Monday, 26 January 2015

প্রশ্নঃ উমাইয়া খিলাফতের বিস্তৃতি ও স্বল্প সময়ে সফলতার কারন।


উমাইয়া খিলাফত  ইসলামের প্রধান চারটি খিলাফতের মধ্যে দ্বিতীয় খিলাফত। এটি উমাইয়া রাজবংশকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে। ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান ইবন আফ্‌ফানের খিলাফত লাভের মাধ্যমে উমাইয়া পরিবার প্রথম ক্ষমতায় আসে। তবে উমাইয়া বংশের শাসন মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান কর্তৃক সূচিত হয়। তিনি দীর্ঘদ...িন সিরিয়ার গভর্নর ছিলেন। ফলে সিরিয়া উমাইয়াদের ক্ষমতার ভিত্তি হয়ে উঠে এবং দামেস্ক তাদের রাজধানী হয়। উমাইয়ারা মুসলিমদের বিজয় অভিযান অব্যাহত রাখে। ককেসাস,ট্রান্সঅক্সানিয়া, সিন্ধু, মাগরেব ও ইবেরিয়ান উপদ্বীপ (আল-আন্দালুস) জয় করে মুসলিম বিশ্বের আওতাধীন করা হয়। সীমার সর্বোচ্চে পৌছালে উমাইয়া খিলাফত মোট ৫.৭৯ মিলিয়ন বর্গ মাইল (১,৫০,০০,০০০ বর্গ কিমি.) অঞ্চল অধিকার করে রাখে। তখন পর্যন্ত বিশ্বের দেখা সাম্রাজ্যগুলোর মধ্যে এটি সর্ববৃহৎ ছিল। অস্তিত্বের সময়কালের দিক থেকে এটি ছিল পঞ্চম।
পরোক্ষ কারণ
১. মুআবিয়া(রাঃ) এর সাথে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর সুসম্পর্ক
পৃথিবীর ইতিহাসে যে সকল মনীষী তাদের স্বীয় যোগ্যতার বলে স্মরণীয় হয়ে আছেন তাদের মধ্যে আমিরে মুয়াবিয়া হলেন অন্যতম। যিনি শৌর্য, বীর্য, বীরত্ব, সাহসিকতার এক অনন্য দৃষ্টানত স্থাপন করেছিলেন। এ সকল অনুপম চরিত্রের সন্নিবেশের সমাবেশ ছিল তার জীবনে। কুরাইশ গোত্রের উমাইয়া গোত্রে ৬০৬ খৃস্টাব্দে মুয়াবিয়া জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন উমাইয়া দলপতি এবং পবিত্র কাবার রক্ষক ইসলামের চরম দুশমন আবু সুফিয়ান। মাতা হৃদয়হীনা হিন্দা । ৬৩০ খৃস্টাব্দে মক্কা বিজয়ের পর তার পিতা আবু সুফিয়ানের সাথে ইসলাম দর্মে দীক্ষিত হন এবং ইসলামের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেন আজীবন। এ সমস্ত অসাধারণ গুণের জন্য রাসূল (সাঃ) তাকে বেশি ভালবাসতেন। যার ফলে মুয়াবিয়া ওহী লিখবার জন্য রাসূলের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। পরে তার ভগ্নি উম্মে হাবিবার সাথে মহানবীর বিবাহ সম্পাদিত হলে উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা আরো বেড়ে যায়।রাসূলুল্লাহ(সাঃ) তাঁকে একবার বলেছিলেন, তুমি রাজ্যলাভ করলে জনসাধারণের মঙ্গল সাধন করিও।
 অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর আপন শ্যালক হওয়ার সুবাদে মুআবিয়া(রাঃ) ও তাঁর পরিবারবর্গ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছিল যার ফলে মুআবিয়া(রাঃ) এর জন্য খিলাফত গ্রহণ করার পথ আরও সহজ হয়ে যাতে থাকে।
২. ইয়াজিদ ইবন আবী সুফিয়ান(রাঃ) ও মুআবিয়া(রাঃ) এর গভর্নর পদ লাভ
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমরের খিলাফতকালে সিরিয়ার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন।এর আগে তাঁর ভ্রাতা ইয়াজীদ(রাঃ) সেখানকার সেই থেকে তার রাজনৈতিক জীবনের পথে হাঁটা শুরু হয়। কর্মদক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও সাংগঠনিক ক্ষমতার বলে সমগ্র সিরিয়ার সুশাসন কায়েম করতে সক্ষম হন ও বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন। নির্ভীকতা ও সামরিক দক্ষতার সাথে সিরিয়াকে বায়জানটাইন আক্রমন হতে রক্ষা করতে সমর্থ হন। খলিফা ওসমানের সময় সর্বপ্রথম একটি ক্ষুদ্র নৌবাহিনী গঠনে করে দীপাঞ্চলে মুসলিম প্রাধান্য বিস্তার করার চেষ্টা করেন। তারই সুযোগ্য নেতৃত্বে সাইপ্রাস ও রোডস দ্বীপ দখল করেন।আর তিনি যখন প্রথমে খলীফা হন, তিনি সিরিয়াবাসীদের সমর্থনের দরুন রাজধানী দামেশকে নিয়ে আসেন।
৩. উসমান(রাঃ) এর খিলাফত লাভ
হযরত উসমান(রাঃ) যখন উমর(রাঃ) এর শাহাদাতের পরে ৬৪৪ খৃষ্টাব্দে খিলাফত লাভ করলেন তখন মদীনার খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। আর তখনই কেউ কেউ উসমান(রাঃ) এর অজান্তে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে থাকে যার ফলে এই বিষয়াবলী উমাইয়াদের খিলাফত প্রতিষ্ঠায় সদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম করে তোলে। উসমান(রাঃ) এর খিলাফতকালে ওয়ালিদ ইবন উতবা কূফার, আবদুল্লাহ ইবন আমীর(রাঃ) মিসরের এবং সাদ ইবন আস(রাঃ)কে বসরার শাসক হিসেবে নিযুক্ত করা হয় এবং মুআবিয়া(রাঃ) স্বপদে সিরিয়াতে বহাল থাকেন যা কিনা উমাইয়াদের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল।
৪. উসমান(রাঃ) এর হত্যাযজ্ঞ
হযরত উসমান(রাঃ) বিদ্রোহীদের হাতে ৬৫৬ খৃষ্টাব্দে নিহত হন। এরপরে থেকে মুসলিম বিশ্বে এক নতুন ধরনের অসন্তোষের অবস্থা সৃষ্টি হয়। যার ফলে তখন থেকেই তৎকালীন খলীফা তথা আলী(রাঃ) ও তাঁর পরিবারবর্গের সাথে বিভিন্ন ধরনের দমন নীপিড়ণমূলক কার্যক্রম এর মাধ্যমে শুরু করে।হযরত ওসমানের হত্যাজনিত গোলযোগ সময় হতে হযরত আলী ও মুয়াবিয়ার মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। সিফফিনের যুদ্ব সঙ্ঘটিত হয়। আর এতে করে মুআবিয়া(রাঃ) এর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা পায় আর আলী(রাঃ) এর দলের ভিতর নতুন করে খারিজী সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটে আর পরে এই খারিজীরাই হযরত আলী(রাঃ)কে হত্যা করে।এরপরে তাঁর  পুত্র ইমাম হাসান(রাঃ) খলীফা  হলে পরে মুআবিয়া(রাঃ) তাঁকে পরাজিত করে সন্ধিচুক্তিতে স্বাক্ষর করে মুআবিয়া খিলাফত লাভ করেন এবং সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে উমাইয়া বংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রত্যক্ষ কারণ
১. মুআবিয়া(রাঃ) এর দক্ষতা
মুআবিয়াকে অভিজ্ঞ শাসন, সুনিপুণ কূটনীতিবিদ, নির্ভীক যোদ্ধা হিসেবে উপযুক্ত মর্যাদা দিতে হবে। তিনি ক্ষমতা লাভ করে কূফা থেকে দামেস্ককে নব-প্রতিষ্ঠিত ইসলামী সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় রাজধানীতে রূপান্তরিত করেন। যা করা অনেকের জন্য ছিল অসম্ভব তা তিনি করে দেখিয়েছেন স্বীয় যোগ্যতা আর কূটনীতিক ক্ষমতাবলে। তবে একটা কথা থেকে যায় যে, তার আশেপাশের লোকদের থেকে তিনি যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছিলেন এবং তাদের থেকে কাজও আদায় করতে জানতেন। সে দৃষ্টিকোণ থেকে আমির মুআবিয়া ছিলেন ভাগ্যবান।
২. আলী(রাঃ) এর প্রশাসনিক দূর্বলতা
মুআবিয়া(রাঃ) দীর্ঘ ২০ বছর যাবত সিরিয়াতে শাসন করার পর সেখানকার লোকদের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হন। তাই তাদের সহায়তায় মুআবিয়া(রাঃ) একটি শক্তিশালী দল গঠন করতে সক্ষম হন। অন্যদিকে আলী(রাঃ) তখন রাজধানী কূফাতে পরিবর্তন করে নিয়ে আসলেও সেখানকার লোকদের কোন ধরনের সমর্থন তিনি আদায় করতে সক্ষম হন নাই। না আলী(রাঃ) এই ধরনের সমর্থন পেয়েছিলেন না তাঁর পুত্র কারবালার যুদ্বের সময় তাদের সমর্থন পেয়েছিলেন। আর এই কারণেই উমাইয়ারা সহজেই সাফল্য লাভ করতে সক্ষম হয়।
৩. আমর ইবনুল আস(রাঃ) এর দক্ষতা
একথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, আমর ইবনুল আসের কূটনৈতিক তৎপরতা ব্যতীত মুআবিয়া কিছুতেই উমাইয়া রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন না। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আমর সম্বন্ধ মূইর বলেন, ‘‘খিলাফতের পরিবর্তনের আমরের চেয়ে অপর কেহই অধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেননি। যুদ্ধক্ষেত্রে সাহসী, পরামর্শে ধূর্ত, কথায় ও কাজে রুক্ষ, নীতিজ্ঞানশূণ্য আমরের বুদ্ধি বলেই মুয়াবিয়া হযরত আলীর উপর বিজয়ী হন এবং পরিণামে উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠা করেন।’’
দুমাতুল জন্দল নামক স্থানে মূসা ইবন আশআরী(রাঃ) এর সাথে যে কূটনৈতিক চাল খেলেছিলেন আর এর পরিপ্রেক্ষিতেই উমাইয়াদের ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত হয়ে উঠে।
৪. যিয়াদ ইবন সুমাইয়া এর সমর্থন
মুআবিয়া(রাঃ) এর শাসনকালে জিয়াদ ইবন সুমাইয়া অশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। জিয়াদ ছিলেন মুয়াবিয়ার পিতা আবু সুফিয়ানের জারজ সন্তান। তার মাতা ছিলেন তায়েফের একজন ভ্রষ্টা রমনী যার নাম ছিল সুমাইয়া নাম্নী ও আবু সুফিয়ানের উপপত্নী। কিন্তু আশ্চযের বিষয় হল, জন্ম নীচ পরিবেশ হলেও দক্ষতা ও অধ্যবসায়ের গুণে তিনি মুসলিম ইতিহাসের একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। ‘জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভাল'। এই প্রবাদের সত্যতা আমরা জিয়াদ ইবন আবিহর মধ্যে দেখতে পাই। তিনি ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলীর খিলাফতকালে বসরা ও ইসতাখরে শাসনকর্তার মর্যাদালাভ করেন। বুদ্ধিমত্তা, বাগ্নিতা ও কর্ম প্রতিভার জন্য সে যুগে একজন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদরূপে পরিচিত ছিলেন। মুগারীর মৃত্যুর পর মুয়াবিয়া জিয়াদকে একইসঙ্গে বসরা ও কূফার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।
৫. জনগণের সহায়তা
চারপাশের লোকদের সহযোগিতা না পেলে মুয়াবিয়ার একক প্রচেষ্টায় প্রাথমিক পর্যায়ে উমাইয়াদর সামরিক ও রাজনৈতিক সাফল্য অর্জন কঠিনতর ছিল। ঐতিহাসিক হিট্টির মতে, ‘‘খলিফা মুয়াবিয়ার সাফল্যের মূলে তার চারিপার্শ্বের অনুগামীবর্গের অবদানও কম ছিল না, বিশেষ করে মিসরের শাসনকর্তা আমর ইবনুল আস; বিক্ষুব্ধ কূফার প্রশাসক আল মুগীরা আল সাবাহ। বিদ্রোহী বসরার শাসনকর্তা জিয়াদ ইবন আবিহ। এই তিনজন তাদের নেতা মুয়াবিয়াসহ আরব মুসলমানদের চারজন রাজনৈতিক মেধাসম্পন্ন ব্যক্তি বলে পরিচিত।’’
মুয়াবিয়া(রাঃ) তাই প্রথমে সিরিয়া, ক্রমান্বয়ে মিসর, কুফা ও বসরার লোকদের সমর্থন আদায়ে সফল হন এবং কালক্রমে সমগ্র মুসলিম জাহানের খলীফা হিসেবে আবির্ভূত হন।
৫. সাহাবাগণের নিষ্কৃয়তা
আলী(রাঃ) এর সাথে যখন মুআবিয়া(রাঃ) এর বিরোধ সৃষ্টি হয় তখন আলী(রাঃ) এর পাশে অনেক বরণ্য সাহাবাগণ এসে দাঁড়ান নাই। সাদ ইবন আবী ওয়াক্কাস(রাঃ),আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস(রাঃ), আবদুল্লাহ ইবন উমর(রাঃ), আবদুর রহমান ইবন আবী বকর(রাঃ), সাঈদ ইবন যুবায়র(রাঃ),উসামা ইবন যায়দ(রাঃ) সহ অনেক সাহাবাগণ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে যান। এমন কি আলী(রাঃ) এর আপন ভাই তাঁকে প্রত্যক্ষভাবে মদদ প্রদান করেন নাই। বরং এদের মধ্যে অনেকে আলী(রাঃ) এর বিরোধিতা করেছিলেন। আলী(রাঃ) এর খিলাফত গ্রহণের সময়ে তালহা ইবন উবায়দুল্লাহ(রাঃ), যুবায়র ইবন আওয়াম(রাঃ) এবং উম্মুল মুমিনীন আয়শা সিদ্দীকা(রাঃ) সরাসরি আলী(রাঃ) এর বিরোধীতা করেছিলেন। যদি প্রারম্ভে তাঁরা আলী(রাঃ) এর সাথে থাকতেন তাহলে উমাইয়ারা এত সহজে ক্ষমতা দখল করতে পারত না।
৬. অমুসলিগণের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন
অমুসলিমদের মধ্যে ছিল খ্রিষ্টান, ইহুদি, জরস্ট্রিয়ান ও পৌত্তলিক বার্বার যাদের জিম্মি বলা হত। মুসলিম শাসনের প্রতি অনুগত থাকার শর্তে তারা তাদের সামাজিক অধিকার ভোগ করত। তাদের নিজস্ব আদালত ছিল এবং সাম্রাজ্যজুড়ে ধর্মীয় স্বাধীনতা বহাল ছিল। সরকারি দপ্তরে সর্বোচ্চ পদ না পীও অনেক অমুসলিম প্রশাসনিক পদে আসীন ছিল। খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের মধ্যে এসময় অনেক বড় মাপের ধর্মতাত্ত্বিকের আবির্ভাব হয়। কিন্তু পরবর্তীতে অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করে ফলে অমুসলিমদের মধ্যে চিন্তাবিদের সংখ্যা কমে যায়।
অমুসলিম জনগণ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত এবং তাদের বিচারিক কার্যক্রম তাদের নিজস্ব আইন ও ধর্মীয় প্রধান বা নিজেদের নিযুক্ত ব্যক্তি দ্বারা চালিত হত।[৬] তাদের কেন্দ্রীয় সরকারকে জিজিয়া কর দিতে হত। মুহাম্মদ (সা) এর জীবদ্দশায় বলেন যে প্রত্যের ধর্মীয় সম্প্রদায় নিজেদের ধর্মপালন করবে ও নিজেদের শাসন করতে পারবে। এ নীতি পরবর্তীতেও বহাল থাকে। উমর কর্তৃক চালু হওয়া মুসলিম ও অমুসলিমদের জন্য কল্যাণ রাষ্ট্র ব্যবস্থা চলতে থাকে। মুয়াবিয়ার মা মায়সুম (ইয়াজিদের মা) ছিলেন একজন খ্রিষ্টান। রাষ্ট্রে মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের মধ্যে সম্পর্ক ভাল ছিল। উমাইয়ারা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সাথে ধারাবাহিক যুদ্ধে জড়িত ছিল। গুরুত্বপূর্ণ পদে খ্রিষ্টানদের বসানো যাদের মধ্যে কারো কারো পরিবার বাইজেন্টাইন সরকারে কাজ করেছিল। খ্রিষ্টানদের নিয়োগ অধিকৃত অঞ্চলে বিশেষত সিরিয়ার বিশাল খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীর প্রতি ধর্মীয় সহিষ্ণুতার নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এ নীতি জনগণের সমর্থন আদায়ে সক্ষম হয় এবং সিরিয়াকে ক্ষমতার কেন্দ্র হিসেবে স্থিতিশীল করে তোলে
৭. বিদ্রোহ দমন
মুয়াবিয়ার শাসনকালকে আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও বাহ্যিক বিস্তৃতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সাম্রাজ্যের ভেতরে শুধু একটি বিদ্রোহের রেকর্ড আছে। হুজর ইবনে আদি কুফ্যার এই বিদ্রোহ করেন। হুজর ইবনে আদি নিজের আলির বংশধরদের খিলাফতের দাবিদার বলে সমর্থন জানান। কিন্তু ইরাকের গভর্নর জিয়াদ ইবনে আবু সুফিয়ান তার আন্দোলন সহজেই দমন করেন।
খারিজী সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটেছিল আলী(রাঃ) এর খিলাফতকালে। তখন তাদের বিস্তৃতি সারা মুসলিম জাহানে ছড়িয়ে পড়েছিল। নাহরানের যুদ্বে আলী(রাঃ) এর বাহিনীর কাছে তারা পরাস্ত হলেও আলী(রাঃ) এর শাহাদাতের পরে তারা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। মুআবিয়া(রাঃ) অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এইসকল বিদ্রোহসমূহ দমন করতে সক্ষম হন। যার ফলে খারিজীরা একেবারে পরাস্ত হয়ে পড়ে আর তাদের আশ্রয়স্থল হয় মরুভূমি।
৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার মধ্য দিয়ে উমাইয়াদের ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত হয়। মারওয়ানের পর তার পুত্র আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান (শাসনকাল ৬৮৫-৭০৫) খলিফা হন। তিনি খিলাফতের উপর উমাইয়াদের কর্তৃত্ব সংহত করেন। তার শাসনের প্রথমদিকে কুফাভিত্তিক আল-মুখতারের বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। আল-মুখতার আলির আরেক পুত্র মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়াকে খলিফা হিসেবে দেখতে চাইতেন। তবে বিদ্রোহের সাথে ইবনুল হানাফিয়ার কোনো সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায় না। আল-মুখতারের সেনারা ৬৮৬তে উমাইয়াদের সাথে ও ৬৮৭তে আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়েরের সেনাদের সাথে লড়াই করে এবং পরাজিত হয়। ফলে তার বিদ্রোহের সমাপ্তি ঘটে। ৬৯১ খ্রিষ্টাব্দে উমাইয়া সেনারা পুনরায় ইরাক অধিকার করে ও একই বাহিনী মক্কা দখল করে। আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়ের হামলায় নিহত হন।
৮. দক্ষ সেনাবাহিনী
মুয়াবিয়া(রাঃ) তাঁর খিলাফতকালে অত্যন্ত দক্ষ একটি সামরিক বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। তিনি পাদতিক বাহিনীর পাশাপাশি একটি আদর্শ ও দক্ষ নৌবাহিনী গড়ে তুলতে সক্ষম হন। তিনি এমনিভাবে তাঁর খিলাফতকালে রাজ্য বিস্তারে বিশেষ ভূমিকা পালন রেখেছিলেন। মুআবিয়া(রাঃ) এর খিলাফতকালে আফ্রিকার বেশকিছু অঞ্চল মুসলিমগণের অন্তর্ভূক্ত হওয়া শুরু করে। অতঃপর তা ক্রমান্বয়ে পূর্বাঞ্চল তথা মধ্য এশিয়ার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এছাড়া ভূমধ্যসাগরের বেশ কয়েকটি দ্বীপ মুসলিমগণের আওতাভুক্ত হয়। তাছাড়া পরবর্তী খলীফা ওয়ালিদের সময়ে মুসলিমগণ ভারতীয় উপমহাদেশ, স্পেনসহ অনেক রাজ্য দখল করতে সক্ষম হন যা কিনা উমাইয়া সেনাদের একটি শক্তিশালী বাহিনী করতে বিশেষভাবে সহায়তা করেছিল। মুয়াবিয়ার রাজ্য বিজয় সম্প©র্র্ক হিট্টি বলেন, ‘‘মুয়াবিয়ার শাসনকালে খিলাফত কেবল সুসংহতই হয়নি; বরং আঞ্চলিক বিস্তৃতিও সাধিত হয়েছিল।’’
৯. হিমারীয় ও মুদারীয়দের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন 
আরবদেশে বহু দিন যাবৎ হিমারীয় ও মুদারীয়দের মাঝে দ্বন্দ্ব-সংঘাত বিরাজমান ছিল। রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর সময়কাল হতে তাদের ভিতর ঐক্য পরিলক্ষিত হতে থাকে। মুআবিয়া(রাঃ) মুদারীয়দের উপর বেশী নির্ভরশীল হওয়ার পরেও তিনি তাঁর স্বার্থের খাতিরে উভয়ের সাথে সমঝোতা স্থাপন করতে সক্ষম হন। তিনি হিমারীয়দের উপর কোন ধরনের নির্যাতনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নাই। মূলত উসমান(রাঃ) এর খিলাফতকালের শেষের দিকে শুরু করে আলী(রাঃ) এর খিলাফতকালে যে অরাজকতার সৃষ্টি হয় তা মুআবিয়া(রাঃ) অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করতে সক্ষম হন।
১১. রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর ভবিষ্যৎ বাণী
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) পূর্বের একটি ব্যাপারে ভবিষৎবাণী করে দিয়ে যান যে, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর মৃত্যুর ত্রিশ বছর পরে রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হবে। রাসূলে পাক (সাঃ) বলেন, আমার মৃত্যুর পরে ত্রিশ বছর খিলাফত থাকবে। এরপরে প্রতিষ্ঠিত হবে রাজবংশ।
তাই আল্লাহর রাসূলের কথার কখনও কোন ধরনের পরিবর্তন সাধন হয় না। তাই এই দৃষ্টিভঙ্গিতে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর ওফাতের প্রায় ৩০ বছর পরে রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
১২. কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা
উমাইয়াদের ক্ষমতাকে সুসংহত করতে সর্বাধিক যে বিষয়টি কার্যকর করেছিল তা হল কারবালার ঘটনা। ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়ের মক্কার উদ্দেশ্যে মদিনা ত্যাগ করেন। ইয়াজিদের বিপক্ষে হুসাইনের অবস্থানের কথা শুনে কুফার জনগণ হুসাইনের কাছে তাদের সমর্থন নেয়ার জন্য আবেদন জানায়। হুসাইন তার চাচাত ভাই মুসলিম বিন আকিলকে এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পাঠান। এ খবর ইয়াজিদের কাছে পৌছলে তিনি বসরার শাসক উবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদকে কুফার জনগণকে হুসাইনের নেতৃত্বে সমবেত হওয়া থেকে নিবৃত্ত করার দায়িত্ব দেন। উবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ মুসলিম বিন আকিলের পাশে থাকে জনতাকে প্রতিহত করতে সক্ষম এবং তাকে গ্রেপ্তার করেন। উবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদের উপর হুসাইনকে প্রতিহত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে শুনে মুসলিম ইবন আকিল তাকে অনুরোধ করেন যাতে হুসাইনকে কুফায় না আসার ব্যাপারে জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়। তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং উবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ মুসলিম বিন আকিলকে হত্যা করেন। আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়ের আমৃত্যু মক্কায় থেকে যান। হুসাইন সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি তার পরিবারসহ কুফায় যাবেন। সমর্থনের অভাবের বিষয়ে তার এসময় জানা ছিল না। হুসাইন ও তার পরিবারকে ইয়াজিদের সেনাবাহিনী রুখে দেয়। এসময় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন আমরু বিন সাদ, শামার বিন জিয়ালজোশান ও হুসাইন বিন তামিম। তারা হুসাইন ও তার পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সাথে লড়াই করে হত্যা করে। হুসাইনের দলে ২০০ জন মানুষ ছিল যাদের অধিকাংশ ছিল নারী। এদের মধ্যে হুসাইনের বোন, স্ত্রী, মেয়ে ও তাদের সন্তানরা ছিল। নারী ও শিশুদেরকে যুদ্ধবন্ধী হিসেবে দামেস্কে ইয়াজিদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। হুসাইনের মৃত্যু ও তার পরিবারের বন্দী হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে জনগণের সমর্থন তার দিক থেকে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের বন্দী করে রাখা হয়। এরপর তাদের মদিনা ফিরে যেতে দেয়া হয়। বেঁচে যাওয়া একমাত্র পুরুষ সদস্য ছিলেন আলি বিন হুসাইন। অসুস্থতার কারণে কাফেলা আক্রান্ত হওয়ার সময় তিনি লড়াই করতে পারেননি।
আর এমনিভাবে রাজবংশ প্রতিষ্ঠায় উমাইয়ারা তাদের ক্ষমতাকে অতি অল্প সময়ের মধ্যে পাকাপোক্ত করতে সক্ষম হয়।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় যে, উমাইয়া নানা ধরনের চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে তাদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে সক্ষম হয়। উমাইয়াগণ তাদের রাজ্য পরিচালনা যেভাবে করেছে সেই ব্যাপারে ঐতিহাসিকগণ বিভিন্ন ধরনের মতামত ব্যক্ত করেছেন। কেউ কেউ তাদের সম্পূর্ণ অনৈসলামিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে আবার কারও দৃষ্টিভঙ্গিতে তারা জগৎবিখ্যাত শাসক। তবে যেধরনের মন্তব্য তাদের ব্যাপারে করা হোক না কেন বেশ কিছু স্বর্ণালী ইতিহাস তাদের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে।

সামাজিক জীবনে ইসলাম


আশেপাশের সকল পরিবেশ নিয়ে সমাজ গঠিত হয়েছে। একটি সমাজ ছাড়া মানুষ চলতে পারে না।এই সমাজ জীবনের প্রতি ইসলাম অত্যাধিক গুরত্বারোপ করেছে। সমাজের কথা আল কুরআনে বলা হয়েছে যা হলঃ
হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের... দুজন থেকে অগণিত পুরুষ নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচঞ্ঝা করে থাক এবং আত্নীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন।   [নিসাঃ১]
সকল মানুষ একই জাতি সত্তার অন্তর্ভুক্ত ছিল। [বাকারাঃ২১৩]
তারা সকলেই তোমাদের ধর্মের; একই ধর্মে তো বিশ্বাসী সবাই এবং আমিই তোমাদের পালনকর্তা, অতএব আমার বন্দেগী কর[আম্বিয়াঃ৯২]
হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও।  [হুজুরাতঃ১৩]
মুসলিমগণ পরস্পর ভাই ভাই। [হুজুরাতঃ৯]
অর্থাৎ,উপরোক্ত আলোচনা হতে এই বিষয়টি প্রতীমান হয় যে, পৃথিবীর সকল আদি মানুষ এক।তারা সকল আদম(আঃ) ও হাওয়া(আঃ) এর সন্তান। পরবর্তীতে আল্লাহ তাদের বিভন্ন গোত্র ও পরিবারে বিভক্ত করেছেন। সকল মানবজাতি এক।তাদের মধ্যকার কোন পার্থক্য নেই। তারা সকলে ভাই ভাই।
এই সমাজের সকল স্তরের মানুষের সাথে আল্লাহ পাক ইনসাফপূর্ণ আচরণ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন।আল্লাহ বলেন,
তোমরা আল্লাহর উপাসনা করবে, তাঁর সাথে কদাচ অন্যকে অংশীদার করবে না, এবং পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন-অসহায়, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূরবর্তী প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী এবং তোমাদের অধীনস্থদের সাথে সুন্দর-কল্যাণকর (এহসান) আচরণ করবে। নিশ্চই আল্লাহ আত্মম্ভরী দম্ভপ্রকাশকারীদের ভালবাসেন না। (কোরান নিসা:৩৬)
পিতা-মাতার সাথে সদয় ব্যবহার করো স্বীয় সন্তানদেরকে দারিদ্রেø কারণে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে তাদেরকে আহার দেই, নির্লজ্জতার কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য, যাকে হত্যা করা আল্লাহ হারাম করেছেন, তাকে হত্যা করো না; কিন্তু ন্যায়ভাবে। [আনআমঃ১৫১]
হুজুরাত হল সামাজিক আদবের জন্য আর নূর হল দণ্ডবিধির জন্য।
ইসলাম পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন,সমাজের অসহায় দুঃস্থ মানুষদের সাহায্য করতে বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছে।
আত্মীয় স্বজনদের অধিকার
মানুষ পৃথিবীতে সংসারের মায়ায় আবদ্ব।এ সংসারে মাতাপিতা,ভাইবোন,চাচা,চাচি,ফুফু,ফুপা এবং বৈবাহিক সম্পর্কের দিক দিয়ে অনেকে আত্মীয়।মাতাপিতার কর্তব্য আদায়ের পর এ সকল আত্মীয়-স্বজন আমাদের নিকট সহযোহিতা ও সদ্বব্যবহার পাওয়ার হকদার।ইসলাম আত্মীয়-স্বজনদের অধিকার আদায় করার ব্যাপারে যেভাবে তাগিদ দেয় তা নিম্নরুপঃ
ইসলামী জীবন-যাপনে আত্নীয়-স্বজনের হক যথাযথভাবে আদায় করার নির্দেশ রয়েছে।এ সম্পর্কে কুরআনে এরশাদ হয়েছে,
তুমি তোমার আত্মীয়ের অধিকার আদায় কর” [বনী ইসরাইলঃ২৬]
আত্মীয়-স্বজনকে কখনও কষ্ট দেওয়া যাবে না।তাদের জীবনব্যবস্থা সুখের হয় এজন্য ইসলাম তাদেরকে দান করার ব্যাপারে বিশেষভাবে উৎসাহ দেওয়া। নিকট আত্মীয়দের দান করার ব্যাপারে নবী করিম (সাঃ) বলেন,
নিকট আত্মীয় অর্থ দান করা হলে এক সংগে দুইটি কাজ হয়একটি হল আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা এবং দ্বিতীয়টি হল দান করা
তাই নিকট আত্মীয়দের দান না করে দূরবর্তী লোকদের দান করলে আল্লাহ তা পছন্দ করেন না।বরং নিকটাত্মীয়দের দান করা সর্বপ্রথম কর্তব্য।
আত্মীয়তার সাথে সম্পর্ক রক্ষাকারী ব্যক্তিবর্গের আয়ু আল্লাহ বৃদ্বি করেন।রাসূল(সাঃ) বলেন,
উত্তম চরিত্র, প্রতিবেশীর সাথে উত্তম আচরণকারী এবং আত্মীয়তা সম্পর্ক রক্ষাকারীর দ্বারা মানুষের আয়ু বৃদ্বি পায়
আত্মীয়-স্বজনদের সাথে কোন অবস্থাতে ঝগড়া করা যাবে না।তাদের সাথে সর্বদা সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।তাদের সাথে সম্পর্ক কোন অবস্থায় ছিন্ন করা যাবে না।তাই রাসূল(সাঃ)বলেছেন,
আত্মীয়তার সাথে সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি কখনও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না
প্রতিবেশীদের সাথে সদ্বব্যবহার
সাধারণভাবে বাড়ীর আশপাশে যারা বসবাস করে তাদেরকে প্রতিবেশী বলা হয়। তবে কখনও কখনও সফর অথবা কাজের সঙ্গীকেও প্রতিবেশী বলা হয়। প্রতিবেশীই হচ্ছে মানুষের সবচেয়ে নিকট জন যিনি তার সম্পর্কে অন্যদের তুলনায় বেশি খবরাখবর জানেন।তাই ইসলাম ধর্মে প্রতিবেশীর অত্যধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং তার অধিকারকে খুব বড় করে দেখা হয়েছে।
প্রতিবেশী কারা ? যাদের সম্পর্কে কোরআন হাদিসে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে, সেটি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে উলামাদের বিভিন্ন মতামত রয়েছে।কেউ বলেছেন: প্রতিবেশীর সীমানা হল, চতুর দিক দিয়ে চলি¬শ ঘর, কেউ বলেন: যে তোমার সাথে ফজর পড়ল সেই তোমার প্রতিবেশী, ইত্যাদি। আর এই সমস্ত কথার মনে হয় কোন গ্রহণযোগ্য প্রমাণ নেই । সর্বোত্তম এবং সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মতামত হচ্ছে ―প্রতিবেশী সে-ই, তার বাড়ির কাছাকাছি যার বাড়ি। এবং যার বাড়ির সাথে তার বাড়ি মেলানো।সীমানা নির্ধারিত হবে প্রচলিত ধারা অনুযায়ী, যে ব্যক্তি মানুষের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী প্রতিবেশী, সেই প্রতিবেশী। আর এটা এই জন্য যে, শরীয়ত যে সমস্ত নামের উলে¬খ করেছে এবং তার অর্থ নির্ধারণ করে দেয়নি, তার অর্থ জানার জন্য সঠিক প্রচলিত রীতির দিকেই প্রত্যাবর্তন করতে হয়।
তাদের শ্রেণী ও মর্যাদার বিভিন্নতার কারণেও গুরুত্বে ভিন্নতা আসবে:
১)   এক ধরনের প্রতিবেশী আছে যার অধিকার হচ্ছে তিনটি, তিনি হলেন নিকটাত্মীয়-মুসলমান প্রতিবেশী। তার অধিকার তিনটি হচ্ছে: আত্মীয়তা, ইসলাম এবং প্রতিবেশিত্ব।
(২)   আরেক প্রকার প্রতিবেশী যার অধিকার দুইটি: তিনি হলেন অনাত্মীয় মুসলিম প্রতিবেশী, তার অধিকার দু’টি হচ্ছে: প্রতিবেশিত্ব ও ইসলাম ।
(৩)   আর এক ধরনের প্রতিবেশী, যার অধিকার মাত্র একটি, তিনি হলেন অমুসলিম প্রতিবেশী, তার অধিকার শুধু প্রতিবেশিত্বের।
তার বাড়ির সামনে আবর্জনা ফেলা, তাকে বিরক্ত করা, ছেলে মেয়েদেরকে তার ঘরের জিনিস নষ্ট করতে উদ্বুদ্ধ করা বা বাধা না দেওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেন :―
যে আল্লাহর প্রতি এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।
প্রতিবেশীকে হাদিয়া দেওয়া।তার বাড়িতে খাবার ইত্যাদি প্রেরণ করা।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে অসীয়ত করেছেন :
অর্থাৎ. যখন তুমি তরকারী রান্না করবে তাতে বেশি করে পানি দেবে অতঃপর তোমার প্রতিবেশীর খবর নিয়ে তার থেকে তাদেরকে কিছ দেবে।
ইসলাম প্রতিবেশীদের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে অত্যাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে যা অন্য কোন ধর্ম কখনও করে নাই।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেন.   জিবরীল আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে অনবরত অসিয়ত করতে থাকেনএমনকি এক পর্যায়ে আমার ধারণা হয়েছিলআল্লাহ তাআলা  তাকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেবেন (বুখারী মুসলিম) 

ইয়াতীম-গরীবদের প্রতি সহানুভূতিশীল
ইসলাম ধর্ম সমাজের অসহায়-দুঃস্থ,নিরীহ, হতভাগা,বিপদ্গ্রস্থ মানুষদের সাহায্য করার জন্য বিশেষভাবে উদ্বুদ্ব করে থাকে। যারা এভাবে করে সমাজের অসহায় দরিদ্র্য লোকদের প্রতি দয়া দেখাবেন আল্লাহ তাদেরকে বিশেষ মর্যাদায় অসীন করবেন। এ ব্যাপারে অসংখ্য হাদীস রয়েছে।রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
যে কোন মুসলিম অন্য মুসলিমকে বস্ত্রহীন অবস্থায় কাপড় দান করলআল্লাহ তাকে জান্নাতেরভিতর সবুজ রঙ এর পোশাক পড়াবেন,যে কোন ক্ষুধার্ত মুসলিমকে খাদ্য দান করবেন আল্লাহতাকে জান্নাতে ফল খাওয়াবেন আর কোন মুসলিম অন্য মুসলিমকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় পানি পানকরালেআল্লাহ তাকে সীলমোহরকৃত সুস্বাদু পানি পান করাবেন [আবূ দাউদ]
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
তোমরা ভাইয়ের প্রতি হাসিমুখে হাসিমুখে তাকান সদকা।কাউকে ভাল কাজ করার জন্যতোমার উপেদাশাবলি হল সদকা। কাউকে ভাল কাজ করার জন্য উপদেশ সদকা।কাউকে মন্দকাজ থেকে বিরত রাখাও হল সদকা। পৃথিবীতে পথভ্রষ্ট ব্যক্তিকে তোমার সুপথ প্রদর্শন একটিসদকা। যে ব্যক্তি চোখে কম দেখে তাকে সাহায্য করা সদকা। যদি রাস্তা হতে পাথর,কাঁটা এবংহাড় সরিয়ে দাও,তাও একটা সদকা।তোমার বালতির পানি দিয়ে তোমার ভাইয়ের বালতি ভরেদেওয়াও সদকা [তিরমিযী]
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত তার ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে আল্লাহ তার প্রতি ততক্ষণ সাহায্য করতেথাকে [মুসলিম]
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
তোমরা ক্ষুদার্ধকে খাদ্য দাও,রুগ্ন ব্যক্তিকে সেবা কর,বন্দীকে মুক্ত কর এবং ঋণের দায়ে আবদ্বব্যক্তিকে ঋণমুক্ত কর [বুখারী]
যারা বিপদ্গ্রস্থ মানুষদের সাহায্য করেবে তারা অতি সহজে আল্লাহকে সন্তুষ্ঠ করতে পারবে এবং এর বিনিময় সে জান্নাত লাভ করতে পারবে।রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
যে ব্যক্তি  আশায় আমার উম্মাতের কারো কোন প্রয়োজন পূরণ করল যেএর দ্বারা তাঅন্তরকে খুশী করবেসে যেন আমার অন্তরকে খুশী করল। আর যে আমাকে খুশী করল,সে যেনআল্লাহকে খুশী করল।আর যে আল্লাহকে খুশী করল,আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন[বায়হাকী]
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
কোন মুসলিম যখন তার মুসলিম ভাইয়ের সেবাযত্ন করে তখন সে জান্নাতের ফল আহরণে লিপ্তথাকে,এমন কি সে ঘরে ফিরে আসা পর্যন্ত।” [মুসলিম]
মুসলিমগণকে এভাবে একজনকে অপরের সাহায্যের জন্য একটি দেহের সাথে তুলনা করা হয়েছে।একজন যখন বিপদের পতিত হবে তখন তিনি সাধ্যাতীত তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসবেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:  ‘ ভালোবাসাদয়াসহানুভূতির দিক দিয়ে মুমিনদের দৃষ্টান্ত হল একটি দেহের ন্যায়। দেহের একাংশ  আক্রান্ত  হলে  সমগ্র দেহ জ্বরগ্রস্থ নিদ্রাহীন হয়ে পড়ে’(মুসলিম) 
এমনিভাবে একজন মুসলিম যখন বিশ্বের যে কোনো স্থানে আক্রান্ত হয়, বিপদে পড়ে, তখন অন্যসকল মুসলিমের কর্তব্য হল, তার প্রতি রহম ও ইহসান করা। তার ব্যথায় ব্যথিত হওয়া। তার সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া।
 দরিদ্র্য অসহায় লোকদের সাহায্য যারা করবে আল্লাহ তাদেরকে কখনও অপমানিত ও অপদস্থ করবেন না। যখন রাসূলুল্লাহ(সাঃ) প্রথম ওয়াহীপ্রাপ্ত হন তখন রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ঘাবড়ে যান এবং সেই সময় তার স্ত্রী খাদীজা(রাঃ) তার প্রিয় স্বামী রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন,
আল্লাহর শপথ করে বলছিআল্লাহ কখনো আপনাকে অপমানিত করবেন না।কেননা আপনিআত্মীয়দের প্রতি সাদচার করুন,অসহায় ব্যক্তিদের বোঝা বহন করেন,নিঃস্ব-ব্যক্তির অন্ন বস্ত্রেরব্যবস্থা করে দেন,মেহমানের আপ্যায়ন করেব এবং বিপদ্গ্রস্থ মানুষদের সহায়তা প্রদান করে থাকুন

ইসলাম যেভাবে করে একটি মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
ক। জীবনের নিরাপত্তা
ইসলাম মানুষের জীবনের নিরাপত্তা সামাজিকভাবে নিশ্চিত করেছে। একের জীবন অপরের জন্য তা হরণ করা হারাম।আল্লাহ বলেন,
সে প্রাণকে হত্যা করো না, যাকে আল্লাহ হারাম করেছেন; কিন্তু ন্যায়ভাবে।  [ইসরাঃ৩২]
 যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবাপৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। এবং যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে। [মায়িদাঃ৩২]
যদি সমাজে এই হত্যাকাণ্ডের মত অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে তাহলে তার জন্য আল্লাহ পাক দণ্ডবিধি জারী করেছেন যার ফলে হত্যাকারী ব্যক্তিকেও হত্যার পরিবর্তে হত্যার বিধান দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
হে ঈমানদারগন! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কেসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায় [বাকারাঃ১৭৭]
খ। সম্পদের নিরাপত্তা
ইসলাম কেবলমাত্র মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নাই বরং ইসলাম মানুষের সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।ইসলামের দৃষ্টিতে  চুরি,ডাকাতি,ছিনতায়ি,জুয়া,সুদ,ঘুষ ইত্যাদি অনৈতিক কর্মকাণ্ড একেবারে নিষিদ্ব।
হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কর না। [নিসাঃ২৯]
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন,
যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ জমি কারও কাছে থেকে অন্যায়ভাবে দখল করবে আল্লাহ কাল কিয়ামতের দিন তার ঘাড়ে সাত তবক পরিমাণ আসমান পৃথিবী চাপিয়ে দিবেন।
চুরি করা ইসলামের দৃষ্টিতে একটি জঘন্যতম অপরাধ। যারা চুরি করবে তাদের জন্য ইসলাম হাত কাটার বিধান দিয়েছে। আল্লাহ বলেন,
যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের হাত কেটে দাও তাদের কৃতকর্মের সাজা হিসেবে [মায়িদাঃ৩৮]
অন্যদিকে যারা ডাকাতি ও রাজহানীর মত জঘন্য অপরাধ করবে তাদের ব্যাপারে ইসলাম কঠোর দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছে। আল্লাহ বলেন,
যারা আল্লাহ তাঁর রসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি।  [মায়িদাঃ৩৩]
উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথাটি প্রতীয়মান হয় যে, কেউ কারও সম্পদকে অন্যায়ভাবে লুণ্ঠন করতে না পারে সে ব্যাপারে ইসলাম অত্যন্ত সজাগ দৃষ্টি দান করেছে।
গ। সম্ভ্রমের নিরাপত্তা
ইসলাম একে অপরের সম্মান,সম্ভ্রম,ইজ্জত আব্রুর রক্ষা করার কথা বিশেষভাবে গুরত্বসহকারে উল্লেখ করেছে। তাই আল্লাহ বলেন,
হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য গৃহে প্রবেশ করো না, যে পর্যন্ত আলাপ-পরিচয় না কর এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম না কর। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম, যাতে তোমরা স্মরণ রাখ। [সূরা নূর-২৭]
এখানে গৃহবাসীর ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে তার অনুমতি গ্রহণ কথা বলা হয়েছে। কারণ একটি মানুষ ঘরে যেকোন অবস্থায় প্রবেশ করতে পারে। যদি আকস্মিকভাবে কেউ কারও ঘরে প্রবেশ করে তাহলে উভয় পক্ষ এক বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হবে। তাই কারও গৃহে প্রবেশ করার পূর্বে তার অনুমতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সুরা নূর যে অনুমতির কথা বলা হয়েছে, তা অত্যন্ত বৈজ্ঞানিক।সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে কি বিষয় আলাপ করবে তা নির্ধারণ করা।তাছাড়া কারও অনুপস্থিতিতে কারও ঘরে অনুমতিবিহীন অবস্থায় প্রবেশ করলে তার ঘর থেকে কোন কিছু হারিয়ে গেলে তাকে সন্দেহ করবে।অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করলে এই সমস্যা হয়তো হত না।
এমন কি ঘরে মা থাকার পর সেখানে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে। যখন এই বিধান দেওয়া হয় তখন এক সাহাবী(রাঃ) মুহাম্মদ(সাঃ)কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, ঘরে মা থাকলে কেন তার অনুমতি নিতে হবে? তখন জবাবে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বললেন। তুমি কি তোমার মাকে উলংগ অবস্থায় দেখতে চাও? তখন সেই সাহাবা বললেন না,তখন আল্লাহর রাসূল বললেন এই কারণে তার মায়ের কক্ষে প্রবেশ করার পূর্বে অনুমতি নিতে হবে।
আল্লাহ পাক মানুষের পবিত্র একটি বিষয় সতিত্বকে রক্ষা করার জন্য বিশেষভাবে আহবান জানিয়েছেন।তাই এই ব্যভিচারকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষিদ্ব ঘোষণা করেছে।ব্যভিচার বলতে আমরা সাধারণত নারী-পুরুষের অবৈধ মেলা-মেশাকে বুঝে থাকি।  ব্যভিচারের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে আল-রামেলী বলেন,
ব্যভিচার হল অকাট্য প্রত্যক্ষ হারাম লিঙ্গের ভিতর লিংগ প্রবেশ করানো যাতে স্বাভাবিকভাবেযৌনাকর্ষন থাকে
মানসুর বিন ইউসুফ বলেন,
সামনে বা পিছনের দিক দিয়ে অশ্লীল কাজ হল ব্যভিচার
এই ব্যভিচার ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য একটি অপরাধ।তাই আল্লাহ বলেন, আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়োনা। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং খুবই মন্দ পথ”। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৩২)  আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ  “এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না। অতঃপর কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালংঘনকারী হবে”। (সূরা মুমিনুনঃ ৫-৭)
অপবাদ দেওয়া একটি জঘন্যতম অপরাধ।একটি হাদীসে মুহাম্মদ (সাঃ) সাতটি কবীরা গুনেহের নাম উল্লেখ করেছেন যার একটি বলা হয়েছে কোন সতী-সাধবী মহিলাকে অপবাদ দেওয়া।এছাড়া রাসূলে করীম(সাঃ) বলেন, “তোমরা কোন সতী-সাধবী মহিলার নামে অপবাদ দিও না
এই অপবাদের দ্বারা সত্বী-সাধ্বী মহিলার সম্মান নষ্ট করা হয়। যারা কারও নামে এমন অপবাদ দিবে তাদের জন্য আশিটি বেত্রাঘাতের কথা বলা হয়েছে।আল্লাহ বলেন,
যারা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে অতঃপর স্বপক্ষে চার জন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে।  [নূরঃ৪]                                                                                                                         
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন
মদকে আরবীতে ‘খামর’ বলা হয়। এর আভিধানিক অর্থ হল, আচ্ছন্ন করা। ইসলামী পরিভাষায় ‘খামর’ বা মদ বলা হয়, যা পান করলে জ্ঞান ও বুদ্ধি আচ্ছাদিত হয়ে পড়ে।
ইসলামের দৃষ্টিতে মদ জুয়া হারাম ও কবীরা গুনাহ।আল্লাহ বলেন,
মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।[মায়িদাঃ৯০]
হাদীসে মদ পানের ভয়াবহ পরিণতির কথা হাদীসে তুলে ধরা হয়েছে। হাদীসে বলা হয়েছে,
মদ্যপায়ী ব্যক্তিগণ কখনও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
যারা মদপান করবে আল্লাহ তাদের ইবাদত সহজে কবুল করবেন না। তাই রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এই মর্মে বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নেশাদার দ্রব্য পান করবে আল্লাহ তার ৪০ দিন ছালাত কবুল করবেন না। যদি এ অবস্থায় মারা যায় তাহ’লে জাহান্নামে যাবে। যদি তওবাহ করে তাহ’লে আল্লাহ তার তওবাহ কবুল করবেন। আবার নেশাদার দ্রব্য পান করলে আল্লাহ তার ৪০ দিন ছালাত কবুল করবেন না। যদি এ অবস্থায় মারা যায় তাহ’লে জাহান্নামে যাবে। আর যদি তওবাহ করে তবে আল্লাহ তার তওবাহ কবুল করবেন। আবার যদি নেশাদার দ্রব্য পান করে আল্লাহ তার ৪০ দিন ছালাত কবুল করবেন না। এ অবস্থায় মারা গেলে জাহান্নামে যাবে। তওবাহ করলে আল্লাহ তার তওবাহ কবুল করবেন। লোকটি যদি চতুর্থবার মদ পান করে আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিন ‘রাদাগাতুল খাবাল’ পান করাবেন। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! ‘রাদাগাতে খাবাল’ কী? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আগুনের তাপে জাহান্নামীদের শরীর তে গলে পড়া রক্তপূজ মিশ্রিত গরম তরল পদার্থ:
মদের সাথে সম্পর্ক রাখে এমন দশ শ্রেণীর লোকের প্রতি রাসূল (ছাঃ) অভিশাপ করেছেন। () যে লোক মদের নির্যাস বের করে () প্রস্ত্ততকারক () মদপানকারী () যে পান করায় () মদের আমদানীকারক () যার জন্য আমদানী করা হয় () বিক্রেতা () ক্রেতা () সরবরাহকারী এবং (১০) এর ভ্যাংশ ভোগকারী
মানুষ সমাজে যত ধরনের অশ্লীল কাজ-কর্ম করুক না কেন, তার পিছনে একটি মূল কারণ হল মাদকদ্রব্য।মানুষ যখন তা সেবন করবে তখন তার আর কোন হুশ থাকে না।তাই তখন সে যা ইচ্ছে তাই করে বসে। তাই আল্লাহর রাসূল বলেছেন,
সকল অশ্লীল অপকর্মের মূল হল মাদকদ্রব্য।
তাই সামাজিক নিরাপত্তা ও সমৃদ্বি অর্জনের জন্য মাদক নিরাময় ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।

প্রশ্নঃ ১ম বিশ্বযুদ্বে উসমানীয়দের অক্ষ শক্তির পক্ষে দল যোগ দেওয়ার কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে লিখ।


প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (অপর নাম - প্রথম মহাযুদ্ধ) ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ সালের মধ্যে সংঘটিত হয় এবং তখন পর্যন্ত এটিই ছিল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ যুদ্ধ।১৯১৪ সালের ২৮ জুন বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভো শহরে অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্কডিউক ফ্রানৎস ফার্ডিনান্ড এক সার্বিয়াবাসীর গুলিতে নিহত... হন। অস্ট্রিয়া এ হত্যাকাণ্ডের জন্য সার্বিয়াকে দায়ী করে এবং ওই বছরের ২৮ জুন সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এ যুদ্ধে দুদেশের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়ে। এভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) সূচনা হয়। তবে অস্ট্রিয়ার যুবরাজ হত্যাকাণ্ডই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের একমাত্র কারণ ছিল না। উনিশ শতকে শিল্পে বিপ্লবের কারণে সহজে কাঁচামাল সংগ্রহ এবং তৈরি পণ্য বিক্রির জন্য উপনিবেশ স্থাপনে প্রতিযোগিতা এবং আগের দ্বন্দ্ব-সংঘাত ইত্যাদিও প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের কারণ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে একপক্ষে ছিল অস্ট্রিয়া, জার্মানি, হাঙ্গেরি,তুরস্ক ও বুলগেরিয়া। যাদের বলা হতো কেন্দ্রীয় বা অক্ষ শক্তি। আর অপরপক্ষে ছিল সার্বিয়া, রাশিয়া, ব্রিটেনে, ফ্রান্স, জাপান, ইতালি ও আমেরিকা। যাদের বলা হতো মিত্রশক্তি।
তুরস্কের অক্ষ শক্তির পক্ষে যোগ দেওয়ার কারণসমূহ
১৯১৪ সালে যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ব সঙ্ঘটিত হয় তখন তুরস্ক প্রথমে নিরপেক্ষ থাকার ব্যাপারে মনোভাবে ব্যক্ত করতে থাকে। কিন্তু কালক্রমে তারা অক্ষ শক্তির দল নেয়। এর পিছনে বেশ কিছু ধরনের কারণ ছিল যা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
১. মিসর পুনরুদ্বার
১৮৮২ সালে খোদিভ তৌফিকের শাসনামলে উদাভী বিদ্রোহ সঙ্ঘটিত হলে পরে তৌফিক বিদেশী শক্তির সাহায্য প্রার্থনা করে আর ব্রিটিশ সরকার তাদেরকে সহায়তা করে আর এমনিভাবে উসমানীয় সম্রাজ্য হতে মিসর বিচ্যুত হয় আর মিসর তখন হতে ইংলান্ডের একটি ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়। আর তখন হতে উসমানীয়রা ব্রিটিশ বিদ্বেষী হয়ে উঠে এবং মিসরকে পুনরুদ্বারের ব্যাপারে সচেষ্ট হয়ে উঠে।
২. তিউনিস ও আলজিয়ার্স পুনরুদ্বার
যখন ব্রিটিশরা মিসরসহ অন্যান্য অঞ্চল দখল করতে থাকে তখন থেকেই ফ্রান্স আফ্রিকার দেশসমহূ দখল করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠে। তাই তখন হতে আফ্রিকার বেশ কিছু অঞ্চল তারা দখল করতে থাকে। আর এই কারণে ১৮৩০ সালে প্রথমে তারা আলজিরিয়া দখল করে নেয় একবারে বিনা বাধায় উসমানীয়দের দূর্বলতার জন্য। এরপরে ১৮৮২ সালের তিউনিস সেখানকার শাসকদের সাথে সমঝোতার মাধ্যমেও তিউনিসিয়া দখল করে নেয়। এখানে ব্রিটেন,ইতালী সকলেই নিশ্চুপ থাকে। এতে করে ফরাসী সরকারের প্রতি উসমানীয়রা ক্ষুব্দ্ব হতে থাকে আর তা পুনরুদ্বারের ব্যাপারে বদ্ব পরিকর হয়।
৩. ত্রিপোলী পুনরুদ্বার
একইভাবে লিবিয়াতে অবস্থিত ত্রিপোলীতে ইউরোপীয় আরেক পরাশক্তি ইতালি অনেক যাবৎ নিজেদের কোন উপনিবেশ না থাকার জন্য হীনমন্যতায় ভুগছিল। আর তারাই পরবর্তীতে উসমানীয়দের কাছে থেকে ত্রিপোলী ছিনিয়ে নেয়।১ম বিশ্বযুদ্ব সঙ্ঘটিত হওয়ার ঠিক এক বছর আগে ইতালি তাদের সার্বভৌমত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে যায়। আর তুরস্ক এতে করে নিজেদের দূর্বল হিসেবে মনে করে নতুন মিত্রের সন্ধানে নেমে পড়ে।
৪. ইয়ং তুর্ক ফ্রন্টের অবদান
নব্য তুর্কদের আন্দোলনের ফলে এক নতুন চিন্তাধারার উন্মেষ তুর্কী রাজনীতির মধ্যে সংযুক্ত হতে থাকে। তারা নতুন করে তুরস্ককে সাজাতে শুরু করে। তারা যখন দেখল যে, সমগ্র ইউরোপ মিলে তুরস্কের বিভিন্ন স্থান দখল করে নিয়ে যাচ্ছে তখন থেকেই তাদের মধ্যে একধরনের ইউরোপীয় নেতিবাচক মনোভাবের বিকাশ সাধিত হয়েছিল। আর এই কারণেই জার্মানকে  বন্ধু হিসেবে মনে করে সমুখের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
৫. পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত
একসময়ে উসমানীয়রা ছিল পৃথিবীর সর্বাধিক দুর্ধর্ষ জাতি যাদের নাম শোনামাত্র সকলের অন্তর একেবারেই কেপে উঠত। আর সেই পরাশক্তি হিসেবে খ্যাত উসমানীয়রা এতটাই দূর্বল হতে থাকে যে, তারা নিজেদের দেশের অভ্যন্তরের বিদ্রোহ ঠেকাতে একেবারেই দূর্বল হয়ে পড়ে। আর এতে করে উসমানীয়দের শক্তি বৃদ্বি করার জন্য আর এই পৃথিবীতে তাদের দাপট পুনরায় প্রতিষ্ঠার জন্য তারা আবার ক্ষমতাধর হওয়ার জন্য জার্মান পক্ষের অবলম্বণ করার ব্যাপারে বেশী আগ্রহী ছিল। তাই তারা অক্ষ পক্ষে যোগদান করেছিল।
৬. বলকান রক্ষা
বলকান রাষ্ট্র হতে পর্যায়ক্রমে রুমানিয়া,বুলগেরিয়া,সার্বিয়া,আলবেনিয়া,মেসিডোনিয়া,বসনিয়া,ক্রোয়েশিয়া এভাবে করে অসংখ্য রাষ্ট্রের জন্ম হতে থাকে। আর প্রত্যেকের মধ্যে নতুনভাবে জাতীয়তাবাদ মনোভাবের বিকাশ ঘটতে থাকে আর এতে করেই উসমানীয় সম্রাজ্যে নতুন করে ফাটল দেখা দেয় আর এতে করে উসমানীয়রা চিন্তা করল যে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার খাতিরে অক্ষ পক্ষের পক্ষে যোগদান ছাড়া আর অন্য কোন উপায় থাকতে পারে না। আর বলকান রাজ্যের অধিবাসীরাই অস্ট্রিয়ার প্রিন্সকে হত্যা করেছিল তাই অস্ট্রিয়া যখন বলকানদের উপর হামলা চালালো তখন তুরস্ক তাদের হারনো পূর্বের অসংখ্য স্থানকে ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে বলকানবাসীর বিপক্ষে যুদ্ব ঘোষণা করে।
৭. রাশিয়াকে প্রতিহত
রাশিয়ার সাথে তুরস্কের সেই ক্রিমিয়ার যুদ্বের সময় হতেই সীমান্ত সমস্যা চলে আসছিল। সীমান্তে প্রায় সময়ে রাশিয়ার সাথে তুরস্ক বাহিনীর সমস্যা লেগেই থাকত। এর পাশাপাশি ককেশাশের সীমান্তে তারপর কাস্পিয়ান ও কৃষ্ণ সাগরের জাহাজের অবস্থানকে কেন্দ্রে করে সর্বদা এদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব লেগেই থাকত। আর রাশিয়াকে প্রতিহত করা দরকার ছিল বলে তখন জার্মানির পক্ষে তুরস্ক অবস্থান গ্রহণ করেছিল।
৮. সেনাবাহিনীকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দান
উসমানীয় সেনাবাহিনী আগের মত সেই গাজী এবং জেনেরিস বাহিনীর মত এতটা শক্তিশালী ছিল না আর। একদিকে ইউরোপে রেনেসাঁ বিপ্লবের কারণে ইউরোপিয়ানরা আধুনিক সরঞ্জামের ব্যবহার শুরু করে। তারা সকল দিক হতে উন্নত হতে থাকে। বিমানের ব্যবহার কেবল তখন তারা মাত্র শুরু করে। আর অন্যদিকে স্থল ও জলপথে আগে থেকেই তারা ছিল অত্যন্ত উন্নত। কিন্তু সেইদিক হতে তুরস্ক সকল দিক হতে একবারেই পশ্চাতগামীতার মধ্যে ছিল। তাই তারা জার্মানির সাথে সঙ্ঘবদ্বভাবে নতুন করে নিজেদেরকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে সিদ্বান্ত গ্রহণ করে।
৯. বিদেশী চাপ হতে মুক্তি
উসমানীয় খিলাফতের কাঠামো যখন দূর্বল হতে চলছিল তখন থেকেই তাদের উপর তাদের পূর্বের স্থানসমূহকে দখল করে রাখা দেশ তথা ফ্রান্স, ইংল্যাণ্ড, রাশিয়া তাদের উপর বিভিন্নভাবে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক চাপ প্রদান করত আর এতে করত আবার তার পাশাপাশি সামরিক হুমকির মাধ্যমে যেকোন দাবী আদায় করত এবং লাগামহীনভাবে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে থাকে। এমতাবস্থায় তুরস্ক সরকার জার্মানির সাথে সংঘবদ্ব হয়ে তাদর বিরুদ্বে যুদ্ব করার ব্যাপারে পরিকল্পণা গ্রহণ করে।
১০. উপসাগরীয় অঞ্চলকে ব্রিটিশমুক্ত রাখা
উসমানীয় শাসনামলে উপসাগরীয় অঞ্চলসমূহ অর্থাৎ বাহরাইন, ওমান, আরব আমিরাতের অধিকাংশ জায়গা ব্রিটিশ আশ্রিত অংশ হিসেবে পরিগণিত হত আর এমনিভাবে উসমানীয় খিলাফতের অংশের সাথে ব্রিটিশের ঘাটিকে উসমানীয়রা সুনজরে দেখতে পারে নাই। যার ফলে তুরস্ক ব্রিটেনের বিরুদ্বে যুদ্ব্বে অবতীর্ণ হন।
ফলাফল
প্রথম বিশ্বযুদ্ব ১৯১৮ সালে সমাপ্ত হয়। এই যুদ্বে মিত্রপক্ষ যুদ্বে জয় লাভ করে। আর অক্ষপক্ষ শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করেছিল। আর এর দ্বারা তুরস্ক বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকে। তুরস্কের সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে। আর এমনিভাবে উসমানীয়দের শাসন ব্যবস্থাকে বিলুপ্ত করে দিয়েছিল এই প্রথম যুদ্বের ফলাফল হিসেবে। এই যুদ্বের ফলাফল সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
১. অসংখ্য সৈন্যের হতাহত
এই যুদ্বে তুরস্ক বাহিনী অংশগ্রহণ করার জন্য বহু সৈন্য মারা যান। আর এতে করে তুরক্সের সামরিক কাঠামো একেবারেই নড়বড়ে হয়ে যায়।
২. অর্থনৈতিক অস্থিরতা
তুরস্কের এই যদ্বে পরাজায়ের মাধ্যমে সামরিক ক্ষতির সম্মুখীন পাশাপাশি অর্থনৈতিক এক বিপর্যয়ের মধ্যে তারা প্রবেশ করেত থাকে। দিন দি ন বেকারত্বের হার বাড়তে থাকে আর বিদেশীদের হাতে সকল মূল মূল ব্যবসা বাণিজ্য তাদের হাতে চলে যায়।
৩. আরব জাতীয়বাদের বিকাশ
যখন উসমানীয়রা সমগ্র মিত্র শক্তির বিরুদ্বে প্রাণ পণ চেষ্টার মাধ্যমে যুদ্বে জয় লাভ করার জন্য চেষ্টা করছিল তখন উসমানীয় সম্রজ্যের অধীনে অবস্থিত আরব দেশসমূহে নতুন করে আরব জাতীয়তাবাদকে নিজেদের স্বকীয়তার জন্য আরব বলে পরিচয় দিতে প্রকশ করতে থকে আর এর ধারাবাহিকতায় সৌদি আরব, কুয়েত, ইউ এ ই, ইয়ামান, ওমান, মিসরও, জদার্নসহ আরও নানা দেশের মধ্যে ইহা ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
৪. তুরস্ক জাতীয়তাবাদের সাফল্য
এই যুদ্বে উসমানীয়দের পতনের জন্য তুরস্কের জাতীয়তাবাদের বিশ্বাসী লোকেরা বিশেষভাবে সুগোগ সুবিধা লাভ করেত থাকে। তারা সর্বদা বিষয়টি আশা করত যে, যেকোনভাবে উসমানীয়দের যাতে করে পতন ঘটে আর নতুন করে তারা দেশকে গড়বে। আর স্বপ্নে তাই বাস্তবায়ন হয় আর তুরস্কের জাতীয়তাবোধে বিশ্বাসী যুবক অনেক গর্বের সাথে ছবি উঠালেন।
৫. ইরাক সিরিয়া শত্রুপক্ষের হাতে চলে যাওয়া
যখন ১ম বিশ্ব যুদ্ব শুরু হয় তখন হতেই অত্যন্ত সুকৌশলে ব্রিটেনের লোভ ছিল ইরাক ও সিরিয়ার প্রতি। তারা অত্যন্ত সুকৌশলে কয়েকবার কয়েকটি অভিযান প্রেরণ করে তাদের কর্তৃত্ব স্থাপনে তারা সফল হয় আর পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম এভাবে করে অপমানজনক উপায়ে মুসলিমগণ নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ স্থান হারাতে বসে।
৬. জেরুজালেমের কর্তৃত্ব হারানো
প্রায় হাজার বছর ধরে ক্রুসেড যুদ্ব সংঘটিত হতে থাকে। আর খৃষ্টানরা কোনভাবেই যুদ্বের পূর্বে কখনো এতটা সাফল্যের সাথে জেরুজালেম জয় করতে পারে নাই। যেদিন তারা জেরুজালেম জয় করে সেদিন সেই সেনা অফিসার এই কথা বলেছিল যে, আজ জেরুজালেম জয়ের মধ্য দিয়ে ক্রুসেডের অবসান ঘটল।
৭. ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা
যখন হতে সিরিয়া দখল করল তখন হতে ইয়াহূদীরা নতুন করে একটি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখা শুরু করে যা তাদের তীর্থ স্থান নামে পরিচিত। যদিও তাদের পৃথক রাষ্ট্র গঠন করার স্বপ্ন ছিল অনেক পুরাতন। এরপরেও যখন জেরুজালেম ব্রিটিশ অধিগ্রহণ করেন তখন থেকে ইয়াহূদীরা নতুন রাষ্ট্রের কথা চিন্তা ভাবনা শুরু করে এবং সেখানে তারা অনেকেই আরবদের কাছে থেকে চড়া দামে জমি ক্রয় করে জীবন যাপন শুরু করে। ১৯১৯ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বেলফোরের নতুন ঘোষণার মাধ্যমে ইসরাইল রাষ্ট্রের স্বীকৃত পাওয়া যায়।
৮. অহরহ আরব রাষ্ট্রের জন্ম
যেহেতু উসমানীয়গণ যুদ্বে পরাজয় করতে থাকে আর ব্রিটিশরা আগে থেকেই আরবদেশে বিভিন্ন লোকদের মাঝে তুরস্ক বিরোধী মনোভাবে তুলে ধরতে থাকে। লরেন্স অব আরাবিয়া এই ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আর এমনি ভাবে আরবের পূর্বের সেই গোত্রভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা পুনরায় ফিরে আসে। আর এমনিভাবে সৌদি আরব, কুয়েত, ইরাক, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, ইয়ামান, জদার্ন, সিরিয়া অসংখ্য নেতার মাধ্যমে বিভাজন সৃষ্টি হয় পারস্পারিক সম্পর্কের দিক দিয়ে।
৯. উসমানীয়দের পতন
এই যদ্বু এ উসমানীয়রা জার্মান পক্ষ নেওয়ার ফলে তাদের পতন অনীবার্য হয়ে পড়ে। তাই প্রথম বিশ্বযুদ্ব শেষ হওয়ার ৭-৮ বছরের মধ্যেই সমগ্র উসমানীয়দের ছয়শ বছরের ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটেছিল।
১০. গণতন্ত্র ও কামাল আতাতুর্কের উত্থান
আর যুদ্বের পরিপ্রেক্ষিতে যেহেতু সকলের মধ্যে উসমানীয়দের ব্যাপারে একটি নেতিবাচক মনোভাব কাজ করছিল তাই তখন হতেই কামাল আতাতুর্ক এই দেশকে পশ্চিমাদের সাজানো পরিকল্পনা অনুযায়ী সকলের মাঝে আধুনিক গণতন্ত্র চালু করে যান যদিও এর সুফল তিনি নিজে খুব বেশী দিন ভোগ করতে পারেন নাই।

প্রশ্নঃ কারবালার যুদ্বের কারণ, মর্মান্তিক ঘটনা ও ফলাফল নিয়ে আলোচনা কর।


ভূমিকা
কারবালার ইতিহাস একটি মুসলিমগণের জন্য মর্মান্তিক ইতিহাস। যে যুদ্বে মুসলিমগণ তাদের একজন শ্রেষ্ঠ তথা হুসায়ন(রাঃ)কে হারান।এই যদ্বু তৎকালীন নিষ্ঠুর শাসক ইয়াজীদ ও মুহাম্মদ(সাঃ) এর দৌহিত্র হুসায়ন(রাঃ) এর সাথে সংঘটিত হয়। এই যুদ্ব বিভিন্ন কারণে সঙ্ঘটিত হয় যে সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা... করা হলঃ
কারণ
ইয়াজিদের মনোনয়ন
মুআবিয়া(রাঃ) ৬৭৬ খ্রীষ্টাব্দে বসরার শাসনকর্তা হযরত মুগিরার প্ররোচনায় তিনি তার জ্যৈষ্ট পুত্র ইয়াজিদকে তার উত্তরাধিকারী মনোনীত করে ইসলামের ইতিহাসে এক নব অশুভ অধ্যায়ের শুরু হয়।  হযরত মুআবিয়া (রাঃ)-এর পুত্র ইয়াজিদ ছিল নিষ্ঠুর, বিশ্বাসঘাতক, অধার্মিক ও মদ্যপায়ী।তাঁর ব্যাপারে অনেকেই মদ পান করা, বানর নিয়ে খেলা করা, ফাহেশা কাজ করা এবং আরও বিভিন্ন ধরনের পাপ কাজের অভিযোগ আনায়ন করে থাকে। হযরত মুয়াবিয়ার সম্মানার্থে অনেকেই বলেন তিনি যখন তার পুত্রকে উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করেন, তখন ইয়াজিদ নাকি এমন দুরাচারী ছিল না। মুয়াবিয়া মৃত্যুর পরই নাকি সে এমন হয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবন যুবায়র(রাঃ) এর প্ররোচনা
এই পাপাচারী ইয়াজিদ-এর খলিফা হিসাবে মনোনয়ন অন্যরা মেনে নিলেও, ইসলামের ব্যত্যয় মহানবীর দৌহিত্র ইমাম হুসাইন মেনে নিলেন না। হুসাইনের এই ন্যায্য দাবীকে আবদুল্লাহ-ইবনে যুবাইর(রাঃ), আবদুল্লাহ-ইবনে ওমর(রাঃ), আবদুর রহমান-ইবনে আবু বকর(রাঃ) সমর্থন করেন। অবশ্য কিছুদিন পর শেষোক্ত দুজন ইয়াজিদের প্রলোভনে পড়ে তার বশ্যতা স্বীকার করে নেন। ইয়াজিদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে হুসাইন এবং আবদুল্লাহ-ইবনে যুবাইর মক্কায় চলে যান। ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়ের মক্কার উদ্দেশ্যে মদিনা ত্যাগ করেন। ইয়াজিদের বিপক্ষে হুসাইনের অবস্থানের কথা শুনে কুফার জনগণ হুসাইনের কাছে তাদের সমর্থন নেয়ার জন্য আবেদন জানায়।এদিকে আবদুল্লাহ ইবন যুবায়র(রাঃ) মক্কায় থেকে গেলেন এখানে যাতে করে কোন ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি না হয়। আর তিনি হুসাইন(রাঃ)কে ইয়াজীদের বিরুদ্বে প্রতিবাদ করার ব্যাপারে আগ্রহী করে তুললেন।
কূফাবাসীর আকুণ্ঠ সমর্থন
৬০ হিজরিতে ইরাক বাসীদের নিকট সংবাদ পৌঁছল যে, হুসাইন (রা:) ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া হাতে বায়আত করেন নি। তারা তাঁর নিকট চিঠি-পত্র পাঠিয়ে জানিয়ে দিল যে ইরাক বাসীরা তাঁর হাতে খিলাফতের বায়আত করতে আগ্রহী। ইয়াজিদকে তারা সমর্থন করেন না বলেও সাফ জানিয়ে দিল। চিঠির পর চিঠি আসতে লাগল।তখন নুমান ইবন বশীর ছিল কূফার গভর্নর।কেউ তার পিছনে জুমা ও ঈদের সালাত আদায় করতে চাইলো না। এভাবে পাঁচ শতাধিক চিঠি হুসাইন (রা:)এর কাছে এসে জমা হল।ইয়াজিদ ইসলামী শাসন ব্যবস্থার ব্যত্যয় ঘটানোয় ইমাম হুসাইনের মত মুমীন ব্যক্তির পক্ষে সেটা মেনে নেয়া কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। খিলাফত ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবনই ছিল ইমাম হুসাইনের (রা.) সংগ্রামের মূল লক্ষ্য। মুসলিম জাহানের বিপুল মানুষের সমর্থনও ছিল তার পক্ষে। উপরন্তু কুফাবাসীগন ইয়াজিদের অপশাসনের হাত থেকে বাচার জন্যে বারংবার ইমাম হুসাইন-এর সাহায্য প্রার্থনা করতে থাকলে তিনি তাতে সাড়া দেন। তিনি কূফা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
প্রত্যক্ষ কারণ
এর আগে হুসাইন তার চাচাত ভাই মুসলিম বিন আকিলকে এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পাঠান। মুসলিম কুফায় গিয়ে পৌঁছলেন। গিয়ে দেখলেন,আসলেই লোকেরা হুসাইনকে চাচ্ছে। লোকেরা মুসলিমের হাতেই হুসাইনের পক্ষে বয়াত নেওয়া শুরু করল। হানী বিন উরওয়ার ঘরে বায়আত সম্পন্ন হল।এই সময়ে জানা যায় যে, প্রায় ১৮ হাজার লোক হানী ইবন উরওয়ার ঘরে বায়আত গ্রহণ করেছিলেন।
এই সময়ে নুমান ইবন বশীর এই ব্যাপারে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই। তিনি এদেরকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই অবস্থা হতে মুক্তি হওয়ার নির্দেশ প্রদান করলেন। কিন্তু এতে করে কতিপয় ব্যক্তি ক্ষুব্দ্ব হয়ে তার বিরুদ্বে ইয়াজিদের কাছে প্রেরণ করল আর ইয়াজিদ তখন নুমানকে এই পদ হতে অপসারিত করল আর সিরিয়াতে ইয়াজিদের নিকট এই খবর পৌঁছা মাত্র বসরার গভর্ণর উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য পাঠালো। ইয়াজিদ উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদকে আদেশ দিলো যে, তিনি যেন কুফা বাসীকে তার বিরুদ্ধে হুসাইনের সাথে যোগ দিয়ে বিদ্রোহ করতে নিষেধ করেন। সে হুসাইনকে হত্যা করার আদেশ দেন নি।
উবাইদুল্লাহ কুফায় গিয়ে পৌঁছলেন। তিনি বিষয়টি তদন্ত করতে লাগলেন এবং মানুষকে জিজ্ঞেস করতে শুরু করলেন। পরিশেষে তিনি নিশ্চিত হলেন যে, হানী বিন উরওয়ার ঘরে হুসাইনের পক্ষে বায়আত নেওয়া হচ্ছে।
 অতঃপর মুসলিম বিন আকীল চার হাজার সমর্থক নিয়ে অগ্রসর হয়ে দ্বিপ্রহরের সময় উবাইদুল্লাহ বিন জিয়াদের প্রাসাদ ঘেরাও করলেন। এ সময় উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ দাঁড়িয়ে এক ভাষণ দিলেন। তাতে তিনি ইয়াজিদের সেনা বাহিনীর ভয় দেখালেন। তিনি এমন ভীতি প্রদর্শন করলেন যে, লোকেরা ইয়াজিদের ধরপাকড় এবং শাস্তির ভয়ে আস্তে আস্তে পলায়ন করতে শুরু করল। কুফা বাসীদের চার হাজার লোক পালাতে পালাতে এক পর্যায়ে মুসলিম বিন আকীলের সাথে মাত্র ত্রিশ জন লোক অবশিষ্ট রইল। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর মুসলিম বিন আকীল দেখলেন, হুসাইন প্রেমিক আল্লাহর একজন বান্দাও তার সাথে অবশিষ্ট নেই।এরপরে তারাও পলায়ন করল।এক বৃদ্বার ঘরে আশ্রয় গ্রহণ করলেন। আর তখন একটি ঘোষণা সারা কুফা নগরীতে ঈশার সালাতের পরে ইবন যিয়াদ ঘোষণা করল যে, যে ইবন আঁকিলকে আশ্রয় দিবে তাকে হত্যা করা হোক আর যে তাকে ধরিয়ে দিবে তাকে পুরষ্কার দেওয়া হবে।আর এতে করে সেই বৃদ্বা তার পুত্রেদের হত্যার কথা স্মরণ করল আর এই ভয়ে আকীলকে ধরিয়ে দেওয়া হয়। এবার তাকে গ্রেপ্তার করা হল।মুসলিম ইবন আশআস তাকে যেয়ে গ্রেফতার করল।  উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ তাকে হত্যার আদেশ দিলেন। এরপরে হানীকেও হত্যার নির্দেশ প্রদান করলো। মুসলিম বিন আকীল উবাইদুল্লাহএর নিকট আবেদন করলেন, তাকে যেন হুসাইনের নিকট একটি চিঠি পাঠানোর অনুমতি দেয়া হয়। এতে উবাইদুল্লাহ রাজী হলেন। চিঠির সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ছিল এ রকম:
“হুসাইন! পরিবার-পরিজন নিয়ে ফেরত যাও। কুফা বাসীদের ধোঁকায় পড়ো না। কেননা তারা তোমার সাথে মিথ্যা বলেছে। আমার সাথেও তারা সত্য বলেনি। আমার দেয়া এই তথ্য মিথ্যা নয়।”
কারবালার ঘটনা
হুসাইন সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি তার পরিবারসহ কুফায় যাবেন। সমর্থনের অভাবের বিষয়ে তার এসময় জানা ছিল না। অতঃপর যুল হজ্জ মাসের ৯ তারিখ আরাফা দিবসে উবাইদুল্লাহ মুসলিমকে হত্যার আদেশ প্রদান করেন। এখানে বিশেষভাবে স্মরণ রাখা দরকার যে, মুসলিম ইতিপূর্বে কুফা বাসীদের ওয়াদার উপর ভিত্তি করে হুসাইনকে আগমনের জন্য চিঠি পাঠিয়েছিলেন। সেই চিঠির উপর ভিত্তি করে যুলহাজ্জ মাসের ৮ তারিখে হুসাইন (রা:) মক্কা থেকে কুফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিলেন। অনেক সাহাবী তাঁকে বের হতে নিষেধ করেছিলেন। তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর, আব্দুল্লাহ বিন আমর এবং তাঁর ভাই মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফীয়ার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ইবনে উমার (রাঃ) হুসাইনকে লক্ষ্য করে বলেন: হুসাইন! আমি তোমাকে একটি হাদীছ শুনাবো। জিবরীল (আঃ) আগমন করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুনিয়া এবং আখিরাত- এ দুটি থেকে যে কোন একটি গ্রহণ করার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। তিনি দুনিয়া বাদ দিয়ে আখিরাতকে বেছে নিয়েছেন। আর তুমি তাঁর অংশ। আল্লাহর শপথ! তোমাদের কেউ কখনই দুনিয়ার সম্পদ লাভে সক্ষম হবেন না। তোমাদের ভালর জন্যই আল্লাহ তোমাদেরকে দুনিয়ার ভোগ-বিলাস থেকে ফিরিয়ে রেখেছেন। হুসাইন তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন এবং যাত্রা বিরতি করতে অস্বীকার করলেন। অতঃপর ইবনে উমর (রাঃ) হুসাইনের সাথে আলিঙ্গন করে বিদায় দিলেন এবং ক্রন্দন করলেন।
সুফীয়ান ছাওরী ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেন যে, ইবনে আব্বাস (রা:) হুসাইনকে বলেছেন: মানুষের দোষারোপের ভয় না থাকলে আমি তোমার ঘাড়ে ধরে বিরত রাখতাম।
বের হওয়ার সময় আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা:) হুসাইনকে বলেছেন: হোসাইন! কোথায় যাও? এমন লোকদের কাছে, যারা তোমার পিতাকে হত্যা করেছে এবং তোমার ভাইকে আঘাত করেছে?
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) বলেছেন: হুসাইন তাঁর জন্য নির্ধারিত ফয়সালার দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছেন। আল্লাহর শপথ! তাঁর বের হওয়ার সময় আমি যদি উপস্থিত থাকতাম, তাহলে কখনই তাকে যেতে দিতাম না। তবে বল প্রয়োগ করে আমাকে পরাজিত করলে সে কথা ভিন্ন। (ইয়াহ্-ইয়া ইবনে মাঈন সহীস সূত্রে বর্ণনা করেছেন)
যাত্রা পথে হুসাইনের কাছে মুসলিমের সেই চিঠি এসে পৌঁছল।সালাবিয়া নামক স্থানে এই চিঠিটি তিনি গ্রহণ করলেন। এছাড়া তিনি যাবালা নামক স্থানে পৌছলেন তখন তার দুধভ্রাতা আব্দল্লাহ ইবন বাকতারের মৃত্যুর সংবাদ পেলেন যাকে হুসায়ন(রাঃ) একটি চিঠি দিয়ে প্রেরণ করেছিলেন। আর তাকেও উবায়দুল্লাহ বিল্ডিং এর ছাদ হতে ফেলে দেন। এ স্থানে পৌঁছে গিয়ে এই ব্যাপারে অবগত হলেন যে,  চিঠির বিষয় অবগত হয়ে তিনি কুফার পথ পরিহার করে ইয়াজিদের কাছে যাওয়ার জন্য সিরিয়ার পথে অগ্রসর হতে থাকলেন।
ইবন যিয়াদ বাহিনীর অবরোধ
পথিমধ্যে ইয়াজিদের সৈন্যরা আমর বিন সাদ, সীমার বিন যুল জাওশান এবং হুসাইন বিন তামীমের নেতৃত্বে কারবালার প্রান্তরে হুসাইনের গতিরোধ করল।জানা যায় যে, আমর ইবন সাদ প্রায় চার হাজার সৈন্য বাহিনী নিয়ে উপস্থিত হয় হুসাইন(রাঃ)কে মোকাবিলার জন্য। হুসাইন সেখানে অবতরণ করে আল্লাহর দোহাই দিয়ে এবং ইসলামের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনটি প্রস্তাবের যে কোন একটি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহবান জানালেন।
   ১. হুসাইন বিন আলী (রা:) এবং রাসূলের দৌহিত্রকে ইয়াজিদের দরবারে যেতে দেয়া হোক। তিনি সেখানে গিয়ে ইয়াজিদের হাতে বয়াত গ্রহণ করবেন। কেননা তিনি জানতেন যে, ইয়াজিদ তাঁকে হত্যা করতে চান না।
   ২. অথবা তাঁকে মদিনায় ফেরত যেতে দেয়া হোক।
   ৩. অথবা তাঁকে কোন ইসলামী অঞ্চলের সীমান্তের দিকে চলে যেতে দেয়া হোক। সেখানে তিনি মৃত্যু পর্যন্ত বসবাস করবেন এবং রাজ্যের সীমানা পাহারা দেয়ার কাজে আত্ম নিয়োগ করবেন। (ইবনে জারীর হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন)
ইয়াজিদের সৈন্যরা কোন প্রস্তাবই মানতে রাজী হল না। তারা বলল: উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ যেই ফয়সালা দিবেন আমরা তা ব্যতীত অন্য কোন প্রস্তাব মানতে রাজী নই। এই কথা শুনে উবাইদুল্লাহএর এক সেনাপতি (হুর বিন ইয়াজিদ) বললেন: এরা তোমাদের কাছে যেই প্রস্তাব পেশ করছে তা কি তোমরা মানবে না? আল্লাহর কসম! তুর্কী এবং দায়লামের লোকেরাও যদি তোমাদের কাছে এই প্রার্থনাটি করত, তাহলে তা ফেরত দেয়া তোমাদের জন্য বৈধ হত না। এরপরও তারা উবাইদুল্লাহএর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতেই দৃঢ়তা প্রদর্শন করল। সেই সেনাপতি ঘোড়া নিয়ে সেখান থেকে চলে আসলেন এবং হুসাইন ও তাঁর সাথীদের দিকে গমন করলেন। হুসাইনের সাথীগণ ভাবলেন: তিনি তাদের সাথে যুদ্ধ করতে আসছেন। তিনি কাছে গিয়ে সালাম দিলেন। অতঃপর সেখান থেকে ফিরে এসে উবাইদুল্লাহএর সৈনিকদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে তাদের দুইজনকে হত্যা করলেন। (ইবনে জারীর হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন)
আশুরার দিন
সৈন্য সংখ্যার দিক থেকে হুসাইনের সাথী ও ইয়াজিদের সৈনিকদের মধ্যে বিরাট ব্যবধান ছিল। যেখানে হুসায়ন(রাঃ) এর সাথে মাত্র ৭২ জনের মত সৈন্য ছিল আর ঐদিকে তাদের সৈন্যসংখ্যা প্রায়  চার হাজারের মত ছিল।  হুসাইনের সামনেই তাঁর সকল সাথী বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে নিহত হলেন। অবশেষে তিনি ছাড়া আর কেউ জীবিত রইলেন না। তিনি ছিলেন সিংহের মত সাহসী বীর। কিন্তু সংখ্যাধিক্যের মুকাবিলায় তাঁর পক্ষে ময়দানে টিকে থাকা সম্ভব হল না। কুফা বাসী প্রতিটি সৈনিকের কামনা ছিল সে ছাড়া অন্য কেউ হুসাইনকে হত্যা করে ফেলুক। যাতে তার হাত রাসূলের দৌহিত্রের রক্তে রঙ্গিন না হয়। পরিশেষে নিকৃষ্ট এক ব্যক্তি হুসাইনকে হত্যার জন্য উদ্যত হয়। তার নাম ছিল সীমার বিন যুল জাওশান। সে বর্শা দিয়ে হুসাইনের শরীরে আঘাত করে ধরাশায়ী করে ফেলল। অতঃপর ইয়াজিদ বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে ৬১ হিজরীর মুহাররাম মাসের ১০ তারিখে আশুরার পবিত্র দিনে ৫৭ বছর বয়সে তিনি শাহাদাত অর্জনের সৌভাগ্য লাভ করেন।  আলী (রা:)এর সন্তানদের মধ্যে থেকে আবু বকর, মুহাম্মাদ, উসমান, জাফর এবং আব্বাস।হোসাইনের সন্তানদের মধ্যে হতে আবু বকর, উমর, উসমান, আলী আঁকবার এবং আব্দুল্লাহ।হাসানের সন্তানদের মধ্যে হতে আবু বকর, উমর, আব্দুল্লাহ এবং কাসেম।আকীলের সন্তানদের মধ্যে হতে জাফর, আব্দুর রাহমান এবং আব্দুল্লাহ বিন মুসলিম বিন আকীল।আব্দুল্লাহ বিন জাফরের সন্তানদের মধ্যে হতে আউন এবং আব্দুল্লাহ। ইতি পূর্বে উবাইদুল্লাহ বিন জিয়াদের নির্দেশে মুসলিম বিন আকীলকে হত্যা করা হয়। আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হোন। বলা হয় এই সীমারই হুসাইনের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। কেউ কেই বলেন: সিনান বিন আনাস আন্ নাখঈ নামক এক ব্যক্তি তাঁর মাথা দেহ থেকে আলাদা করে।
হুসাইনের দলে ২০০ জন মানুষ ছিল যাদের অধিকাংশ ছিল নারী। এদের মধ্যে হুসাইনের বোন, স্ত্রী, মেয়ে ও তাদের সন্তানরা ছিল। নারী ও শিশুদেরকে যুদ্ধবন্ধী হিসেবে দামেস্কে ইয়াজিদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। হুসাইনের মৃত্যু ও তার পরিবারের বন্দী হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে জনগণের সমর্থন তার দিক থেকে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের বন্দী করে রাখা হয়। এরপর তাদের মদিনা ফিরে যেতে দেয়া হয়। বেঁচে যাওয়া একমাত্র পুরুষ সদস্য ছিলেন আলি বিন হুসাইন। অসুস্থতার কারণে কাফেলা আক্রান্ত হওয়ার সময় তিনি লড়াই করতে পারেননি।

ফলাফল
শীয়া সুন্নি ফেরকার সৃষ্টি:
হুসাইনের এই রক্তপাতকে কিছু লোক কোনমতেই মেনে নিতে পারলো না। তারা বিদ্রোহী হলো। তারা ইয়াজিদ এবং রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠলো। এরা ইতিহাসে শীয়া নামে পরিচিত হলো। ১০ই মহররমই এই শিয়াদের জন্ম। মুসলমানরা দুটো ভাগে বিভক্ত হয়ে গেলো। একপক্ষ অসন্তুষ্ট হলেও ইয়াজিদের শাসন মেনে নিলো। তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নামে একটা নতুন মাযহাবের জন্ম দিলো। যারা এর কিছুই মানলো না তারা শীয়া-নামীয় আরেক নতুন মাযহাবের জন্ম দিলো। মাযহাবীয় এ বিভক্তি ধীরে ধীরে স্থায়ী রুপ নিলো, যা ইসলামী সমাজকে দুর্বল করে দিলো। কারবালার ঘটনা থেকেই মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন দেখা দিয়েছিল প্রকটভাবে। কারবালার ঘটনা থেকেই শীয়া মতবাদের সুত্রপাত হয়েছিল।
মদীনার উপর ধ্বংজজ্ঞ
ইয়াজিদের দ্বিতীয় মহাপাপটি ছিল পবিত্র মদীনা শহরে হামলা এবং মসজিদে নববীর অবমাননা ও তিন দিন ধরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে মদীনায় লুট-পাট আর গণহত্যা চালানোসহ গণ-ধর্ষণের অনুমতি দেয়া।শাবিস্তান বার্তা সংস্থার রিপোর্ট: ৬১ হিজরিতে কারবালার ময়দানে শহীদদের নেতা ইমাম হুসাইন(আ.)-এর হৃদয়বিদারক শাহাদাতের দুই বছর পর মদিনার মুসলমানরা ইয়াজিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করলে, তাদেরকে দমন করার জন্য ইয়াজিদ মদিনার হাররা অঞ্চলে একটি সেনাবাহিনী পাঠায়। ইয়াজিদ বাহিনীর সেনাপতি ছিল মুসলিম বিন উকবা, সে মদিনার আবাল বৃদ্ধ নারী, পুরুষ শিশুসহ সবাইকে হত্যা করে। আর এই হামলায় শুধুমাত্র যারা মদিনা থেকে পালিয়ে গিয়েছিল এবং যারা হযরত ইমাম জয়নুল আবেদীন(আ.)-এর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল তারা ব্যতীত সকলেই শাহাদাত বরণ করেছিল।
কাবার উপর হামলা
ইয়াজিদের তৃতীয় মহাপাপটি ছিল পবিত্র মক্কার কাবা ঘরে হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করে দেয়া। পাষণ্ড ইয়াজিদের বর্বর সেনারা (কারবালার মহাঅপরাধযজ্ঞ সম্পাদনের তিন বছর পর) পবিত্র মক্কা অবরোধ করে। তারা মহান আল্লাহর ঘরে তথা পবিত্র কাবায় জ্বলন্ত ন্যাপথালিনযুক্ত অগ্নি-গোলা নিক্ষেপ করে কাবা ঘর জ্বালিয়ে দেয়। ফলে মক্কার বিশিষ্ট সাহাবীদের কাছে ইয়াজিদের খোদাদ্রোহী চরিত্রের বিষয়টি আবারও স্পষ্ট হয়।
ঐতিহাসিক আল-ফাখরী, ফন ক্রেমার এবং ইবনুত তিকতাকার মতে ইয়াজিদের রাজত্বকাল তিনটি দুষ্কর্মের জন্য বিখ্যাত-প্রথম বছরে সে মহানবীর আদরের দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইনকে হত্যা করে, দ্বিতীয় বছরে মদীনাকে লুন্ঠন করে এবং তৃতীয় বছরে সে কাবার উপর হামলা করে।
পারস্যদের উত্থান
কারবালার যুদ্বের ফলে দুই দলের অন্তর্গত লড়াই অর্থাৎ পারস্য ও আরবের লড়াই ব্যপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করেছিল। সৈয়দ আমীর আলী বলেন, কারবালার হত্যাকাণ্ড এবং পারস্যে এক জাতীয় উদ্দীপনার জন্মদান করল। এই উদ্দীপনা পরে উমাইয়াদের ধ্বংস সাধনে আব্বাসীয় বংশধরদের বিশেষভাবে সহায়তা করেছিল।
পারস্যবাসীর মধ্যে এই সময়ে নতুন করে জাতীয়তাবোধ চিন্তাধারার উন্মেষ ঘটা শুরু হয়। যার প্রেক্ষিতে তারা খুরাসানের আবূ মুসলিমের বিদ্রোহ, আব্বাসীয়দের উত্থান সর্বশেষে মধ্যযুগীয় শিয়ার বিপ্লবের পটহ আরও সুদৃঢ় হতে থাকে।
ইয়াজিদে পতন
এই যুদ্বের মাধ্যমে মনে করা হয় যে, ইয়াজিদের জয় হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে এই যুদ্বের কারণে তার ঠিক ৬৬ বছর পরেই উমাইয়া বংশের উপর চূড়ান্তভাবে অভিশাপ নেমে আসে। তারা হয়ে যায় একেবারেই ছিন্নভিন্ন। সকল উমাইয়া খলীফার লাশ খুঁড়ে বের করা হয় আর তাদেরকে আগুনে পোড়ানো হয়। আর এমনিভাবে উমাইয়া বংশের লোকদের উপর শুরু হয় নির্মম অত্যাচার ও সীমাহীন নির্যাতন। অন্যদিকে হুসায়ন(রাঃ)কে শহীদ হিসেবে আখ্যায়িত করে ইতিহাসে তাঁকে এক বিশেষ ধরনের মর্যাদা প্রদান করা হচ্ছে। আর তাঁর জীবনাদর্শকে লালায়িত করে অনেক সময়ে মুসলিম উম্মাহকে শোষণের বিরুদ্বে সোচ্চার হওয়ার ব্যাপারে আহবান জানানো হয়।  আর যখনই ইয়াজিদ কাবা ঘরে হামলা চালায় এমতাবস্থায় সে মারা যায়। 

প্রশ্নঃ শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী(রঃ) এর হাদীশাস্ত্রে কি অবদান রেখেছেন তাঁর আলোচনা কর।


শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী(রঃ) এই ভারতীয় উপমহাদেশের একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুসলিম চিন্তাবিদ,আলিম,মুহাদ্দিস এবং মুফাসসিরীন হিসেবে বিশেষ খ্যাতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন। একদিকে যেমন মুঘল সম্রাজ্যের পতন ঘটছে ঠিক তেমনিভাবে চারিদিকে মুসলিমগণ বিভিন্ন ধরনের অশিক্ষা,কুশিক্ষা,কুসংস...্কারসহ সাথে নিমজ্জিত হচ্ছিল এবং সেই সাথে হিন্দু,শিখ,মারাঠা, ইংরেজ জাতি একে একে সকল জাতি যখন এই উপমহাদেশের মুসলিমগণের উপর অত্যাচার-নির্যাতন চালানো শুরু করে ঠিক তখন শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী(রঃ) এর ন্যায় মহাপুরুষের আবির্ভাব এই উপমহাদেশে ঘটল। তিনি এই উপমহাদেশের মুসলিমগণকে সকল প্রকারের কুসংস্কার ও বিজাতীয়দের ধ্যান-ধারনা থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হন। তিনি মুসলিমগণের বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাবলী কুরআন-হাদীসের সাহায্যে প্রণয়ন করতে থাকেন। তিনি আল-কুরআনের অনুবাদ সর্বপ্রথম এই ভারতীয় উপমহাদেশে নিয়ে আসেন। তার মাধ্যমে এই উপমহাদেশে হাদীসশাস্ত্রের বিশেষ প্রসারত লাভ করে। তিনিই সর্বপ্রথম মহান ব্যক্তিত্ব যিনি কুরানের আলোকে সামাজিক,অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক চিন্তা-ধারার সমাধান প্রদান করেন।তার এই দর্শন কার্যকর না হলে এই উপমহাদেশে ইংরেজ হুকুমত আরও বিশেষভাবে প্রসারতা লাভ করত। তার গ্রন্থাবলী ইতিহাসে অমর হয়ে আছে।
জন্ম ও বংশ
হিজরীর ১১১৪ সালে মোতাবেক ১৭০৩ খৃষ্টাব্দে দিল্লীর এক ধর্মীয় সম্ভ্রান্ত পরিবারে তার জন্ম হয়।তার প্রকৃত নাম ছিল আবুল ফুয়াদ আহমদ কুতুবউদ্দীন। ওয়ালী উল্লাহ ছিল তার উপনাম।তার পিতামহ ছিলেন ওয়াজিউদ্দিন যিনি সম্রাট শাহজাহানের সময় সেনাবাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তার পিতার নাম ছিল  শাহ আব্দুর রহীম। তিনি সেই সময়কারের একজন বিখ্যাত আলিম ছিলেন এবং তিনি ফাতওয়ায়ে আলমগীরির একজন অন্যতম বিচারক ছিলেন। তিনি মুজাদ্দিদে আলফে সানী তথা উমর(রাঃ) এর  বংশধর ছিলেন।তিনিএকজন যুগশ্রেষ্ঠ চিন্তানায়ক মুজাদ্দিদ-ই-জামান ছিলেন এবং তাকে ইমামুল হিন্দ বা শায়খুল হিন্দ বলা হয়।
শিক্ষা জীবন ও শিক্ষকতা
৫ বছর বয়সে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভের জন্য মক্তবে প্রেরিত হন। সাত বছর বয়সে তিনি সমগ্র কুরআন হিফয করতে সক্ষম হন।অতঃপর তিনি তার পিতার কাছে থেকে আরবী ও ফার্সী ভাষার শিক্ষা তিনি অর্জন করেছিলেন।তিনি মাত্র ১৫ বছর বয়সে তার পিতার কাছে থেকে কুরআন,হাদীস,তাফসীর,ফিকহ,উসূল ফিখ,আরবী ব্যাকরণ প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেছিলেন। তিনি তার পিতার কাছে থেকে ইলমে তাসাউফ অর্জন করেছিলেন। অতঃপর তার পিতা ১৭১৯ সালে মৃত্যুবরণ করলে তিনি তার পিতার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা তথা মাদ্রাসাতে রহমানিয়াতে কিছুদিন শিক্ষকতা করেছিলেন। এখানে অধ্যাপনাকালে তিনি জ্ঞান সাধনায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে তিনি দক্ষতা অর্জন করেছিলেন।১৭৩০ সালে তিনি হাজ্জ পালনে জন্য মক্কা ও মদীনায় গমন করেন এবং সেখানে গিয়ে তিনি জ্ঞান ভাল করেন। সেখানে তিনি আবূ তাহির মুহাম্মদ বিন ইবরাহীম মাদানী এবং আব্দুল্লাহ বিন শায়খ সুলায়মানের কাছে থেকে হাদীসশাস্ত্র এবং শায়খ তাজুদ্দীন হানাফী,শায়খ আলাকী মাক্কীর কাছে থেকে তিনি ইসলামী বিষয়ে তিনি বিশেষ শিক্ষা অর্জন করে তিনি১৭৩২ মতান্তরে ১৭৩৩ সালে তিনি স্বদেশে ফিরে আসেন এবং স্বপ্নে দেখেন যে, তিনি হাসান(রাঃ) ও হুসাইন(রাঃ) এর কাছে থেকে কলম উপহার পাচ্ছে। তখন সেখানকার আলিমগণ এই অভমত দেন যে, তিনি অতি শীঘ্রই তিনি উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ আলিম হিসেবে খ্যাতি লাভ করবেন।
তিনি প্রায় দুইশোর অধিক গ্রন্থ রচনা করেন। এগুলোর ভিতর কেবলমাত্র ৩৪টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। অনেক পাণ্ডুলিপি ব্রিটিস কর্তৃক আক্রমণের মাদ্রাসা আক্রমনের সময় নষ্ট হয়ে যায়। তার গ্রন্থাবলীর ভিতর হুজ্জাতুল বালিগা ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ যেখানে তার চিন্তা-ধারার বিকাশ ঘটেছিল। এছাড়া ফাতহুর রহমান, আলখিলাফাতুল খলীফা, আল ফাউযুল কবীর, আল কাউলুল জামীল,খয়ের কাছীর, ফাতহুল খাবীর সর্ববিখ্যাত কিতাব।
তার কর্মকে ছয় ভাগে ভাগ করা যায় যা হল কুরআন,হাদীস,ফিকাহ,তাসাউফ,মুসলিম দর্শন ও শিয়া-সুন্নী বিরোধ নিরসন।
 হাদীসশাস্ত্র তাঁর অবদান
শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস রহ. বর্ণনা করেন, দীর্ঘ বার বছর পর্যন্ত এ বিষয়ে গবেষণা করার পর আমার মন আমাকে মক্কা-মদিনার দিকে সফর করার জন্য উদ্ভুদ্ধ করল। আমি আমার মনের তাকাযায় ১১৪৩ হিজরীতে পবিত্র মক্কা শরিফ চলে যাই এবং সেখানে দু বছর অবস্থান করে প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস শায়খ আবু তাহির রহ. এবং অন্যান্য আলেমগণের নিকট হাদীস চর্চা করি। এভাবে তিনি তাসাউফের ক্ষেত্রেও কঠিন মেহনত করে শায়খ আবু তাহির রহ. থেকে তাসাউফের খিরকা লাভ করেন। অতপর ১১৪৫ হিজরীতে দিল্লিতে ফিরে এসে তার কাঙ্ক্ষিত সংস্কার আন্দোলন শুরু করেন। সংস্কার আন্দোলনের জন্য ফিকাহ ও ইলমে হাদীস শাস্ত্রে স্বাধীনভাবে ইজতেহাদ করার যোগ্যতা থাকা আবশ্যক। মক্কা-মদিনায় অবস্থান কালে শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস রহ. এ বিষয়ে পরিপূর্ণ যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হন। তার হাদীসসুন্নাহের কর্মসূচীকে কয়েকটি ধারায় বিভক্ত করা যায়।
১। মুসলিম জাতির আকীদার সংশোধন ও কুরআনের-সুন্নাহের প্রতি আহবান:
প্রকৃতপক্ষে শুধুমাত্র সংস্থার আন্দোলন দ্বারা কোন দেশের মানুষের আত্নশুদ্ধি করা অত্যান্ত কঠিন ব্যপার । এর জন্য প্রয়োজন আম্বিয়ায়ে কেরামের সংস্কার ধারা ঠিক রেখে দ্বীনের পরিপূর্ণ জাগরণ সৃষ্টি করা। তৎকালীন সম্রাট আকবরের প্রবর্তিত দ্বীনে এলাহীর উদার নীতির ফলে মুসলমানদের ঈমান-আকীদার ক্ষেত্রে যে বিশৃঙ্ক্ষলা বিরাজ করছিল তা সকলেরই জানা। সহজ-সরল মুসলিম জাতি বিভিন্ন ভাবধারা ও দর্শনপন্থিদের সাথে উঠা-বসা, চলা-ফেরার কারণে, বিশেষ করে সম্রাট আকবরের আমলে হিন্দু সাংস্কৃতির একক প্রাধান্যতার কারণে ভারতবর্ষে শুধুমাত্র নামধারী মুসলমানেরই অস্তিত্ত্ব বাকি ছিল। ইসলামী ধ্যান-ধারনা, ইসলামী আকীদা, ইসলামী অনুশাষনের সাথে তাদের পার্থক্য ছিল আকাশ পাতালের ন্যায়।
শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস রহ. এ সত্যকে উপলব্দি করতে পেরে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, এ বিপর্যয় থেকে মুসলিম জাতীকে উদ্ধার করতে হলে ব্যাপকভাবে কুরআনের দাওয়াত প্রচার করতে হবে। মহাগ্রন্থ আল কুরআন সার্বজনিন ও আন্তর্জাতিক। যে কোন যুগে যে কোন স্থানে এর বৈপ্লবিক নীতিকে অনুসরণ করলে ইসলামের স্বর্ণ যুগের (সাহাবাদের যুগের) ন্যায় নব জাগরণের সূচনা ঘটবে। এ কাজকে তিনি আঞ্জাম দিতে সর্বপ্রথম তিনি ফার্সী ভাষায় কুরআনের অনুবাদ করেন যার নাম করন করেন, “ফুতুহুর রহমান” করে। শাহ্ ছাহেব কুরআন ও হাদীছের প্রচার ও প্রসারে নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেন। তার প্রথম কর্মসূচী ছিল মানুষকে কুরআনের পথে আহবান জানানো। কারণ তৎকালীন সময়ের মানুষেরা শিরক ও বিদ‘আতের সাগরে এমনভাবে হাবুডুবু খাচ্ছিল যে, হাদীছের উপর মানুষের বিশ্বাস ঠুনকো হয়ে পড়েছিল। ভারতীয় উপমহাদেশে নিয়মতান্ত্রিকভাবে তিনিই প্রথম হাদীছের দারস চালু করেন।
f২.  জনসাধরণের মাঝে হাদীস ও সুন্নাহ ব্যাপকভাবে প্রচার ও প্রসার ঘটানো।
এ বিষয়ে আমাদের জানতে হলে প্রথমেই আমাদের জানতে হবে যে, ইসলামের মধ্যে হাদীসের গুরুত্ত্ব কতটুকুন। হাদীসের প্রচার ও তার সংরক্ষণ কেন প্রয়োজন? হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞ থাকা বা অবহেলা করলে ক্ষতি কী? প্রকৃতপক্ষে হাদীস হল উম্মতের ঈমান-আকীদার জন্য মান দন্ড সরূপ। শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. এর প্রথম কর্মসূচী ছিল আল কুরআনের প্রতি দাওয়াত। এই কাজের জন্য হাদীসের জন্য কতটুকুন তা আর আলোচনার অপেক্ষা রাখে না। তার কারণ হল পবিত্র কুরআনের ব্যাখাই যে, হাদীসে নববী । যেমন কুরআনের মাঝে আছে, اسوة حسنة রাসূলুল্লাহ সাল্ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাঝে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। ভারতের মাঝে যে শিরক-বিদআতের সয়লাব দেখা দিয়েছিল। তার এও একটা কারণ ছিল যে, হাদীসে নববীর প্রতি অবজ্ঞা ও অবহেলা প্রদর্শন করা। রাসূলে কারীম সাল্ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেন, যখন কোন সম্প্রদায় একটি বিদআতে লিপ্ত হয়, তখন তাদের থেকে একটি সুন্নত উঠিয়ে নেয়া হয়। (মিশকাত) শাহ সাহেব সমাজ থেকে শিরক বিদআতের অন্ধকারকে দূর করার লক্ষ্যে সুন্নতে নববীর প্রচার প্রসার মনোযোগি হলেন। মূলত তিনিই প্রথম মানুষ যিনি ভারত উপমহাদেশে সর্ব প্রথম হাদীসের দরস চালু করেন।
এছাড়া ফিকাহ ও হাদীসের মাঝে সমণ্বয়: অনেক কাল আগে থেকেই মুসলমানগণ ফিকাহ ও হাদীস নিয়ে চর্চা করে আসছেন। তবে তা ছিল নিতান্তই বিচ্ছিন্ন। শাহ সাহেবই সর্ব প্রথম ইলমে হাদীস ও ইলমে ফিকার মাঝে সমণ্বয় ঘটান।
২। যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যার আলোকে আল কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন ও সুন্নতে নববীর রহস্য উদঘাটনঃ
 অনেকের ধারণা যে, শরিয়তের কোন হুকুম আহকাম কোন উদ্দেশ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। কাজের সাথে তার কোন প্রকার ফলাফলের সম্পর্ক নেই। এই ধারণা ভুল। ইজমা, কিয়াস ও খাইরূল কুরুন উক্ত মতবাদকে খন্ডন করেন যেমন, নামায। এই হুকুমটি আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করা ও তার কাছে মুনাজাত করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গরীব ও অসহায়দের দুখ দূর্শদশা ও অভাব অনটনকে অনুভব করার জন্য আল্লাহ তায়ালা যাকাতের জন্য বিধান দান করেছেন। মানুষের অন্তরকে কুপ্রবৃত্তির প্রভাব থেকে দূর করার জন্য আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য রোযাকে ফরয করে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালার মহা গ্রন্হ আল কুরআনের প্রচার প্রসার ও সুজলা সুফলা সুন্দর এই পৃথিবী থেকে সকল প্রকার ফেতনা ফাসাদ দূর করার লক্ষ্যে আল্লাহ তায়ালা জিহাদকে ফরয করেছেন। অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদেশ নিষেধের মাঝেও অনেক রহস্য লুকায়িত রয়েছে। যেমন যোহরের পূর্বে চার রাকাত নামায সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ঐ সময় আকাশের দরজা উন্মুক্ত করা হয়, আমার ইচ্ছে হয় এ সময় যেন আমার নেক আমল উর্ধোরহন হয়। এভাবেই প্রত্যেক হুকুমের মাঝেই কোন না কোন রহস্য লুকায়িত রয়েছে। এক শ্রেণীর মানুষ মনে করে যে, ইসলামী হুকুম আহকাম যুক্তির আলোকে বিশ্লেষণ করা এবং এগুলোর রহস্য উদঘাটন করা ইসলামের জন্য ক্ষতিকারক। শাহ সাহেব বলেন যে, এই ধারণা ভুল। কারণ ইসলামী হুকুম আহকামকে যুক্তির আলোকে বিশ্লেষণ করলে কোন প্রকার ক্ষতি নয় বরং উপকার হবে। যেমন আমলের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। এছাড়াও ফিকহি ইজতেহাদের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি হবে। এদিকে লক্ষ্য করেই শাহ সাহেব এ কাজ হাদীসশাস্ত্রে এক বিশেষ স্থান দখল করতে সক্ষম হয়েছে।
৩। হাদিসের আলোকে  উম্মতে মুহাম্মাদীর সর্বস্তরের জনগণের প্রতি সংশোধনের আহবান:
শাহ সাহেব হাদীসের দরস ও তাদরিসের পাশা-পাশি সমাজের সকল প্রকার অনৈতিক কর্ম কাণ্ড সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে অবগত ছিলেন। তিনি সমাজের এহেন সকাল প্রকার রোগ থেকে মুক্তির জন্য সমাজের সর্বস্তরের জনগণের প্রতি বিশেষ আহবান জানান।
৪। শিক্ষা ও তারবিয়্যাতের মাধ্যমে যুগ্য উত্তরসূরী তৈরী করা।
তিনি তাঁর ছাত্রদের মাঝে অত্যন্ত চমৎকারভাবে হাদিসের দরস(শিক্ষা) দিতেম।যাতে করে তাঁর মৃত্যুর পরেও যাতে করে হাদিসের ধারক ও বাহকেরা যেন এই অঞ্চল হতে বিলীন হয়ে না যায়। এরই প্রতি ফলন হল শাহ আব্দুল আজীজ রহ. শাহ মুহাম্মাদ ইসহাক রহ. শাহ মুহাম্মাদ বেলায়েত আলী রহ. সৈয়দ আহমাদ বেরলভী রহ. হযরত শাইখুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দি রহ. শাইখুল ইসলাম হযরত হুসাইন আহমাদ মাদানি রহ. প্রমুখ।
৫। সমকালীন রাজনৈতিক অস্তিরতা ও দুর্যোগের কবল থেকে মুসলিম জাতিকে উদ্ধার করা:
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, সম্রাট আলমগীরের মৃত্যুর পর ভারতে যে রাজনৈতিক বিশৃংখলা দেখা দিয়েছিল, তা মুসলমানদের জন্য খুবই বিপদজনক ছিল। শাহ সাহবে মুসলিম জাতিকে এ দুর্যোগ থেকে উদ্ধারের লক্ষ্যে জনসাধরণের মাঝে হাদিসের শিক্ষা প্রসারের কর্মসূচী গ্রহণ করেন। যাতে করে মুসলিমগণ হাদিসের চর্চ্চার মাধ্যমে এই বিষয়টি স্পষ্টভাবে উপলব্দ্বি করতে পারে যে, কুফরী সরকারের কোন আনুগত্য নেই। এই অঞ্চল এখন দারুল হারব। তাই হাদীসের আলোকে তিনি এই ব্যাখ্যা প্রদান করতেন যে, এই কুফরী শাসিত অঞ্চল এখন দারুল হারব তাই দারুল ইসলামে তা পরিণত করার জন্য আমাদের একযোগে কাজ করে যেতে হবে।
৬। হাদীসের কিতাবসমুহের স্তরবিভাগ
হাদীসের কিতাবসমূহকে মোটামুটিভাবে পাঁচটি স্তরে বা তাবাকায় ভাগ করা হয়েছে। শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী (রঃ) তাঁর ‘হুজ্জাতুল্লাহহিল বালিগা’ নামক কিতাবে এরূপ পাঁচ স্তরে ভাগ করেছেন।
প্রথম স্তর:এ স্তরের কিতাবসমূহের কেবল সাহীহ হাদিসই রয়েছে। এ স্তরের কিতাব মাত্র তিনটিঃ মুওয়াত্তা ইমাম মালিক, বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। সকল হাদীস বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে একমত যে, এ তিনটি কিতাবের সমস্ত হাদীসই নিশ্চিতরূপে সহীহ।
দ্বিতীয় স্তর:এ স্তরের কিতাবসমূহ প্রথম স্তরের খুব কাছাকাছি। এ স্তরের কিতাবে সাধারনতঃ সহীহ ও হাসান হাদীসই রয়েছে। যঈফ হাদীস এতে খুব কম আছে। নাসাঈ শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ ও তিরমিযী শরীফ এ স্তরের কিতাব। সুনান দারিমী, সুনান ইবন মাজা এবং শাহ ও ওয়ালি উল্লাহ (রঃ)-এর মতে মুসনাদ ইমাম আহমেদকেও এ স্তরে শামিল করা যেতে পারে। এই দুই স্তরের কিতাবের উপরই সকল মাজহাবের ফাকীহগণ নির্ভর করে থাকেন।
তৃতীয় স্তর:এ স্তরের কিতাবে সহীহ, হাসান, যঈফ, মা’রুফ ও মুনকার সকল প্রকারের হাদীসই রয়েছে। মুসনাদ আবী ইয়া’লা, মুসনাদ আবদুর রাযযাক, বায়হাকী, তাহাবী ও তাবারানী (রঃ)-এর কিতাবসমূহের এ স্তরেরই অন্তর্ভুক্ত।
চতুর্থ স্তর:হাদীস বিশেষজ্ঞগণের বাছাই ব্যাতিত এ সকল কিতাবের হাদীস গ্রহণ করা হয় না। এ স্তরের কিতাবসমুহে সাধারনতঃ যইফ হাদীসই রয়েছে। ইবন হিব্বানের কিতাবুয যুআফা, ইবনুল-আছীরের কামিল ও খতীব বাগদাদী, আবূ নুআয়ম-এর কিতাবসমূহ এই স্তরের কিতাব।
পঞ্চম স্তর:উপরের স্তরেগুলোতে যে সকল কিতাবের স্থান নেই সে সকল কিতাবই এ স্তরের কিতাব।
অর্থাৎএমনিভাবে পরবর্তীতে তিনি মুহাদ্দিসদের জন্য পথ উন্মুক্ত করে যান যে, কীভাবে করে হাদীসের শিক্ষা মুহাদ্দিস ছাত্রদের প্রদান কতে হবে আর এদিক হতে তিনি একটি হাদীসশাস্ত্র মাইলফলক স্থাপন করে যান।
গ্রন্থাবলীঃ
হাদীসের ক্ষেত্রে হযরত শাহ সাহেবের অনেক অবদান রয়েছে। তার লিখিত হাদীস গ্রন্থসমূহ থেকে উল্লেখযুগ্য কয়েকটি: মুছাফ্ফা, মুছাওয়া, শরহে তরজমায়ে সহীহ বুখারী, আল-ফসলুল মুবীন মিন হাদীসিন নাবিয়্যিল আমীন।
ইন্তিকাল: ১১৭৬ হিজরীর ২৯ শে মুহাররম যুহরের সময় হযরত শাহ সাহেব এই অস্থায়ী পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে চিরস্থায়ী ধরার প্রতি যাত্রা শুরু করেন। মৃত্যুর সময় তিনার বয়স হয়েছিল ৬১ বৎসর। মৃত্যুর সময় তিনি চার জন যুগ্য সন্তান রেখে যান । তারা হলেন, শাহ আব্দুল আযীয, শাহ বদিউদ্দীন, শাহ আব্দুল কাদির, শাহ আব্দুল গণী।
রচনাবলী: বিশেষজ্ঞদের মতে তার রচনাবলী দুইশতের অধিক। হাদীস, তাফসীর, ফিকাহ, উসুলে ফিকাহ, রাষ্ট্রনীতি, তাসাউফ নির্বিশেষে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই তার

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...