ইয়াহিয়া খানঃ
২৪শে মার্চ, ১৯৬৯ সালে আইয়ূব খানের গণঅভ্যুথানের পদত্যাগ করলে ২৫ শে মার্চ, ১৯৬৯ সালে ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা লাভ করেন।
League framework Order:
২৮ শে মার্চ, ১৯৭০ সালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আইনগত কাঠামোর মাধ্যমে নির্বাচন দেওয়ার ঘোষণা দেন এর ফলে ৭ ডিসেম্বর, ১৯৭০ সালে জাতীয় পরিষদ নির্বাচন এবং ১৭ ই ডিসেম্বর, ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন হয়।
জাতীয় পরিষদের নির্বাচনের ফলাফলঃ
জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৩০০ টি আসন বন্টন করা হয় যার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ছিল ১৬২ টি আসন এবং পশ্চিম পাকিস্তানে ছিল ১৩৮ টি আসন। সংরক্ষিত মহিলা আসন ছিল ১৩ টি যার ৭ টি পূর্ব পাকিস্তানে এবং ৬ টি পশ্চিম পাকিস্তানে। আওয়ামীলীগ ৩০০ টি আসনের মধ্যে ১৬২ টি আসন লাভ করে এবং সংরক্ষিত আসন ৭ টি লাভ করে। আওয়ামীলীগ মোট ১৬৯ আসনে জয়লাভ করে।
১৩ ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া বললেন, আগামী ৩রা মার্চ অধিবেশন বসবে।
১লা মার্চ, ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া বলেন অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ।
২রা মার্চ ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে আ.স.ম. আব্দুর রবের নেতৃত্বে প্রথম পতাকা উত্তোলন করা হয়।
অপারেশন সার্চ লাইটঃ
২৫ শে মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষক ও ৩০০ জন ছাত্র কর্মচারী নিহত হয়। পাকিস্তান বাহিনী কর্তৃক বাঙ্গালী জাতির উপর পরিচালিত সাংকেতিক নাম ছিল অপারেশন সার্চ লাইট। এর উদ্দ্যেশ্য ছিল বাঙ্গালী সংগঠিত অস্ত্রধারী এবং সংগঠিত শক্তি ধ্বংস করা।
২৫ শে মার্চ, ১৯৭১ সালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এই অপারেশন সার্চ লাইটে স্বাক্ষর করেন। অতঃপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী রাত ১১ টায় / ১১:৩০ মিনিটে অভিযান চালায়। এই অভিযানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষক ও ৩০০ জন ছাত্র কর্মচারী নিহত হয়। এই রাতেই শুধু ঢাকা শহরে ৬০০০ নিরীহ মানুষ নিহত হয়। ২৫ শে মার্চ দিবাগত রাত ১:৩০ টায় / ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে ধানমন্ডির ৩২ নং বাড়ী থেকে শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন।
স্বাধীনতা ঘোষণাঃ
২৫ শে মার্চ, ১৯৭১ দিবাগত রাত সাড়ে বারোটা অরথাত ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে ততকালীন E.P.R (East Pakistan Rifles) বর্তমান BGB (Border Guards Bangladesh) এর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ নেতা জহুর আমহেদ চৌধুরীর (যার নামে চট্রগ্রাম স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়) নিকট একটি বাণী প্রেরণ করেন। বাণীটি ইংরেজীতে ছিল যাতে বিশ্ববাসী ম্যাসেজটি বুঝতে পারে। ম্যাসেজটি ছিলঃ
“This may be the Last message from today Bangladesh is Independent”
“This may be the Last message from today Bangladesh is Independent”
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রঃ
২৬ শে মার্চ, ১৯৭১ সালে বেলা ২টা ১০ মিনিটে সময় চৌধুরীবেলালের নেতৃত্বে চট্রগ্রাম কালুরঘাটে বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ছিল “স্বাধীনবাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র” পরে তা নামকরণ করা হয় “স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র” নামে।
২৬ শে মার্চ, ১৯৭১ সালে বেলা ২টা ১০ মিনিটের সময় মোহাম্মদ হান্নান (ততকালীন চট্রগ্রাম জেলার আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন) বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। হান্নান সাহেবও ইংরেজীতে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ঐদিন সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটের সময় আবুল কাশেম সন্দ্বীপ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। পরের দিন ২৭ শে মার্চ, ১৯৭১ সালে মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। শুধু ২৭ শে মার্চ নয়, মেজর জিয়াউর রহমান ২৭ শে মার্চ সহ ২৮ শে মার্চ ও ২৯ শে মার্চ মোট ৩ দিন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
মুক্তিফৌজ গঠন / মুক্তিবাহিনী গঠনঃ
৩ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে ততকালীন সিলেট জেলা (তালিয়াপাড়া) চা বাগানে (বর্তমানের হবিগঞ্জের মাধবপুরে) বঙ্গবীর M. A. G. Osmani এর নেতৃত্বে ৫০০০ সামরিক ও ৮০০০ বেসামরিক মোট ১৩০০০ সদস্য নিয়ে মুক্তিফৌজ গঠিত হয়। বাংলাদেশ ১ম সরকার গঠনের পর ১১ ই এপ্রিল, ১৯৭১ সালে মুক্তিফৌজ নাম পরিবর্তন করে মুক্তিবাহিনী নামকরণ করা হয়।
সরকার গঠনঃ
১০ই এপ্রিল, ১৯৭১ সালে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করা হয়। এইসরকারকে প্রবাসী সরকার বলা হয়। প্রবাসী সরকারের সদর দফতর ছিল কলকাতার ৮নং থিয়েটার রোডে। এই সরকার ছিল রাস্ট্রপতি শাসিত সরকার। এই সরকারের মোট সদস্য সংখ্য্যা ছিল ৬ জন।
৬ জন সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশের ১ম সরকারঃ
১) রাষ্ট্রপতি ও সর্বাধিনায়কঃ শেখ মুজিবুর রহমান
২) অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতিঃ সৈয়দ নজরুল ইসলাম
৩) প্রধানমন্ত্রীঃ তাজউদ্দিন আহমদ
৪) পররাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীঃ খন্দকার মোশতাক আহমেদ
৫) অর্থ, বাণিজ্য ও শিক্ষামন্ত্রীঃ মনসুর আলী
৬) স্বরাষ্ট্র, কৃষি, ত্রাণ ও পুর্নবাসনমন্ত্রীঃ এ, এইচ, এম কামরুজ্জামান
শপথ গ্রহণঃ
১৯ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে তৎকালীন কুষ্টিয়ায় জেলার মেহেরপুর মহকুমা বৈদ্যনাথতলা ইউনিয়নে ভবের পাড়াগ্রামে (বর্তমান মুজিবনগর) বাংলাদেশের ১ম সরকারের শপথ অনুষ্ঠিত হয়। অধ্যাপক ইউসুফ আলী, উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে শপথ করান অতঃপর সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী সহ অন্য সকল সদস্যদেরকে শপথ পাঠ করান। আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার গঠন হয় ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল।
মুক্তিযুদ্ধ্বের কমান্ডঃ
মুক্তিযুদ্ধ্বের কমান্ড ছিল পর্যায়ক্রমে (উপর থেকে নিচে)
১) সর্বাধিনায়ক শেখ মুজিবুর রহমান
২) সহ সর্বাধিনায়ক সৈয়দ নজরুল ইসলাম
৩) প্রতিরক্ষামন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ
৪) প্রধান সেনাপতি আতাউল গণি ওসমানী
৫) (ক) চিফ অব স্টাফ (কর্ণেল আব্দুর রব) – জেড ফোর্স, এস ফোর্স এবং কে ফোর্স; ১-৬ নং সেক্টর
(খ) ডেপুটি চিফ অব স্টাফ (এয়ারভাইস মারশাল একে খন্দকার)- সেক্টর বাহিনী ৭-১১ নম্বর সেক্টর
৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধ্বার পদবীঃ
সিপাহী – হামিদুর রহমান, মোস্তফা কামাল ; ল্যান্স নায়েক – মুন্সি আব্দুর রব, নূর মোহাম্মদ;
ক্যাপ্টেন – জাহাঙ্গীর; স্কোয়াড্রন ইঞ্জিনিয়ার – রুহুল আমিন এবং ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট- মতিউর রহমান
মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর সমূহের বর্ণনাঃ
সেক্টর নং
|
সেক্টর / এলাকা
|
দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার
|
সেক্টর ১
|
চট্রগ্রাম, পার্বত্য চট্রগ্রাম এবং ফেনী নদী পর্যন্ত
|
মেজর জিয়াউর রহমান (এপ্রিল-জুন)
মেজর রফিকুল ইসলাম (জুন-ডিসেম্বর)
|
সেক্টর ২
|
নোয়াখালী, কুমিল্লা, আখাউড়া, ভৈরব এবং ঢাকা ও ফরিদপুর জেলার অংশবিশেষ
|
মেজর খালেদ মোশাররফ (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর)
মেজর হায়দার (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর)
|
সেক্টর ৩
|
আখাউরা ভৈরব রেললাইন হতে পূর্বদিকে কুমিল্লা জেলা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও ঢাকা জেলার অংশবিশেষ।
|
মেজর শফিউল্লাহ (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর)
মেজর কাজী নুরুজ্জামান (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর)
|
সেক্টর ৪
|
সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল, খোয়াই, শায়েস্তাগঞ্জ রেললাইন থেকে পূর্ব ও উত্তরদিকে সিলেট ডাইউকি সড়ক।
|
মেজর সি আর দত্ত
|
সেক্টর ৫
|
সিলেট জেলার পশ্চিম এলাকা এবং সিলেটের ডাইউকি সড়ক থেকে সুনামগঞ্জ এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের সীমান্ত অঞ্চল
|
মেজর মীর শওকত আলী
|
সেক্টর ৬
|
ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী অঞ্চল ব্যতীত সমগ্র রংপুর জেলা ও ঠাগুরগাঁও
|
উইং কমান্ডার বাশার
|
সেক্টর ৭
|
সমগ্র রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও ছাড়া দিনাজপুরের অবশিষ্ট অংশ এবং ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী এলাকা ব্যতীত সমগ্র পাবনা ও বগুড়া জেলা
|
মেজর কাজী নুরুজ্জামান
|
সেক্টর ৮
|
সমগ্র কুষ্টিয়া ও যশোর জেলা, ফরিদপুরের অংশবিশেষ এবং দৌলতপুর সাতক্ষিরা সড়ক পর্যন্ত খুলনা জেলার এলাকা
|
মেজর আবু ওসমান (অক্টোবর পর্যন্ত)
মেজর এম এ মনসুর (আগস্ট – ডিসেম্বর)
|
সেক্টর ৯
|
সাতক্ষিরা দৌলতপুর সড়ক সহ খুলনা জেলার সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল এবং বৃহত্তর বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা
|
মেজর আব্দুল জলিল (এপ্রিল-ডিসেম্বর)
এম. এ. মঞ্জুর (অতিরিক্ত দায়িত্ব)
|
সেক্টর ১০
|
অভ্যন্তরীণ নৌপথ ও সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল, চট্রগ্রাম ও চালনা
|
মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিং প্রাপ্ত নৌ-কমান্ডার
|
সেক্টর ১১
|
কিশোরগঞ্জ ব্যতীত সমগ্র ময়মনসিংহ অঞ্চল
|
মেজর আবু তাহের (এপ্রিল-নভেম্বর)
ফ্লাইট লেঃ এম হামিদুল্লাহ (নভেম্বর-ডিসেম্বর)
|
** সংক্ষেপে মনে রাখার জন্য
১) এজির – এক নম্বর সেক্টর, জিয়াউর রহমান, রফিকুল ইসলাম
২) মটুখাহা – দুইনম্বর, খালেদ মোশাররফ, হায়দার
৩) সতিনু – সফিউল্লাহ, তিন নম্বর সেক্টর, নুরুজ্জামান
৪) সিচা – সি আর দত্ত, চার নম্বর সেক্টর
৫) পাঁচশত – পাঁচ নম্বর সেক্টর, মেজর শওকত
৬) বাছ – উইং কমান্ডার বাশার, ছয় নম্বর সেক্টর
৭) সাতানু – সাত নম্বর সেক্টর, কাজী নুরুজ্জামান
৮) ও-আটমন – ওসমান, আটনম্বর সেক্টর, মনসুর
৯) জনম – জলিল, নয় নম্বর সেক্টর, মঞ্জুর
১০) H2O – নৌবাহিনী দ্বারা চালিত, ১০ নম্বর সেক্টর
১১) এগারহাতা – এগার নম্বর সেক্টর, হামিদুল্লাহ, কর্ণেল তাহের
Operation Jackpot মুক্তিযুদ্ধের সময় গুতুত্বপূর্ণ অপারেশন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বলায় হয় জনযুদ্ধ্ব কারণ জনগণ এই যুদ্ধকে সমর্থন করেছে,
১৪ই আগষ্ট, ১৯৭১ সালে মংলা পোর্ট এ ৫০ টি এবং চিটাগাং পোর্টে ১০ টি গোলাবারুদ সহ জাহাজ আসে।
৬ ই ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দেয়।
স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখার জন্য খেতাবপ্রাপ্ত মোট ৬৭৭ জন মুক্তিযোদ্ধ্বা
এদের মধ্যে ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ; বীরউত্তম ৬৯ জন; বীরবিক্রম ১৭৫ জন এবং বীর প্রতীক ৪২৬ জন।
সর্বশেষ বিরবিক্রম – ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল (মরণোত্তর)
বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত দুজন মহিলা ১) তারামন বিবি (কুড়িগ্রাম), ২) সেতারা খানম (কিশোরগঞ্জ)
খেতাব প্রাপ্ত বিদেশী মুক্তিযোদ্ধা – ডব্লিউ. এইচ. ওডারল্যান্ড (অস্ট্রেলিয়া)
Concert for Bangladesh আয়োজন করে- জর্জ হ্যারিসন (যুক্তরাষ্ট্র) ও পন্ডিত রবি সংকর (ভারত)
প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা – যশোর (৭ ই ডিসেম্বর, ১৯৭১)
No comments:
Post a Comment