাথে উত্তম আচরণকারী এবং আত্মীয়তা সম্পর্ক রক্ষাকারীর দ্বারা মানুষের আয়ু বৃদ্বি পায়
আত্মীয়-স্বজনদের সাথে কোন অবস্থাতে ঝগড়া করা যাবে না।তাদের সাথে সর্বদা সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।তাদের সাথে সম্পর্ক কোন অবস্থায় ছিন্ন করা যাবে না।তাই রাসূল(সাঃ)বলেছেন,
আত্মীয়তার সাথে সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি কখনও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না
প্রতিবেশীদের সাথে সদ্বব্যবহার
সাধারণভাবে বাড়ীর আশপাশে যারা বসবাস করে তাদেরকে প্রতিবেশী বলা হয়। তবে কখনও কখনও সফর অথবা কাজের সঙ্গীকেও প্রতিবেশী বলা হয়। প্রতিবেশীই হচ্ছে মানুষের সবচেয়ে নিকট জন যিনি তার সম্পর্কে অন্যদের তুলনায় বেশি খবরাখবর জানেন।তাই ইসলাম ধর্মে প্রতিবেশীর অত্যধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং তার অধিকারকে খুব বড় করে দেখা হয়েছে।
প্রতিবেশী কারা ? যাদের সম্পর্কে কোরআন হাদিসে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে, সেটি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে উলামাদের বিভিন্ন মতামত রয়েছে।কেউ বলেছেন: প্রতিবেশীর সীমানা হল, চতুর দিক দিয়ে চলি¬শ ঘর, কেউ বলেন: যে তোমার সাথে ফজর পড়ল সেই তোমার প্রতিবেশী, ইত্যাদি। আর এই সমস্ত কথার মনে হয় কোন গ্রহণযোগ্য প্রমাণ নেই । সর্বোত্তম এবং সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মতামত হচ্ছে ―প্রতিবেশী সে-ই, তার বাড়ির কাছাকাছি যার বাড়ি। এবং যার বাড়ির সাথে তার বাড়ি মেলানো।সীমানা নির্ধারিত হবে প্রচলিত ধারা অনুযায়ী, যে ব্যক্তি মানুষের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী প্রতিবেশী, সেই প্রতিবেশী। আর এটা এই জন্য যে, শরীয়ত যে সমস্ত নামের উলে¬খ করেছে এবং তার অর্থ নির্ধারণ করে দেয়নি, তার অর্থ জানার জন্য সঠিক প্রচলিত রীতির দিকেই প্রত্যাবর্তন করতে হয়।
তাদের শ্রেণী ও মর্যাদার বিভিন্নতার কারণেও গুরুত্বে ভিন্নতা আসবে:
১)   এক ধরনের প্রতিবেশী আছে যার অধিকার হচ্ছে তিনটি, তিনি হলেন নিকটাত্মীয়-মুসলমান প্রতিবেশী। তার অধিকার তিনটি হচ্ছে: আত্মীয়তা, ইসলাম এবং প্রতিবেশিত্ব।
(২)   আরেক প্রকার প্রতিবেশী যার অধিকার দুইটি: তিনি হলেন অনাত্মীয় মুসলিম প্রতিবেশী, তার অধিকার দু’টি হচ্ছে: প্রতিবেশিত্ব ও ইসলাম ।
(৩)   আর এক ধরনের প্রতিবেশী, যার অধিকার মাত্র একটি, তিনি হলেন অমুসলিম প্রতিবেশী, তার অধিকার শুধু প্রতিবেশিত্বের।
তার বাড়ির সামনে আবর্জনা ফেলা, তাকে বিরক্ত করা, ছেলে মেয়েদেরকে তার ঘরের জিনিস নষ্ট করতে উদ্বুদ্ধ করা বা বাধা না দেওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেন :―
যে আল্লাহর প্রতি এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।
প্রতিবেশীকে হাদিয়া দেওয়া।তার বাড়িতে খাবার ইত্যাদি প্রেরণ করা।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে অসীয়ত করেছেন :
অর্থাৎ. যখন তুমি তরকারী রান্না করবে তাতে বেশি করে পানি দেবে অতঃপর তোমার প্রতিবেশীর খবর নিয়ে তার থেকে তাদেরকে কিছ দেবে।
ইসলাম প্রতিবেশীদের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে অত্যাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে যা অন্য কোন ধর্ম কখনও করে নাই।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেন.   জিবরীল আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে অনবরত অসিয়ত করতে থাকেনএমনকি এক পর্যায়ে আমার ধারণা হয়েছিলআল্লাহ তাআলা  তাকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেবেন (বুখারী মুসলিম) 

ইয়াতীম-গরীবদের প্রতি সহানুভূতিশীল
ইসলাম ধর্ম সমাজের অসহায়-দুঃস্থ,নিরীহ, হতভাগা,বিপদ্গ্রস্থ মানুষদের সাহায্য করার জন্য বিশেষভাবে উদ্বুদ্ব করে থাকে। যারা এভাবে করে সমাজের অসহায় দরিদ্র্য লোকদের প্রতি দয়া দেখাবেন আল্লাহ তাদেরকে বিশেষ মর্যাদায় অসীন করবেন। এ ব্যাপারে অসংখ্য হাদীস রয়েছে।রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
যে কোন মুসলিম অন্য মুসলিমকে বস্ত্রহীন অবস্থায় কাপড় দান করলআল্লাহ তাকে জান্নাতেরভিতর সবুজ রঙ এর পোশাক পড়াবেন,যে কোন ক্ষুধার্ত মুসলিমকে খাদ্য দান করবেন আল্লাহতাকে জান্নাতে ফল খাওয়াবেন আর কোন মুসলিম অন্য মুসলিমকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় পানি পানকরালেআল্লাহ তাকে সীলমোহরকৃত সুস্বাদু পানি পান করাবেন [আবূ দাউদ]
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
তোমরা ভাইয়ের প্রতি হাসিমুখে হাসিমুখে তাকান সদকা।কাউকে ভাল কাজ করার জন্যতোমার উপেদাশাবলি হল সদকা। কাউকে ভাল কাজ করার জন্য উপদেশ সদকা।কাউকে মন্দকাজ থেকে বিরত রাখাও হল সদকা। পৃথিবীতে পথভ্রষ্ট ব্যক্তিকে তোমার সুপথ প্রদর্শন একটিসদকা। যে ব্যক্তি চোখে কম দেখে তাকে সাহায্য করা সদকা। যদি রাস্তা হতে পাথর,কাঁটা এবংহাড় সরিয়ে দাও,তাও একটা সদকা।তোমার বালতির পানি দিয়ে তোমার ভাইয়ের বালতি ভরেদেওয়াও সদকা [তিরমিযী]
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত তার ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে আল্লাহ তার প্রতি ততক্ষণ সাহায্য করতেথাকে [মুসলিম]
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
তোমরা ক্ষুদার্ধকে খাদ্য দাও,রুগ্ন ব্যক্তিকে সেবা কর,বন্দীকে মুক্ত কর এবং ঋণের দায়ে আবদ্বব্যক্তিকে ঋণমুক্ত কর [বুখারী]
যারা বিপদ্গ্রস্থ মানুষদের সাহায্য করেবে তারা অতি সহজে আল্লাহকে সন্তুষ্ঠ করতে পারবে এবং এর বিনিময় সে জান্নাত লাভ করতে পারবে।রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
যে ব্যক্তি  আশায় আমার উম্মাতের কারো কোন প্রয়োজন পূরণ করল যেএর দ্বারা তাঅন্তরকে খুশী করবেসে যেন আমার অন্তরকে খুশী করল। আর যে আমাকে খুশী করল,সে যেনআল্লাহকে খুশী করল।আর যে আল্লাহকে খুশী করল,আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন[বায়হাকী]
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
কোন মুসলিম যখন তার মুসলিম ভাইয়ের সেবাযত্ন করে তখন সে জান্নাতের ফল আহরণে লিপ্তথাকে,এমন কি সে ঘরে ফিরে আসা পর্যন্ত।” [মুসলিম]
মুসলিমগণকে এভাবে একজনকে অপরের সাহায্যের জন্য একটি দেহের সাথে তুলনা করা হয়েছে।একজন যখন বিপদের পতিত হবে তখন তিনি সাধ্যাতীত তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসবেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:  ‘ ভালোবাসাদয়াসহানুভূতির দিক দিয়ে মুমিনদের দৃষ্টান্ত হল একটি দেহের ন্যায়। দেহের একাংশ  আক্রান্ত  হলে  সমগ্র দেহ জ্বরগ্রস্থ নিদ্রাহীন হয়ে পড়ে’(মুসলিম) 
এমনিভাবে একজন মুসলিম যখন বিশ্বের যে কোনো স্থানে আক্রান্ত হয়, বিপদে পড়ে, তখন অন্যসকল মুসলিমের কর্তব্য হল, তার প্রতি রহম ও ইহসান করা। তার ব্যথায় ব্যথিত হওয়া। তার সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া।
 দরিদ্র্য অসহায় লোকদের সাহায্য যারা করবে আল্লাহ তাদেরকে কখনও অপমানিত ও অপদস্থ করবেন না। যখন রাসূলুল্লাহ(সাঃ) প্রথম ওয়াহীপ্রাপ্ত হন তখন রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ঘাবড়ে যান এবং সেই সময় তার স্ত্রী খাদীজা(রাঃ) তার প্রিয় স্বামী রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন,
আল্লাহর শপথ করে বলছিআল্লাহ কখনো আপনাকে অপমানিত করবেন না।কেননা আপনিআত্মীয়দের প্রতি সাদচার করুন,অসহায় ব্যক্তিদের বোঝা বহন করেন,নিঃস্ব-ব্যক্তির অন্ন বস্ত্রেরব্যবস্থা করে দেন,মেহমানের আপ্যায়ন করেব এবং বিপদ্গ্রস্থ মানুষদের সহায়তা প্রদান করে থাকুন

ইসলাম যেভাবে করে একটি মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
ক। জীবনের নিরাপত্তা
ইসলাম মানুষের জীবনের নিরাপত্তা সামাজিকভাবে নিশ্চিত করেছে। একের জীবন অপরের জন্য তা হরণ করা হারাম।আল্লাহ বলেন,
সে প্রাণকে হত্যা করো না, যাকে আল্লাহ হারাম করেছেন; কিন্তু ন্যায়ভাবে।  [ইসরাঃ৩২]
 যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবাপৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। এবং যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে। [মায়িদাঃ৩২]
যদি সমাজে এই হত্যাকাণ্ডের মত অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে তাহলে তার জন্য আল্লাহ পাক দণ্ডবিধি জারী করেছেন যার ফলে হত্যাকারী ব্যক্তিকেও হত্যার পরিবর্তে হত্যার বিধান দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
হে ঈমানদারগন! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কেসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায় [বাকারাঃ১৭৭]
খ। সম্পদের নিরাপত্তা
ইসলাম কেবলমাত্র মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নাই বরং ইসলাম মানুষের সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।ইসলামের দৃষ্টিতে  চুরি,ডাকাতি,ছিনতায়ি,জুয়া,সুদ,ঘুষ ইত্যাদি অনৈতিক কর্মকাণ্ড একেবারে নিষিদ্ব।
হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কর না। [নিসাঃ২৯]
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন,
যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ জমি কারও কাছে থেকে অন্যায়ভাবে দখল করবে আল্লাহ কাল কিয়ামতের দিন তার ঘাড়ে সাত তবক পরিমাণ আসমান পৃথিবী চাপিয়ে দিবেন।
চুরি করা ইসলামের দৃষ্টিতে একটি জঘন্যতম অপরাধ। যারা চুরি করবে তাদের জন্য ইসলাম হাত কাটার বিধান দিয়েছে। আল্লাহ বলেন,
যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের হাত কেটে দাও তাদের কৃতকর্মের সাজা হিসেবে [মায়িদাঃ৩৮]
অন্যদিকে যারা ডাকাতি ও রাজহানীর মত জঘন্য অপরাধ করবে তাদের ব্যাপারে ইসলাম কঠোর দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছে। আল্লাহ বলেন,
যারা আল্লাহ তাঁর রসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি।  [মায়িদাঃ৩৩]
উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথাটি প্রতীয়মান হয় যে, কেউ কারও সম্পদকে অন্যায়ভাবে লুণ্ঠন করতে না পারে সে ব্যাপারে ইসলাম অত্যন্ত সজাগ দৃষ্টি দান করেছে।
গ। সম্ভ্রমের নিরাপত্তা
ইসলাম একে অপরের সম্মান,সম্ভ্রম,ইজ্জত আব্রুর রক্ষা করার কথা বিশেষভাবে গুরত্বসহকারে উল্লেখ করেছে। তাই আল্লাহ বলেন,
হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য গৃহে প্রবেশ করো না, যে পর্যন্ত আলাপ-পরিচয় না কর এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম না কর। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম, যাতে তোমরা স্মরণ রাখ। [সূরা নূর-২৭]
এখানে গৃহবাসীর ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে তার অনুমতি গ্রহণ কথা বলা হয়েছে। কারণ একটি মানুষ ঘরে যেকোন অবস্থায় প্রবেশ করতে পারে। যদি আকস্মিকভাবে কেউ কারও ঘরে প্রবেশ করে তাহলে উভয় পক্ষ এক বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হবে। তাই কারও গৃহে প্রবেশ করার পূর্বে তার অনুমতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সুরা নূর যে অনুমতির কথা বলা হয়েছে, তা অত্যন্ত বৈজ্ঞানিক।সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে কি বিষয় আলাপ করবে তা নির্ধারণ করা।তাছাড়া কারও অনুপস্থিতিতে কারও ঘরে অনুমতিবিহীন অবস্থায় প্রবেশ করলে তার ঘর থেকে কোন কিছু হারিয়ে গেলে তাকে সন্দেহ করবে।অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করলে এই সমস্যা হয়তো হত না।
এমন কি ঘরে মা থাকার পর সেখানে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে। যখন এই বিধান দেওয়া হয় তখন এক সাহাবী(রাঃ) মুহাম্মদ(সাঃ)কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, ঘরে মা থাকলে কেন তার অনুমতি নিতে হবে? তখন জবাবে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বললেন। তুমি কি তোমার মাকে উলংগ অবস্থায় দেখতে চাও? তখন সেই সাহাবা বললেন না,তখন আল্লাহর রাসূল বললেন এই কারণে তার মায়ের কক্ষে প্রবেশ করার পূর্বে অনুমতি নিতে হবে।
আল্লাহ পাক মানুষের পবিত্র একটি বিষয় সতিত্বকে রক্ষা করার জন্য বিশেষভাবে আহবান জানিয়েছেন।তাই এই ব্যভিচারকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষিদ্ব ঘোষণা করেছে।ব্যভিচার বলতে আমরা সাধারণত নারী-পুরুষের অবৈধ মেলা-মেশাকে বুঝে থাকি।  ব্যভিচারের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে আল-রামেলী বলেন,
ব্যভিচার হল অকাট্য প্রত্যক্ষ হারাম লিঙ্গের ভিতর লিংগ প্রবেশ করানো যাতে স্বাভাবিকভাবেযৌনাকর্ষন থাকে
মানসুর বিন ইউসুফ বলেন,
সামনে বা পিছনের দিক দিয়ে অশ্লীল কাজ হল ব্যভিচার
এই ব্যভিচার ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য একটি অপরাধ।তাই আল্লাহ বলেন, আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়োনা। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং খুবই মন্দ পথ”। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৩২)  আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ  “এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না। অতঃপর কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালংঘনকারী হবে”। (সূরা মুমিনুনঃ ৫-৭)
অপবাদ দেওয়া একটি জঘন্যতম অপরাধ।একটি হাদীসে মুহাম্মদ (সাঃ) সাতটি কবীরা গুনেহের নাম উল্লেখ করেছেন যার একটি বলা হয়েছে কোন সতী-সাধবী মহিলাকে অপবাদ দেওয়া।এছাড়া রাসূলে করীম(সাঃ) বলেন, “তোমরা কোন সতী-সাধবী মহিলার নামে অপবাদ দিও না
এই অপবাদের দ্বারা সত্বী-সাধ্বী মহিলার সম্মান নষ্ট করা হয়। যারা কারও নামে এমন অপবাদ দিবে তাদের জন্য আশিটি বেত্রাঘাতের কথা বলা হয়েছে।আল্লাহ বলেন,
যারা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে অতঃপর স্বপক্ষে চার জন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে।  [নূরঃ৪]                                                                                                                         
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন
মদকে আরবীতে ‘খামর’ বলা হয়। এর আভিধানিক অর্থ হল, আচ্ছন্ন করা। ইসলামী পরিভাষায় ‘খামর’ বা মদ বলা হয়, যা পান করলে জ্ঞান ও বুদ্ধি আচ্ছাদিত হয়ে পড়ে।
ইসলামের দৃষ্টিতে মদ জুয়া হারাম ও কবীরা গুনাহ।আল্লাহ বলেন,
মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।[মায়িদাঃ৯০]
হাদীসে মদ পানের ভয়াবহ পরিণতির কথা হাদীসে তুলে ধরা হয়েছে। হাদীসে বলা হয়েছে,
মদ্যপায়ী ব্যক্তিগণ কখনও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
যারা মদপান করবে আল্লাহ তাদের ইবাদত সহজে কবুল করবেন না। তাই রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এই মর্মে বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নেশাদার দ্রব্য পান করবে আল্লাহ তার ৪০ দিন ছালাত কবুল করবেন না। যদি এ অবস্থায় মারা যায় তাহ’লে জাহান্নামে যাবে। যদি তওবাহ করে তাহ’লে আল্লাহ তার তওবাহ কবুল করবেন। আবার নেশাদার দ্রব্য পান করলে আল্লাহ তার ৪০ দিন ছালাত কবুল করবেন না। যদি এ অবস্থায় মারা যায় তাহ’লে জাহান্নামে যাবে। আর যদি তওবাহ করে তবে আল্লাহ তার তওবাহ কবুল করবেন। আবার যদি নেশাদার দ্রব্য পান করে আল্লাহ তার ৪০ দিন ছালাত কবুল করবেন না। এ অবস্থায় মারা গেলে জাহান্নামে যাবে। তওবাহ করলে আল্লাহ তার তওবাহ কবুল করবেন। লোকটি যদি চতুর্থবার মদ পান করে আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিন ‘রাদাগাতুল খাবাল’ পান করাবেন। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! ‘রাদাগাতে খাবাল’ কী? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আগুনের তাপে জাহান্নামীদের শরীর তে গলে পড়া রক্তপূজ মিশ্রিত গরম তরল পদার্থ:
মদের সাথে সম্পর্ক রাখে এমন দশ শ্রেণীর লোকের প্রতি রাসূল (ছাঃ) অভিশাপ করেছেন। () যে লোক মদের নির্যাস বের করে () প্রস্ত্ততকারক () মদপানকারী () যে পান করায় () মদের আমদানীকারক () যার জন্য আমদানী করা হয় () বিক্রেতা () ক্রেতা () সরবরাহকারী এবং (১০) এর ভ্যাংশ ভোগকারী
মানুষ সমাজে যত ধরনের অশ্লীল কাজ-কর্ম করুক না কেন, তার পিছনে একটি মূল কারণ হল মাদকদ্রব্য।মানুষ যখন তা সেবন করবে তখন তার আর কোন হুশ থাকে না।তাই তখন সে যা ইচ্ছে তাই করে বসে। তাই আল্লাহর রাসূল বলেছেন,
সকল অশ্লীল অপকর্মের মূল হল মাদকদ্রব্য।
তাই সামাজিক নিরাপত্তা ও সমৃদ্বি অর্জনের জন্য মাদক নিরাময় ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।

1 comment:

  1. Nice Discussion about society with Islam.
    This Ramadan has come to us Ramadan Speacial. Here you will find everything necessary for Ramadan.
    Ramadan Speacial
    Islamic Life
    Home page

    ReplyDelete

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...