Thursday, 26 December 2013

মানসিক ভাবে আপনি যথেষ্ট বুদ্ধিমান একজন---- কিভাবে বুঝবেন?


কিছু মানুষ জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে, কাজে কর্মে অন্যদের চেয়ে বেশি সফলতা পায় কিভাবে? IQ এবং কর্মপদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হলেও এটাই সব নয়।আমাদের মানসিক বুদ্ধিমত্তা – আমরা কিভাবে আমাদের ইমোশনকে নিয়ন্ত্রন করি নিজের মধ্যে এবং অপরের সাথে – এই ব্যাপারটিও অন্যতম গুরুত্ব বহন করে জীবনে আমাদের সফলতা নির্ধারণে।আপনি কতটা আত্মবিশ্বাসী,লক্ষ্য অর্জনে আপনি কতটা যত্নবান, পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে আপনি কতটা সক্ষম,-- এ সব কিছুই একজনের মানসিক বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণের মাপকাঠি ।

আপনি মানসিক ভাবে কতটা পরিপক্ক তা নির্ধারণে অনেকগুলো নির্ধারক আছে, তার মধ্যে ১০ টি নির্ণায়ক উল্লেখপূর্বক সংক্ষেপে আলোচনা করা হল--


১* অচেনা মানুষের ব্যাপারে জানতে আগ্রহী---- 
আপনি নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে, তাদের নানা প্রশ্ন করতে আগ্রহ বোধ করেন ? যদি হ্যাঁ হয়ে থাকে তাহলে হাসুন কারন মানসিক পরিপক্কতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আপনার মধ্যে আছে । 

২* আপনার মধ্যে নেত্রীত্তের গুণাবলী বিদ্যমান 
সাইকলোজিস্ট ড্যানিয়েল গল ম্যান এর মতে, যাদের মধ্যে নেতৃত্তের গুণাবলী আছে তারা মানসিক ভাবে অনেক বুদ্ধিমান ও পরিপক্ক হয়ে থাকেন। মেধা, নির্দিষ্ট কর্মপদ্ধতি, জয়ের আকাঙ্খা, যাদের মধ্যে বিদ্যমান তারা নেতৃত্বগুন সম্পন্ন হয়ে থাকেন ।

৩* শক্তিশালী দিক ও দুর্বলতা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল---- 
মানসিক ভাবে পরিপক্ক ব্যাক্তি নিজের শক্তি ও দুর্বলতা সম্পর্কে জানেন এবং নিজের শক্তির জায়গাগুলো সঠিক ভাবে কাজে লাগিয়ে লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যেতে থাকেন।

৪* একজন মনোযোগী শ্রোতা---
 মানসিক ভাবে পরিপক্ক একজন মানুষ আপনার কাজ সম্পর্কে সচেতন হন এবং একি সাথে একজন মনোযোগী শ্রোতা হয়ে থাকেন। 

৫* যখন মন খারাপ হয় তখন মানসিক ভাবে যথেষ্ট পরিপক্ক একজন ব্যাক্তি বুঝতে পারেন ঠিক কি কারনে তার মন খারাপ হল। 

৬* সবসময় একজন ভালো ও নীতিবান মানুষ হওয়ার চেষ্টা করেন
একজন মানসিক পরিপক্ক ব্যাক্তি সবসময় অপরের কল্যাণে এগিয়ে যেতে ভালোবাসে, সবসময় নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট থাকে। 

৭* মানুষের মুখাব্যাক্তি পরতে পারদর্শী------ 
আপনি যদি আপনার সামনের বক্তার মুখাব্যক্তি দেখে বলে দিতে পারেন তার মনের ভেতর কি কাজ করছে তাহলে ভাই আপনি সেই লেভেলের মানসিক পরিপক্ক একজন ব্যক্তি। 

৮* ভেঙ্গে পরলে কিভাবে আবার মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে হয় তা জানেন --- 
মানসিক ভাবে পরিপক্ক একজন ব্যাক্তি কোন ব্যর্থতায় ভেঙ্গে পরলে আবার মাথা উচু করে দাঁড়াবার সক্ষমতা রাখেন। 

৯* কে ভাল কে খারাপ তা নির্ণয়ে যথেষ্ট পারদর্শী হলে আপনি মানসিক ভাবে যথেষ্ট পরিপক্ক একজন ব্যাক্তি

১০* নিজস্ব চিন্তা ধারায় বিশ্বাসী-----
 একজন মানসিক পরিপক্ক ব্যাক্তি সবসময় নিজের চিন্তাধারায় বিশ্বাস রাখেন, নিজের সিদ্ধান্তে কাজ করতে সবসময় সচেষ্ট থাকেন । আর এটা একজন মানসিক বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যাক্তির অন্যতম গুণ

Monday, 7 October 2013

বিদ্যুৎ সমস্যায় বিপর্যস্ত বাংলাদেশঃ ইসলামের সমাধান


ভূমিকাঃ


সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে বিদ্যুতের সমস্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। সরকার দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করলেও জনগণের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সংযোগ নিশ্চিত করতে পারে নি। বরং উল্টো বিদ্যুতের সমস্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। এমনকি এই সরকারের আমলে নতুন ৫১টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেও বিদ্যুত ঘাটতির কোন দফারফা করা যায়নি। যদিও প্রতিবছর এই বিদ্যুৎ খাতে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি গুণতে হচ্ছে। আর এই পয়সাগুলো যাচ্ছে জনগণের পকেট থেকে। ইনশাল্লাহ আমি এই আর্টিকেলে বর্তমান বিদ্যুৎ সমস্যার ওপর কিছুটা আলোকপাত করার চেষ্টা করবো এবং সেই সাথে বিদ্যুৎ সমস্যার ইসলাম ভিত্তিক সমাধানও উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো। 

বিদ্যুৎ সমস্যার বর্তমান বাস্তবতা


বর্তমান আওয়ামী নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসে ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে। সেসময়ে পিডিপির জেনারেশন রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে তখন পিক আওারে বিদ্যুতের উদপাদন হচ্ছিল ৩৬০০ থেকে ৩৮০০ মেগাওয়াট। অন্যদিকে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৪৫০০ মেগাওয়াট। আবার ২০০৯ সালের জুন মাসে পিডিপির রিপোর্ট থেকে জানা যে তখন বিদ্যুতের উদপাদন ছিল ৩৮০১ মেগাওয়াট আর এর বিপরীতে চাহিদা ছিল ৪৫০০ মেগাওয়াট। অর্থাৎ, সরকারী হিসেবে ঘাটতি থেকে যায় প্রায় ৭০০ মেগাওয়াটের মত। যদিও ঘাটতি প্রকৃতপক্ষে সরকারী হিসেবের চাইতে আরো অনেক বেশী। এই একই রিপোর্ট বলছে যে গ্যাস সংকটের কারণে ৩৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদিত হয়েছে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর কারিগরি ত্রুটির কারণে আরও ৭০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপন্ন হয়েছে। তখন আওয়ামীলীগ সরকার বললো যে তাদের পক্ষে বিদ্যুৎ সমস্যার দ্রুত সমাধান করা সম্ভব নয়। কারণ গ্যাস নেই। আর ত্রুটিপূর্ণ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও সারিয়ে তোলার কোন বেবস্থাও তারা নিলো না। বরং সরকার সেসময় বললো বিদ্যুৎ সমস্যার কুইক সমাধান করার জন্য এখন নাকি ৩-৬ মাসের মধ্যে স্থাপনযোগ্য তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। তাও আবার ভাড়ায়। এতে নাকি বিদ্যুৎ সমস্যার কুইক সমাধান হবে। তাই এর নাম দিয়েছে ওরা কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কিন্তু লক্কর ঝক্কর মার্কা পুরনো যন্ত্রপাতি নিয়ে শুরু হওয়া সেই কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো এখনো দেশের বিদ্যুৎ সমস্যার কোন সমাধান করতে পারে নাই। বরং এই সমস্যাটিকে আরো বেশী জটিলতার আবর্তে নিক্ষেপ করেছে।

বর্তমানে দেশে এরকম ২৪টি রেন্টাল   (ভাড়াভিত্তিক)  , ১৮টি কুইক রেন্টাল   (দ্রুতভাড়া) বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে।   অথচ এই ভাড়াটে কোম্পানিগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কখনোই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে নাই। অথচ এদেরকে ঠিকই ভর্তুকি দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছে এবং এদের পেছনে এখনো কোটি কোটি টাকা ঢালা হচ্ছে। একটি উধাহরণ দিলেই বিষয়টা পরিষ্কার হবে। যেমন গত বছরের এক হিসেব থেকে দেখা যায় যে গত বছরের ২১শে এপ্রিল এই কোম্পানিগুলো তাদের মোট উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে প্রায় ৩০০০ মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। যার মধ্যে গ্যাস সংকটের জন্য ৩২৩ মেগাওয়াট, ফার্নেস তেলের অভাবে ১৪২৪ মেগাওয়াট এবং পানির অভাবে ৭১ মেগাওয়াট এবং যান্ত্রিক ও কারিগরি ত্রুটির কারণে ১১৭৬ মেগাওয়াট। এছাড়া পিডিপির ওয়েবসাইট থেকে দেখা যায় যে গড়ে প্রতিদিন ১৩০০-১৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের কমতি থেকেই যাচ্ছে কারণ এই সব কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে তেল সরবরাহ করা যাচ্ছে না। অথচ এদেরকে বসিয়ে বসিয়ে ঠিকই টাঁকা দিতে হচ্ছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে এইসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরও বিদ্যুতের সমস্যা থেকেই গেলো।

এখন আসি আমাদের আর্থিক ক্ষতি প্রসঙ্গে। কুইক রেন্টাল চুক্তিতে বলাই আছে যে এই কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে দু ধরণের মূল্য পরিশোধ করতে হবে। একটি হচ্ছে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যেটাকে বলা হয় এনার্জি প্রাইস। আরেকটি হচ্ছে একটি একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে সে অনুযায়ী প্রতি মাসে তাকে ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। একে বলা হচ্ছে "ক্যাপাসিটি চার্জ  "  । অর্থাৎ একটি কোম্পানি যত ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে সে অনুযায়ী সে এর মূল্য পাবে। কিন্তু এছাড়াও তাকে "ক্যাপাসিটি চার্জ  "   পে করতে হবে তার উৎপাদন ক্ষমতা অনুযায়ী। এবং এর হিসেবের সাথে উৎপন্ন বিদ্যুতের কোন সম্পর্ক নেই। এখন যদি কোন কোম্পানি তেল, গ্যাস বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে নাও পারে তবু সে এনার্জি প্রাইস না পেলেও "ক্যাপাসিটি চার্জ  "   পাবে। ধরুন কোন একটি কুইক রেন্টাল কোম্পানির উতপাদন ক্ষমতা ৫০ মেগাওয়াট। এখন প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের জন্য এখানে ১৫.৯ ডলার করে ভাড়া অর্থাৎ  "ক্যাপাসিটি চার্জ  "   দিতে হয়। এখন যদি কোন কারণে এই কেন্দ্রটি প্রডাকশনে না যেতে পারে তারপরও প্রতি ইউনিট হিসেবে ৫০ মেগাওয়াটের জন্য প্রায় ৬ কোটি টাকা ভাড়া অর্থাৎ লোকসান গুনতে হবে।

কারণ চুক্তিতে এ বিষয়ে বলা হয়েছে: 

"কোন কারণে বিপিসি যদি ভাড়া বিদ্যুৎ কোম্পানিকে জ্বালানি তেল সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে কোম্পানি বিদ্যুতের দামের রেন্টাল বা ভাড়ার অংশটুকু পাবে। "(আর্টিক্যাল ২৬, তরল জ্বালানি সরবরাহ) “Any failure of BPC to supply and deliver liquid fuel to the Rental Power Company shall entitle the Company to receive the Rent part of the tariff…” (Article 26 Delivery and Supply of Liquid Fuel) 

অর্থাৎ, জনগণ বিদ্যুৎ পাবে না কিন্তু তাদের পকেটের পয়সা ঠিকই কুইক রেন্টাল কোম্পানির মালিকের পকেটে গিয়ে ঢুকবে। এবং এটাই হচ্ছে, চিন্তা করুন কি ধরণের নগ্ন দুর্নীতি। এমনিতেই গত তিন বছরে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানী খাতে সরকার ভর্তুকি দিয়েছে ৩৩ হাজার ৭৫৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এর জন্য দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম মোট ৬ বার বাড়ানো হলেও বিদ্যুৎ সমস্যা কমার বদলে আরও বেড়েছে। 

কিন্তু এই সরকারের কাণ্ড দেখুন কুইক রেন্টাল দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের বিদ্যুৎ এবং অর্থনীতিতে বিপর্যয় সৃষ্টি করার পর তারা এখন দেশের ১৫টি পুরানো বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২৬টি ইউনিট সংস্কারের কথা বলেছে যা থেকে ১৬০৯ মেগাওয়াট বাড়তি বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এবং এটা কুইক রেন্টাল থেকে পাওয়া ১৩৩৫ মেগাওয়াটের চেয়ে ২৭৪ মেগাওয়াট বেশি। অথচ এই কাজটি আগেই করা যেতো। কিন্তু সরকার এটি করেনি। কারণ তাহলে কুইক রেন্টালের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করার সুযোগ মিলতো না। তাছাড়া গ্যাস সংকটের কথা এই সরকার বারবার বলেছে। কিন্তু এই সংকট সমাধান করার জন্য কোনধরণের বাস্তব পদক্ষেপ নেয়নি। এরা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে বসিয়ে রেখেছে টাকার অভাবের কথা বলে। যার কারণে বাপেক্স নতুন গ্যাস কূপ আবিষ্কার করা বা পুরানোগুলো সংস্কার করে সেগুলোকে প্রোডাকশনে পাঠাতে পারেনি। অথচ ঠিকই কিন্তু সরকার জ্বালানী খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। জনগণের ওপর এর বোঝা চাপিয়েছে। কুইক রেন্টালের মালিকদের টাকা দেয়া সময় সরকারের কাছে টাকা ঠিকই থাকে কিন্তু বাপেক্সকে দেয়ার জন্য কোন টাকা ছিল না। বাপেক্সকে যদি একেবারে শুরু থেকেই কাজে লাগানো হত তাহলে আমরা ৩০০ মিলিওন ঘনফুট গ্যাস পেতাম নতুন এবং অর্ধপরিতেক্ত গ্যাসকূপগুলো থেকে। কিন্তু সরকার এটা না করে বরং এর উল্টোটা করলো। দেশীয় কোম্পানিকে বসিয়ে রেখে কথিত ‘ফার্স্ট ট্র্যাক’ প্রোগ্রামের আওতায় গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিদেশী কোম্পানিগুলোর কাছে টেন্ডার আহ্বান করলো। তারপর আরেক নাটক। নির্বাচিত কোম্পানির মামলা মকাদ্দমা সংক্রান্ত ঝামেলা বা কখনো নির্বাচিত কোম্পানির কাজ করতে অনীহা প্রকাশ সব মিলিয়ে প্রায় তিন বছর সময় নষ্টের পর কোনরকমের টেন্ডার ছাড়াই রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রমের সাথে ২০ মাসের মধ্যে ১০তি কূপ খননের চুক্তি করে ফেললো। তাও আবার বাপেক্সের থেকে ৩ গুণ বেশী মূল্যে। অথচ বাপেক্সকে আজ থেকে তিন বছর আগেই যদি এই দায়িত্ব দেয়া হত তাহলে এতদিনে ৩০০ মিলিওন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়ে যেতো যা দিয়ে ১৫০০ মেগাওয়াটের নতুন গ্যাস ভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা যেত। কিন্তু যেখানে প্রাইভেটাইজেশনের নাম করে দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট চালানো আর দেশের সম্পদ বহুজাতিক  কোম্পানিগুলোর কাছে তুলে দেয়াটাই এই গণতান্ত্রিক কুফর সরকারগুলোর কাজ সেখানে তা কিভাবে সম্ভব। দুর্ভাগ্যের বিষয় হোল কুইক রেন্টাল দুর্নীতি শেষ হতে না হতেই সরকার সুন্দরবনে ভারতীয় কোম্পানি ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার করপোরেশনকে (এনটিপিসি) কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দিয়ে বিপর্যয়ের আরেকটি ফ্রন্ট খুলতে যাচ্ছে।  

এখন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সমস্যাকে আরো গভীরভাবে বোঝার জন্য বাংলাদেশের জ্বালানী নীতির বিশ্লেষণ করাটাও প্রয়োজন। 

বাংলাদেশের জ্বালানী নীতির বিশ্লেষণঃ 


১-আদর্শিক ভিতিঃ


বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণ হয় পুঁজিবাদী জীবনাদর্শের ভিত্তিতে। এখানে মনে করা হয় সরকার প্রাকৃতিক এবং খনিজ সম্পদের বেবস্থাপনায় অক্ষম না হলেও অন্তত পক্ষে অদক্ষ। তাই এগুলোকে প্রাইভেট সেক্টরের কাছে ছেড়ে দিতে হবে। আর এজন্যই বাংলাদেশ সরকার বারবার সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে ডেকে আনছে আর নাহয় দেশীয় বেনিয়াদের কাছে জনগণের সম্পদ লুটপাটের জন্য তুলে দিচ্ছে।

২-বিদেশী কোম্পানিগুলোর সাথে অসম চুক্তিঃ


এপর্যন্ত বাংলাদেশের সবকটি সরকার জ্বালানী সম্পদের ক্ষেত্রে বিদেশীদের সাথে যৌথ পার্টনারশিপে গিয়েছে। যেটাকে উৎপাদন এবং বণ্টন চুক্তি বলা হয়। এটা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে এদেশের রাজনীতিবিদদের মাঝে জ্বালানী নিরাপত্তাকে ঘিরে সত্যিকারের কোন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং ভিশন নেই। তাই তারা বারবার এই সাম্রাজ্যবাদী কোম্পানিগুলোকে আহ্বান করে। অথচ এই কোম্পানিগুলো আমাদের গ্যাস আমাদের কাছে অতি উচ্চমূল্যে বিক্রি করে এবং আমাদেরকে তা ডলারে কিনতে হয় আন্তর্জাতিক রেট অনুযায়ী। কারণ ওই কোম্পানিগুলো শুধু মুনাফা বোঝে এবং তা দ্রুততম কম সময়ের মধ্যেই তারা তুলে নিতে চায়।

৩-দুর্নীতিঃ


বাংলাদেশের সব সরকারই দুর্নীতিগ্রস্থ বিধায় এরা খুব সহজেই জনগণের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে বিদেশী কোম্পানিগুলোর কাছে দেশের জ্বালানী খাতকে তুলে দিচ্ছে। এরা জ্বালানী সংক্রান্ত স্ট্রেটিজিক বিষয়গুলো বুঝে না বা বুঝতে চায়ও না। তাই সামান্য উৎকোচের বিনিময়ে জনগণের হককে এরা কাফেরদের কাছে বিক্রি করে দেয়। কারণ এদের রাজনীতির ভিত্তি হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। তাই আল্লাহ্‌র কাছে জবাবদিহিতা ধারণা এখানে অনুপস্থিত। 

৪-উচ্চাকাংখার অনুপস্থিতিঃ


আমরা পূর্বেই বলেছি যে বাংলাদেশ যেহেতু বর্তমান বিশ্ব বেবস্থায় পুঁজিবাদী ব্লকে অবস্থান করছে তাই এদেশের পাচাটা রাজনীতিবিদরা আমাদের উচ্ছিষ্টভোগী একটি জাতীতে পরিণত করেছে। এমন একটা জাতী যার নিজের কোন উচ্চাবিলাস নেই। তাই সবক্ষেত্রেই আমরা পরনির্ভরশীল হয়ে আছি। জ্বালানী এবং বিদ্যুৎ খাতও এর বেতিক্রম নয়। একারণেই এখনো পর্যন্ত আমাদের স্বাধীন এবং নিজস্ব জ্বালানী নীতি গড়ে ওঠেনি।

 

এধরণের নতজানু নীতি এবং পশ্চিমাদের পাচাটা মেরুদণ্ডহীন রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর(আওয়ামী মহাজোট-বিএনপি জোট)কারণেই আজ আমাদের জ্বালানী এবং বিদ্যুৎ খাতে ধুকছে। 

বিদ্যুৎ এবং জ্বালানী সমস্যার সমাধানে ইসলামের নির্দেশনাঃ


ইসলাম আল্লাহ(সূওতা)প্রদত্ত এক পুরনাঙ্গ জীবন বেবস্থা। জীবনের এমন কোন দিক ও বিভাগ নেই যে ব্যাপারে ইসলাম নিশ্চুপ থেকেছে। বেক্তি এবং সমষ্টির জন্য এখানে রয়েছে সুস্পষ্ট পথ নির্দেশনা। তাই বিদ্যুৎ এবং জ্বালানী সম্পদের ব্যাপারেও ইসলামের বক্তব্য রয়েছে।  আল্লাহ(সূওতা) পবিত্র কোরানে বলছেন, ''আমি আপনার প্রতি এমন কিতাব নাযিল করেছি যা প্রত্যেক বিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা''। [সূরা নাহলঃ৮৯]  

আমরা এখানে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

১- আদর্শিক অবস্থানঃ  


যেহেতু আল্লাহ্‌ হচ্ছেন মানুষ, জীবন এবং মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা তাই একমাত্র তিনিই তার সৃষ্টির প্রকৃতি এবং চাহিদা সম্পর্কে সম্যকরূপে অবগত। তাই ইসলাম মানুষের বেস্টিক এবং সামস্টিক প্রয়োজনের দিকে লক্ষ রেখেই জমিনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বস্তুসমূহের মালিকানার ধরণ এবং প্রকৃতি নির্ধারণ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয় বণ্টনের পদ্ধতি এবং ভোগের নীতিমালাও নির্ধারণ করে দিয়েছে। কারণ আল্লাহ্‌ সম্পদের ভোগ দখলের নিয়ম কানুন নির্ধারণের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কোনভাবেই মানুষের হাতে ছেড়ে দেবেন না। কেনোনা মানুষ সুযোগ পেলেই স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে। অন্যকে বঞ্চিত করে পুরোটাই নিজে ভোগ করতে চায়। তাই এব্যাপারে মানুষকে আইন প্রণয়নের কোন ক্ষমতা আল্লাহ্‌ দেননি। বিদ্যুতের মালিকানা, ব্যাবহার এবং বণ্টনের পুরো প্রক্রিয়াটিই ইসলাম এই নীতির আলোকেই সঙ্ঘটিত করেছে।

২-জ্বালানী সম্পদের মালিকানাঃ


ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পদের মালিকানা তিন ধরণের। বেক্তিগত সম্পদ, গণমালিকানাধীন সম্পদ এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ। বিদ্যুৎ এবং সেই সাথে যাবতীয় জ্বালানী উপকরণসমূহ যেমন প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেল, কয়লাসহ যাবতীয় জ্বালানী হচ্ছে গণমালিকানাধীন সম্পদের আওতাধীন। গণমালিকানাধীন সম্পদ হচ্ছে সেই সম্পদ যা বেক্তিরও নয় আবার রাষ্ট্রেরও নয়। বরং এ সম্পদ জনগণের যা ইসলামী জনগণের পক্ষ থেকে খলিফাহ দেখা শোনা করেন এবং জনকল্যাণের জন্য একে কাজে লাগান। এবং এর মূল্য গ্রহণও নিষিদ্ধ। 

ইবনে আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত এক হাদীসে রাসুল (সাঃ) বলেন, “তিন জিনিষের মধ্যে সকল মানুষ শরীক। এগুলো হচ্ছে পানি, ঘাস (চারণ ভূমি) এবং আগুন। [সুনানে আবু দাউদ]

উপরোক্ত হাদিসে ‘আগুন’ শব্দটি এসেছে যার মাফহুম(সম্প্রসারিত অর্থ) হচ্ছে জ্বালানী। আর বিদ্যুৎ, তেল, গ্যাস, কয়লা এসবই জ্বালানীর এক একটি উৎস। তাই এসবই গণমালিকানাধীন সম্পদ। এসব সম্পদ কখনোই বেক্তি মালিকানায় দেয়া যাবে না। কেননা এর সাথে গোঁটা সমাজের স্বার্থ জড়িয়ে আছে। আবার এই ধরণের সম্পদকে কোন প্রাইভেট কোম্পানির কাছেও দেয়া যাবে না। খলিফাহ বিদ্যুৎ খাতকে কোন বিদেশী কোম্পানির হাওয়ালা করে দিতেও পারবেন না। বরং ইসলামী রাষ্ট্র নিজ তত্বাবধানে এগুলোর উৎপাদন এবং বিতরণের বেবস্থা করবে এবং জনগণের কাছে থেকে এর কোন মূল্য নেবে না। যদি নেও তা হবে নামেমাত্র সার্ভিস চার্জ যা পুনরায় বিদ্যুৎ এবং জ্বালানী খাতেই বিনিয়োগ করা হবে যাতে করে জনগণকে সহজে সেবা দেয়া যায়। 

৩-ইসলামী রাষ্ট্রের উচ্চাকাংখাই তাকে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানী খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলবেঃ


ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হলে তা হবে একটি পরাশক্তি। তার থাকবে সুদূরপ্রসারী ভিশন এবং লক্ষ্য। আর সেটি প্রণীত হবে ইসলামের আহ্বান সমগ্র বিশ্বের কাছে দাওয়াত এবং জিহাদের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়ার চাহিদা মোতাবেক।

কারণ আল্লাহ্‌(সূওতা)বলেছেন,   

“তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রাসুলকে হেদায়েত ও সত্য দ্বীন (জীবনব্যবস্থা) সহকারে, যেন এই দ্বীন অন্যান্য দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করেন...।” [সুরা আত্ -তাওবাহ্ - ৩৩]

যার কারণে খিলাফত তার প্রথম দিন থেকেই এই আদর্শিক উচ্চাকাঙ্খা নিয়েই কাজ করবে। আর জন্য প্রয়োজন ব্যাপক শিল্পোন্নয়ন। যার মূলে থাকবে ভারী অস্ত্রশস্ত্র তৈরির কারখানা। কারণ ইসলামী রাষ্ট্রকে আদর্শিক লড়াইয়ের পাশাপাশি কুফর শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়েও অবতীর্ণ হতে হবে। আর এটি জানা কথা যে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের সংযোগ ছাড়া কোন জাতীর পক্ষেই শিল্পে উন্নতি লাভ করা সম্ভব নয়। সুতরাং ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্র তার আদর্শিক প্রয়োজন থেকেই বিদ্যুৎ এবং জ্বালানী সেক্টরে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে।

৪-স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার নিশ্চিতকরণঃ 


ইসলামী খিলাফত বেবস্থায় খলিফাহ কোন আইন প্রণয়ন করতে পারেন না। বরং তিনি নিজেই আল্লাহ্‌র(সূওতা)আইনের দাস। তাই তিনি তা মেনে চলতে বাধ্য। তিনি জানেন যে কোরান এবং সুনাহ’র আলোকে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানী সম্পদ কিভাবে আরোহণ, বণ্টন এবং এর সুবিধা তাকে জনগণের কাছে পৌঁছিয়ে দিতে হবে। অন্যদিকে জনগণও জানবে এই সম্পদগুলো ব্যাবহারের ইসলামী নীতিমালা কি। তাই তারা খুব সহজেই নিজেদেরন অধিকার বুঝে নিতে পারবে। এবং খলিফাহকে এব্যাপারে পূর্ণমাত্রায় জবাবদিহিতার মুখোমুখি করতেও সক্ষম হবে। তাই স্বেচ্ছাচারিতার দরজা বন্ধ হয়ে সর্বক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে ইনশাল্লাহ। 

শেষকথাঃ


ইসলামের জ্বালানী নীতি এবং এর অ্যাপ্লাইড বিষয় আশয় নিয়ে বিস্তারিত লিখতে গেলে একখানা সতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করতে হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে সেই সুযোগ এখানে নেই। তাই ইসলাম কিভাবে বিদ্যুৎসহ পুরো এনার্জি সেক্টরের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারে সে সম্পর্কে সবাইকে একটা খসড়া ধারণা দেয়াই ছিল এই আর্টিকেলর উদ্দেশ্য। আশা করি বিস্তারিতভাবে না হলেও জ্বালানী সম্পরকিত ইসলামের নীতিমালাগুলোর সারটা অন্তত সবাই পেয়ে গেছেন। বর্তমানে আমাদের ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্র নেই তাই ইসলামের দিকনির্দেশনাগুলো কার্যকর করা যাচ্ছে না। সুতরাং আমাদের উচিত সমাজের সমস্যারগুলোর ইসলামী সমাধানগুলো সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া যাতে করে উম্মাহর মাঝে ইসলামী চিন্তার ওপর আবারো কনফিডেন্স ফিরে আসে এবং ইসলাম এবং ইসলামী রাষ্ট্রের পক্ষে একটি জনমত (Popular Base) তৈরি হয়। এই উম্মাহ যখন তার দৈনন্দিন জীবন সমস্যার সমাধান ইসলামের মাঝে খুঁজে পাবে তখনই সে তার জীবনের যাবতীয় বিষয়েগুলোর সাথে ইসলামী আক্কিদার একটা গভীর সম্পর্ক অনুধাবন করতে সক্ষম হবে। যেটা তাকে ইসলাম বাস্তবায়নের জন্য তাড়িত করবে এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠার একটি সত্যিকার গণআন্দোলন উম্মাহর মাঝে তৈরি হবে। আল্লাহ্‌(সূওতা) আমাদের সকলকে সমাজের কাছে ইসলামী জীবন বেবস্থার দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার তৌফিক দিন।

Monday, 23 September 2013

কারবালার ঘটনা


_____________________৬০ হিজরির ঘটনাইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়াকে খলিফা নিযুক্ত করেন তার বাবা মুআবিয়া (রা: ) কিন্তু এটা ইসলামের মর্মের চেয়ে রাজতান্ত্রিক ধারায় বেশী প্রভাবিত ছিলতাই তার হাতে বায়াত করেননি হুসাইন (রা: ) ইরাকের লোকেরা এ খবর পেয়ে তার কাছে চিঠি/দূত পাঠিয়ে জানাল তারা তাকে খলিফা হিসেবে চায়, ইয়াজিদকে নয়সমর্থকদের চিঠি পেয়ে হুসাইন (রা: ) তাঁর চাচাতো ভাই মুসলিম বিন আকীলকে কুফায় পাঠালেন অবস্থা দেখার জন্যমুসলিম দেখলেন যে আসলেই অনেক মানুষ হুসাইনকে (রা: ) কে খলিফা হিসেবে চাচ্ছেতিনি হুসাইন (রা: ) কে সেটা জানিয়েও দিলেনইতমধ্যে কিছু অত্যুৎসাহী লোকেরা হানী বিন উরওয়ার ঘরে মুসলিমের হাতে হুসাইনের পক্ষে বায়াত নেওয়া শুরু করলসিরিয়াতে ইয়াজিদের কাছে এ খবর পৌছালে সে বসরার গভর্নর উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদকে পাঠাল কুফাবাসীর বিদ্রোহ দমন করতে
উবাইদুল্লাহ কুফায় গিয়ে দেখে ঘটনা সত্যিমুসলিম বিন আকীল চার হাজার সমর্থক নিয়ে উবাইদুল্লাহ বিন জিয়াদের প্রাসাদ ঘেরাও করলেনএ সময় উবাইদুল্লাহ দাঁড়িয়ে এক ভাষণ দিয়ে মানুষকে ইয়াজিদের সেনা বাহিনীর ভয় দেখালকুফাবাসীরা ইয়াজিদের শাস্তির ভয়ে আস্তে আস্তে সরে পড়তে লাগলসূর্য অস্ত যাওয়ার পর মুসলিম বিন আকীল দেখলেন, তথাকথিত হুসাইন সমর্থকদের কেউই অবশিষ্ট নেইতাকে গ্রেপ্তার করে হত্যার আদেশ দিল উবাইদুল্লাহমুসলিম মৃত্যুর আগে হুসাইনের কাছে একটি চিঠি পাঠান
হুসাইন! পরিবার-পরিজন নিয়ে ফেরত যাওকুফা বাসীদের ধোঁকায় পড়ো নাকেননা তারা তোমার সাথে মিথ্যা বলেছেআমার সাথেও তারা সত্য বলেনি
এদিকে মুসলিম বিন আকীলের মৃত্যু হলেও তার প্রথম চিঠির উপর ভিত্তি করে যুলহিজ্জা মাসের ৮ তারিখে হুসাইন (রা:) মক্কা থেকে কুফার উদ্দেশ্যে রওনা দেনঅনেক সাহাবী তাকে বের হতে নিষেধ করেছিলেনতাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর,আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর, আব্দুল্লাহ বিন আমর এবং তাঁর ভাই মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফীয়ার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য
সুফীয়ান আস সাওরী ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেন যে, ইবনে আব্বাস (রা:) হুসাইনকে বলেছিলেন: মানুষের দোষারোপের ভয় না থাকলে আমি তোমার ঘাড়ে ধরে বিরত রাখতামআব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা:) হুসাইনকে বলেন: হুসাইন! কোথায় যাও? এমন লোকদের কাছে,যারা তোমার পিতাকে হত্যা করেছে এবং তোমার ভাইকে আঘাত করেছে?
যাত্রা পথে হুসাইনের কাছে মুসলিমের সেই চিঠি এসে পৌঁছলচিঠি পড়ে তিনি কুফার পথ পরিহার করে ইয়াজিদের কাছে যাওয়ার জন্য সিরিয়ার পথে অগ্রসর হতে থাকলেনপথিমধ্যে ইয়াজিদের সৈন্যরা আমর বিন সাদ, সীমার বিন যুল জাওশান এবং হুসাইন বিন তামীমের নেতৃত্বে কারবালার প্রান্তরে হুসাইনের (রা:) গতিরোধ করলতিনি আগত সৈন্যদলকে আল্লাহর দোহাই এবং নিজের মর্যাদার কথা উল্লেখ করে তিনটি প্রস্তাব দেন
১. তাকে ইয়াজিদের দরবারে যেতে দেয়া হোকতিনি সেখানে গিয়ে ইয়াজিদের হাতে বায়াত গ্রহণ করবেনকেননা তিনি জানতেন যে, ইয়াজিদ তাঁকে হত্যা করতে চান না
২. অথবা তাঁকে মদিনায় ফেরত যেতে দেয়া হোক
৩. অথবা তাঁকে কোন ইসলামী অঞ্চলের সীমান্তের দিকে চলে যেতে দেয়া হোকসেখানে তিনি জিহাদ করবেন এবং ইসলামী রাজ্যের সীমানা পাহারা দেবেন
ইয়াজিদের সৈন্যরা উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদের ফয়সালা ছাড়া কোন প্রস্তাবই মানতে রাজী হল নাএ কথা শুনে উবাইদুল্লাহর এক সেনাপতি হুর বিন ইয়াজিদ বললেন: এরা তোমাদের কাছে যেই প্রস্তাব পেশ করছে তা কি তোমরা মানবে না? আল্লাহর কসম! তুর্কী এবং দায়লামের লোকেরাও যদি তোমাদের কাছে এই প্রার্থনাটি করত, তাহলে তা ফেরত দেয়া তোমাদের জন্য বৈধ হত নাএরপরও তারা খুব যৌক্তিক এই প্রস্তাবগুলো মেনে নেয়নিসেই সেনাপতি ঘোড়া নিয়ে সেখান থেকে চলে আসলেন হুসাইন (রা:) ও তাঁর সাথীদের সালাম দিয়ে উবাইদুল্লাহ এর সৈনিকদের সাথে হুসাইনের পক্ষে যুদ্ধ করে শহীদ হলেন

সৈন্য সংখ্যার দিক থেকে হুসাইনের সাথী ও ইয়াজিদের সৈনিকদের মধ্যে বিশাল পার্থক্য ছিলহুসাইনের (রা:) এর সাথে ছিলেন
১. আলী ইবনে আবু তালিবের (রা:) এর ছেলেরা আবু বকর, মুহাম্মাদ, উসমান, জাফর এবং আব্বাস
২. হুসাইনের (রা:) নিজের সন্তানেরা আবু বকর, উমর, উসমান, আলী আকবার এবং আব্দুল্লাহ
৩. হাসানের (রা:) এর ছেলেদের মধ্যে থেকে আবু বকর, উমর, আব্দুল্লাহ এবং কাসেম
৪. আকীলের সন্তানদের মধ্যে হতে জাফর, আব্দুর রাহমান এবং আব্দুল্লাহ বিন মুসলিম বিন আকীল
৫. আব্দুল্লাহ বিন জাফরের সন্তানদের মধ্যে হতে আউন এবং আব্দুল্লাহ
সাহাবা এবং তাবেঈদের এই ছোট্ট দলটির সবাই বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে শহীদ হনঅবশেষে হুসাইন (রা:) ছাড়া আর কেউ জীবিত রইলেন নাসীমার বিন যুল জাওশান নামের এক নরপশু বর্শা দিয়ে হুসাইনের (রা:) শরীরে আঘাত করে ধরাশায়ী করে ফেললশেষে ইয়াজিদ বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে নির্ভীক এই বীর আল্লাহর লিখে রাখা ভাগ্যানুযায়ী শহীদ হলেনহুসাইন (রা:) অন্যায় কিছু বলেন নি, অন্যায় কিছু করেন নিতার হত্যাকারী ও হত্যায় সাহায্যকারীদের আল্লাহর ক্রোধ ঘেরাও করুক, এরা ধ্বংস হোক! আল্লাহ্‌ তায়ালা শহীদ হুসাইন (রা:) এবং তাঁর সাথীদেরকে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টি দ্বারা আচ্ছাদিত করুন
এ ঘটনা মুসলিম জাতির ইতিহাসের একটি লজ্জাজনক অধ্যায় যা বিশ্বাসঘাতক কুফাবাসী আমাদের উপহার দিয়েছেআল্লাহ যদি চাইতেন তিনি এইসব আজগুবি ঘটনা না ঘটিয়েই হুসাইন (রা:) ও তার সঙ্গীদের রক্ষা করতে পারতেন
হুসাইন (রা:) এর হত্যাকারী কে?
শাইখ ইবনে তাইম্যিয়া বলেন: সকল মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকের ঐকমতে ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া হুসাইনকে (রা:) হত্যার আদেশ দেয়নিবরং উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদকে ইরাকে হুসাইনকে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে বাঁধা দিতে বলেছিলএতটুকুই ছিল তার ভূমিকাবিশুদ্ধ মতে তার কাছে যখন হুসাইন (রা:) নিহত হওয়ার খবর পৌঁছলে সে আফসোস করেছিলসে হুসাইন (রা:) পরিবারের কোন মহিলাকে বন্দী বা দাসীতে পরিণত করেনি; বরং পরিবারের জীবিত সকল সদস্যকে সসম্মানে মদিনায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিল
ইবনে আবী নুম হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: আমি একদা আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের নিকট উপস্থিত ছিলামতখন একজন লোক তাঁকে মশা মারার বিধান জানতে চাইলতিনি তখন লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন: তুমি কোন দেশের লোক? সে বলল: ইরাকেরইবনে উমর (রা:) তখন উপস্থিত লোকদেরকে লক্ষ্য করে বললেন: তোমরা এই লোকটির প্রতি লক্ষ্য করসে আমাকে মশা মারার হুকুম জিজ্ঞেস করছে, অথচ তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাতিকে হত্যা করেছেআর আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, এরা দুজন (হাসান ও হুসাইন) আমার দুনিয়ার দুটি ফুল। (বুখারী, হাদীছ নং- ৫৯৯৪)
হুসাইন (রা:) নিহত হওয়ার পূর্বে ইরাকবাসীদের বলেন:
তোমরা কি চিঠির মাধ্যমে আমাকে এখানে আসতে আহবান করো নি? আমাকে সাহায্য করার ওয়াদা করো নি? অকল্যাণ হোক তোমাদের! যেই অস্ত্র দিয়ে আমরা ও তোমরা মিলে ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি এখন সেই অস্ত্র তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে চালাতে যাচ্ছ? মাছি যেমন উড়ে যায় তেমনি তোমরা আমার পক্ষে কৃত বায়াত থেকে সড়ে যাচ্ছ, সকল ওয়াদা-অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছধ্বংস হোক এই উম্মতের তাগুতের দলেরা!
# আমাদের করণীয়:
মুসলিম হিসেবে আমাদের রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন, মৃত বা শহীদ ব্যক্তির জন্য বিলাপ না করা, আনুষ্ঠানিকভাবে তিন দিনের বেশি শোক প্রকাশ না করাতিনি বলেছেন:
মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপকারী যদি তওবা না করে মারা যায়, তাকে কিয়ামতের দিন লোহার কাঁটাযুক্ত জামা পড়ানো হবে এবং আলকাতরার প্রলেপ লাগানো পায়জামা পড়ানো হবে। (সহীহ মুসলিম)
যে কোন বিপদে আমাদের কর্তব্য কুরআনের সেই বাণী স্মরণ করা -
যখন তাঁরা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয়ই আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তারই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো (সূরা বাকারাঃ ১৫৬)

এই দিনে সিয়াম পালন করাআব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় কিছু ইহুদীদের আশুরার দিন রোজা রাখতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন: এটি কোন রোজা? তারা উত্তর দিল, এটি একটি পবিত্র দিনএদিনে আল্লাহ বনী ইসরাইলকে তাদের শত্রুদের কবল থেকে পরিত্রাণ দিয়েছেনতাই মুসা (আঃ) এ দিন রোজা রেখেছেননবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন: তাদের চেয়ে মুসা (আঃ) এর সাথে আমার সম্পর্ক অধিকসুতরাং তিনি সিয়াম থাকলেন এবং সাহাবীদেরকে সিয়াম রাখার আদেশ দিয়েছেন (সহীহ বুখারী) অপর বর্ণনায় তিনি আগামী বছর নয় তারিখেও সিয়াম থাকার নিয়ত করেছিলেন

উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা আমিরে মুয়াবিয়া

উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা আমিরে মুয়াবিয়া


পৃথিবীর ইতিহাসে যে সকল মনীষী তাদের স্বীয় যোগ্যতার বলে স্মরণীয় হয়ে আছেন তাদের মধ্যে আমিরে মুয়াবিয়া হলেন অন্যতমযিনি শৌর্য, বীর্য, বীরত্ব, সাহসিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেনএ সকল অনুপম চরিত্রের সন্নিবেশের সমাবেশ ছিল তার জীবনেকুরাইশ বংশের উমাইয়া গোত্রে ৬০৬ খৃস্টাব্দে মুয়াবিয়া জন্মগ্রহণ করেনতার পিতা ছিলেন উমাইয়া দলপতি এবং পবিত্র কাবার রক্ষক ইসলামের চরম দুশমন আবু সুফিয়ানমাতা হৃদয়হীনা হিন্দা,যিনি ওহুদ যুদ্ধে নিহিত রাসূলের প্রাণের চাচা আমির হামজার কলিজার ভক্ষণ করে ইসলামের ইতিহাসে একজন ঘৃণিত ব্যক্তি হিসেবে নাম লিখিয়েছেন৬৩০ খৃস্টাব্দে মক্কা বিজয়ের পর তার পিতা আবু সুফিয়ানের সাথে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন এবং ইসলামের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেন আজীবনএ সমস্ত অসাধারণ গুণের জন্য রাসূল (সাঃ) তাকে বেশি ভালবাসতেনযার ফলে মুয়াবিয়া ওহী লিখবার জন্য রাসূলের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেনপরে তার ভগ্নি উম্মে হাবিবার সাথে মহানবীর বিবাহ সম্পাদিত হলে উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা আরো বেড়ে যায়

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমরের খিলাফতকালে সিরিয়ার শাসনকর্তা নিযুক্ত হনসেই থেকে তার রাজনৈতিক জীবনের পথে হাঁটা শুরু হয়কর্মদক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও সাংগঠনিক ক্ষমতার বলে সমগ্র সিরিয়ার সুশাসন কায়েম করতে সক্ষম হন ও বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেননির্ভীকতা ও সামরিক দক্ষতার সাথে সিরিয়াকে বায়জানটাইন আক্রমন হতে রক্ষা করতে সমর্থ হনখলিফা ওসমানের সময় সর্বপ্রথম একটি ক্ষুদ্র নৌবাহিনী গঠনে করে দীপাঞ্চলে মুসলিম প্রাধান্য বিস্তার করার চেষ্টা করেনতারই সুযোগ্য নেতৃত্বে সাইপ্রাস ও রোডস দ্বীপ দখল করেনহযরত ওসমানের হত্যাজনিত গোলযোগ সময় হতে হযরত আলী ও মুয়াবিয়ার মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়পরে হযরত আলীর হত্যা ও পুত্র ইমাম হাসানকে পরাজিত করে সন্ধিচুক্তিতে স্বাক্ষর করে মুয়াবিয়া খিলাফত লাভ করেন এবং সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে উমাইয়া বংশ প্রতিষ্ঠা করেন

৬৬১ খৃস্টাব্দে ইমাম হাসানকে খিলাফতের ন্যায্য অধিকার হতে বঞ্চিত করে মুয়াবিয়া ইসলামী সাম্রাজ্য তথা দামেস্কের সিংহাসনে আরোহন করেন এবং ইসলামের ইতিহাসে প্রথম বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত লাভ করেনরাজতন্ত্রের সূচনাও তিনিই করেন
বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক মূইর বলেন,
‘‘মুয়াবিয়া দামেস্কের সিংহাসনে আরোহন খিলাফতের সমাপ্তি এবং রাজতন্ত্রের সূচনা করে’’
তবে যে পন্থাই অবলম্বন করে থাকুক না কেন, মুয়াবিয়াকে অভিজ্ঞ শাসন, সুনিপুণ কূটনীতিবিদ, নির্ভীক যোদ্ধা হিসেবে উপযুক্ত মর্যাদা দিতে হবেতিনি ক্ষমতা লাভ করে কূফা থেকে দামেস্ককে নব-প্রতিষ্ঠিত ইসলামী সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় রাজধানীতে রূপান্তরিত করেনযা করা অনেকের জন্য ছিল অসম্ভব তা তিনি করে দেখিয়েছেন স্বীয় যোগ্যতা আর কূটনীতিক ক্ষমতাবলেতবে একটা কথা থেকে যায় যে, তার আশেপাশের লোকদের থেকে তিনি যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছিলেন এবং তাদের থেকে কাজও আদায় করতে জানতেনসে দৃষ্টিকোণ থেকে আমির মুয়াবিয়া ছিলেন ভাগ্যবান

চারপাশের লোকদের সহযোগিতা না পেলে মুয়াবিয়ার একক প্রচেষ্টায় প্রাথমিক পর্যায়ে উমাইয়াদর সামরিক ও রাজনৈতিক সাফল্য অর্জন কঠিনতর ছিল
ঐতিহাসিক হিট্টির মতে,
‘‘খলিফা মুয়াবিয়ার সাফল্যের মূলে তার চারিপার্শ্বের অনুগামীবর্গের অবদানও কম ছিল না, বিশেষ করে মিসরের শাসনকর্তা আমর ইবনুল আস; বিক্ষুব্ধ কূফার প্রশাসক আল মুগীরা আল সাবাহবিদ্রোহী বসরার শাসনকর্তা জিয়াদ ইবন আবিহএই তিনজন তাদের নেতা মুয়াবিয়াসহ আরব মুসলমানদের চারজন রাজনৈতিক মেধাসম্পন্ন ব্যক্তি বলে পরিচিত’’
মুয়াবিয়ার শাসনকালে জিয়াদ ইবন আবিহ অশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেনজিয়াদ ছিলেন মুয়াবিয়ার পিতা আবু সুফিয়ানের জারজ সন্তানতার মাতা ছিলেন তায়েফের একজন ভ্রষ্টা রমনী ও আবু সুফিয়ানের উপপত্নীকিন্তু আশ্চযের বিষয় হল, জন্ম নীচ পরিবেশ হলেও দক্ষতা ও অধ্যবসায়ের গুণে তিনি মুসলিম ইতিহাসের একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হনজন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভাল'এই প্রবাদের সত্যতা আমরা জিয়াদ ইবন আবিহর মধ্যে দেখতে পাইতিনি ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলীর খিলাফতকালে বসরা ও ইসতাখরে শাসনকর্তার মর্যাদালাভ করেনবুদ্ধিমত্তা, বাগ্নিতা ও কর্ম প্রতিভার জন্য সে যুগে একজন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদরূপে পরিচিত ছিলেনমুগারীর মৃত্যুর পর মুয়াবিয়া জিয়াদকে একইসঙ্গে বসরা ও কূফার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন

একথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, আমর ইবনুল আসের কূটনৈতিক তৎপরতা ব্যতীত মুয়াবিয়া কিছুতেই উমাইয়া রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন নাবহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আমর সম্বন্ধ মূইর বলেন,
‘‘খিলাফতের পরিবর্তনের আমরের চেয়ে অপর কেহই অধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেননিযুদ্ধক্ষেত্রে সাহসী, পরামর্শে ধূর্ত, কথায় ও কাজে রুক্ষ, নীতিজ্ঞানশূণ্য আমরের বুদ্ধি বলেই মুয়াবিয়া হযরত আলীর উপর বিজয়ী হন এবং পরিণামে উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠা করেন’’

মুয়াবিয়ার রাজ্য বিজয় সম্পর্কে হিট্টি বলেন,
‘‘মুয়াবিয়ার শাসনকালে খিলাফত কেবল সুসংহতই হয়নি; বরং আঞ্চলিক বিস্তৃতিও সাধিত হয়েছিল’’

৬৭৯ খৃস্টাব্দে মুয়াবিয়া তদীয় পুত্র ইয়াজিদকে উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করে খেলাফতে রাশেদার যুগের পরিবর্তে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেনইয়াজিদকে মনোনীত করার পর মুয়াবিয়া ৬৮০ খৃস্টাব্দে মৃত্যুমুখে পতিত হন

মুয়াবিয়া শঠতার বশবর্তী হয়ে খিলাফত লাভ করলেও তাকে ইসলামের ইতিহাসে একজন অনন্য প্রতিভা ও ব্যক্তিসম্পন্ন শাসকরূপে অভিহিত করা হয়েছেতিনি গৌরবর্ন, দীর্ঘাকৃতি ও স্থুলকায় দেহের অধিকারী ছিলেনতার চরিত্রেও বিভিন্ন পরস্পর  বিরোধী গুণাবলীর সমাবেশ লক্ষ্য করা যায়শাসক হিসেবে ধূর্ত, কপট ও অমিতব্যয়ী হলেও তার ব্যক্তিগত জীবন কলুষিত ছিল নাইসলামের সম্প্রসারণে মুয়াবিয়ার অবদান অনস্বীকার্য
হিট্টি বলেন,
‘‘যোদ্ধা হিসেবে তিনি হযরত আলীর অপেক্ষা নিকৃষ্ট হলেও সামরিক সংগঠক হিসেবে তার সসসাময়িকদের মধ্যে অদ্বিতীয় ছিলেন’’

মুয়াবিয়া সূক্ষ্ম রাজনীতিক ও সুশাসন হিসেবে অক্ষয় কীর্তি অর্জন করেনচারিত্রিক দুর্বলতা এবং বংশীয়পক্ষপাতিত্ব সত্ত্বেও একথা স্বীকার করতে হবে যে, তার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাবো যে, তিনি ছিলেন, ধীরস্থির, হিসাবী, মেধাবী ধৈর্য্যশীল ও দূরদর্শী এবং কর্মঠতার অনুসৃত নীতিগুলো বৃহত্তর ইসলামের স্বার্থে প্রয়োগ করা হলে ইসলাম, রাষ্ট্র ও ধর্ম আরো সুসংসহ এবং শক্তিশালী হতোকিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে প্রশাসনিক কাঠামো গঠিত হয়েছিল উমাইয়া বংশের স্বার্থ রক্ষার্থে


পরিশেষে একথা বলা যায় যে, এত আলোচনা আর সমালোচনার পর আমির মুয়াবিয়া ছিলেন অসাধারণ একজন মানুষরাসূল (সা) তাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেনঅধিকন্তু তিনি ছিলেন একজন সম্মানিত সাহাবীআর সাহাবীদের সম্বন্ধে তার বেফাঁস মন্তব্য করতে রাসূল (সা) আমাদেরকে নিষেধ করেছেনবর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী আমির মুয়াবিয়ার নাম ইসলামের ইতিহাসের স্বর্ণক্ষরে লিখা থাকবে

Wednesday, 18 September 2013

পরিবেশ বিপর্যয় কাকে বলে? পরিবেশ বিপর্যয় রোধে ইসলামের ভূমিকা কি আলোচনা কর।


ভূমিকা
আল্লাহ সুবানাহাতায়ালা বলেন,
তোমরা কি দেখ না আল্লাহ্ নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যাকিছু আছে, সবই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নেয়ামতসমূহ পরিপূর্ন করে দিয়েছেন? [লুকমানঃ২০]
এ পৃথিবীতে আল্লাহ পাক যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সবকিছু মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন।আর আল্লাহ পাকের গোটা সৃষ্টিজগৎ হল পরিবেশ।বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় সকলে এই পরিবেশ রক্ষা করার নামে অত্যন্ত তৎপর হয়ে উঠেছে।কিন্তু আজ থেকে প্রায় ১৪শ বছর পূর্বে বাস্তবভিত্তিক ধর্ম ইসলাম পরিবেশ দূষণ রোধে এমন কিছু নিয়ম-নীতি প্রদান করেছে যার আলোকে পরিবেশ দূষণ রোধ করা অত্যন্ত সহজসাধ্য একটি বিষয়।ইসলামের সাথে পরিবেশ বিজ্ঞানের কি সম্পর্ক এবং এই পরিবেশ দূষণরোধে ইসলাম কি ভূমিকা পালন করে তা নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
পরিবেশ কি
পরিবেশ কথাটি আভিধানিক অর্থে ঠিকানা,অবস্থা এবং প্রকৃতিকে বুঝানো হয়।আল্লাহ পাক কুরআনে পরিবেশের কতাহ বলেছেন নিম্নোক্তভাবে,
যখন আমি ইবরাহীমকে বায়তুল্লাহর স্থান ঠিক করে দিয়েছিলাম যে, আমার সাথে কাউকে শরীক করো না। [হাজ্জঃ২৬]
সে সেখান যেখানে ইচ্ছা স্থান করে নিতে পারত। [ইউসুফঃ৫৬]
 তোমরা তোমাদের জাতির জন্য মিসরের মাটিতে বাস স্থান নির্ধারণ কর।  [ইউনুসঃ৮৭]
তোমাদেরকে পৃথিবীতে ঠিকানা দিয়েছেন। [আরাফঃ৭৪]
আল কুরআনে পরিবেশকে তাওয়া এবং তাবওয়া বলা হয়েছে যার দ্বারা ঘর,বসতিবাসস্থানকে,বায়ুমণ্ডল,বায়,পানি।আরবীতে বায়নাতু এবং মসিরুন বলে। পরিবেশ বলা হয়েছে।ইংরেজী Ecology হল পরিবেশ যা গ্রীক শব্দ oikos এবং logos এর সমন্বিত রুপ।oikos এর অর্থ হল ঘর,বসতি,বাসস্থান এবং logos এর অর্থ হল জ্ঞান ও গবেষণা।কাজেই পরিবেশ সম্পর্কিত জ্ঞান হল পরিবেশ বিজ্ঞান।১৮৮৫সালে বিজ্ঞানী রিটার সর্বপ্রথম এই পরিবেশ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
বিজ্ঞানী আর্নষ্ট হেজেল বলেন, জীবন্ত সৃষ্ট জগতের পারস্পারিক সম্পর্ক তথা তারা যে আবেষ্টনীয় জগতের মধ্যে বসবাস করে সেই সম্পর্কিত জ্ঞান হল পরিবেশ বিজ্ঞান।
অর্থাৎ, বসবাস সংক্রান্ত জ্ঞান হল পরিবেশ।
ড. মাহমুদ সালেহ আদেলী বলেন, মানবমণ্ডলীকে বেষ্টন করে আল্লাহ তায়ালার যে সমগ্র সৃষ্টিজগৎ তাকেই পরিবেশ বলা হয়।
ড. সাঈদ মুহাম্মদ আল-হাফফার বলেন, পরিবেশ হল প্রকৃতির ও সামাজিক ব্যবস্থাসমূহের সমন্বিতরুপ যেখানে মানুষ ও অন্যান্য জীব ধারন,বর্ধন ক্রিয়া সুন্দরভাবে পরিচালনা করে। [বিয়াতু মিন আজলি বাক্কা]
গোপালনাথ খান্না বলেন, Environment as the sum of total effects the development and life of organism.
মোটকথা পৃথিবীর সবকিছু যা ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বায়ুবণ্ডলের ওজোন স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত যাওথা আল,বাতাস,পানি,মেঘ,কুয়াশা,মাটি,বন,শব্দ,পাহাড়-পর্বত,নদী-নালা,সাগর-মহাসাগর,মানবনির্মিত সর্বপ্রকারের অবকাঠামো এবং গোটা উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের সমন্বয়ে যা সৃষ্ট তা হল পরিবেশ।
পরিবেশ সংরক্ষণে ইসলাম
১. আল্লাহ বলেন,
তোমরা কি দেখ না আল্লাহ্ নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যাকিছু আছে, সবই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নেয়ামতসমূহ পরিপূর্ন করে দিয়েছেন? [লুকমানঃ২০]
এ আয়াতের দ্বারা এ কথা বুঝানো হয় যে,সবকিছু আমাদের প্রয়োজনে ভরপুর।তাই এদের সংরক্ষণ এবং উন্নয়ন আমাদের জন্য অপরিহার্য্য একটি দায়িত্ব ও কর্তব্য।
২. রাসূল(সাঃ) একবার হযরত সাদ(রাঃ) উযুর সময়ে অতিরিক্ত পানি খরচ করতে দেখে বলেন, তুমি এত পানির অপচয় করছ কেন?তুমি যদি নদী অথনা সমুদ্রে উযু কর তাহলে তার অপচয় করবে না।
আল্লাহ পাক যেকোন বস্তুর অপচয় সম্পর্ণরুপে নিষেধ করে দিয়েছেন।কারণ সবকিছু তার সৃষ্টির জন্য পরিমিতভাবে তৈরী করা হয়েছে।আর তার অপব্যয় করা হল শয়তানের ভাইয়ের ন্যয় কাজ।আল্লাহ বলেন, তিনি প্রত্যেক বস্তু সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তাকে শোধিত করেছেন পরিমিতভাবে। [ফুরকানঃ২]
আল্লাহ পাক বলেন, নিশ্চয় অপব্যাকারী শয়তানের ভাই। [বনী-ঈসরাইলঃ২৬]
৩. ১৪ বছর যাবৎ মক্কা ও মদীনায় প্রাণী হত্যা,গাছ কাটা নিষিদ্ব হিল যা পরিবেশ সংরক্ষণে খলীফাবৃব্দ এক চমৎকার ভূমিকা পালন করে।
অর্থাৎ এসকল আলচনার দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে, পরিবেশ সংরক্ষণে ইসলামের ভূমিকা অত্যন্ত ব্যাপক।
পরিবেশে যেন সকল প্রাণী থাকে তা সকলে চায়।কারন তাতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পায়।বাঘ,সাপের মত জন্তুকে রক্ষা করার জন্য আন্দোলন চলছে।কারণ তা আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।বর্তমানে শকুন না থাকার জন্য আনথ্রাক্স রোগ ছড়চ্ছে।তাই তা থাকা দরকার।আল্লাহ পাক বলেন তুমি আমার সৃষ্টির ভিতর তাকাও।সেখানে কোন অপূর্ণতা পাও?তুমি তা ভাল করে তাকাও। মনে হয় যে কুরআনে পরিবেশ সম্পর্কে কিছুই বলে নাই।কিন্তু তা বলা হয়েছে।যখন পরিবেশের ভিতর সবকিছু থাকে আর যদি তার কিছু অভাব হয় তাহলে তা হবে পরিবেশ বিপর্যয়।
পরিবেশ বিপর্যয়
আল্লাহ পাক অত্যন্ত সুন্দরভাবে সৃষ্টি করেছেন।যেখানে পাহাড় আছে তা আছে,তারপর যেখানে নদী আছে তা আছে তারপর বরফ আছে যার নিচে মিথেন আছে।তা যখন গলে যাবে তখন মিথেন বের হয়ে যাবে এবং সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্বি হয়ে মহাপ্লাবনের সৃষ্টি।পরিবেশে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হলে এমন অবস্থা হয়।পরিবেশ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়।পরিবেশ বিপর্যয়ের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে South wick, 1976 এ বলা হয়েছে,
পরিবেশ প্রতিকূল পরিবর্তন যা প্রধানত মানুষের সক্রিয়তার উদ্ভূত উপাদানে সৃষ্ট তাই পরিবেশ দূষণ
এম. আমিনুল ইসলাম বলেন, মানুষের ক্রিয়াকলাপের দ্বারা পারিপার্শ্বিক অবস্থার দূষণের সাধারণভাবে পরিবেশ দূষণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল কাদির কাফী বলেন, প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনায় প্রাণীজগৎ, উদ্ভিদজগৎ ও বায়ুমন্ডলের অনিষ্ট সৃষ্টিকারী বস্তুর উপস্থিতি যা পরিবেশগত ভারসাম্যকে ধ্বংস করে তাই পরিবেশ বিপর্যয়।
পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণসমূহ
এখন যেসকল কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয় তা হোল
১. জনসংখ্যা বৃদ্বিঃ জনসংখ্যা বৃদ্বি হলে এক সাথে অনেক লোকের সমাগম হলে তাতে পরিবেশ দুষিত হয়।
২. ভোক্তার চাহিদা বৃদ্বিঃ ইহা বৃদ্বি পেলে পরিবেশের বিপর্যয় হয়।যা কিনে তা পরিত্যক্ত করা হলে পরিবেশ দুষিত হয়।
৩. কৃত্রিম প্রযুক্তিগত উন্নয়নঃ  এর জন্য এমনটা হয়।        
৪. প্রাকৃতিক স্বাভাবিক কারণে অযথা মানব হস্তক্ষেপঃ বিল ভরাট,বন কেটে ফেলা, পাহাড় কাটা এর অন্তর্ভূক্ত হয়।
পরিবেশ দূষণের কারণসমূহ
চারটি কারণে পরিবেশ দুষিত হয়।তা হল বায়ু দুষন,পানি দুষন,শব্দ দুষন এবং কঠিন বর্জ্য দুষন।
বায়ু দুষন
বায়ু যখন প্রাণী এবং উদ্ভীদের জন্য ক্ষতিকর তাই হল বায়ু দুষন।আমাদের জন্য অক্সিজেন দরকার আবার গাছের জন্য দরকার কার্বন-ডাই-অক্সাইড।বায়ুতে যদি ওজোন,সালফার,কার্বন মনোক্সাইড,মিথেন,ক্লোরোফিল,সীসা,ক্যাডিয়াম থাকে তাহলে তা ক্ষতিকর বায়ুর জন্য।কিছু কিছু গাছ আছে যেখানে বায়ু দুষনের জন্য সেগুলোতে ফল হয় না।তেহরানের পর ঢাকা বসবাসের জন্য সবচেয়ে অনুপযোগী শহর।এর কারণ হল বায়ু দুষন।বায় দুষনের প্রধান কারণ হল সীসা এবং কার্বন মনোক্সাইড।এর এই সীসা এবং কার্বন-মনোক্সাইড সবচেয়ে বেশী ছড়ায় ডিজেল,পেট্রোল, গাড়ি এবং কল-কারখানার বর্জ্যের দ্বারা হয়ে থাকে,যার ফলে মানুষেরা দিন দিন রোগ্রান্ত হচ্ছে।চলাফেরা করা দুরুহ হয়ে গিয়েছে।বাতাসকে দুষন ঘটায় যেসকল বিষয় তার ভিতর সবার আগেয় হয়
 ১. তেজস্কৃয়তার দ্বারা।এই তেজস্কৃয়তা পারমাণবিক বিস্ফোরণের দ্বারা হয়।অথবা পার্শ্ববর্তী কোন দুর্ঘটনার দ্বারা হয়, অর্থাৎ কোন বস্তুর মধ্য দিয়ে পারমাণবিকতার নির্গমন,
২. কল-কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ার দ্বারা,
৩. যান-বাহনের থেকে নর্গত ধোঁয়া,
৪.অসাস্থ্যকর আবর্জনা জমা করার জন্য,অসাস্থ্যকর উপায়ে অপসারণ করা হয় যারা দ্বারা বাতাস দুষিত হয়,
৫. তৈল উত্তোলনের ফলে আগুন ধরা, এভাবে করে বাতাস দুষিত হয় আর এর দ্বারা মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।      ৬.কয়লা বা কাঠ পোড়ানো  এরোসল বা স্প্রের ব্যবহার,
 ৭.কৃষিজমিতে কীটনাশকের ব্যবহার, 
৮. এসিড রেইনের দ্বারা, 
 ৯।বিভিন্ন ধরনের বারুদ ও বোমা বিস্ফোরণ্‌,
১০।. তৈল উত্তোলনের ফলে আগুন ধরা,
বায়ু দূষনের প্রভাবঃ
এভাবে করে বাতাস দুষিত হয় আর এর দ্বারা মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যা হল শ্বাস কষ্ট,ফুসফুসে কষ্ট, এধরনের আরও বিভিন্ন ধরনের রোগের বিস্তার ঘটায়। মানুষের শরীরের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর হল সীসা।এই সীসা মানুষের কিডনিকে নষ্ট করে দেয় আর এই কিডনি মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংগ-প্রত্যঙ্গের ব্যাঘাত ঘটায়।সীসাসহ বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ বাতাসকে এমনভাবে বিষাক্ত করে যার অস্তিত্ব ৫০০ বছর পর্যন্ত থাকে।তাহলে তার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব থাকে।এর দ্বারা পৃথিবীর সকল জীব আক্রান্ত হয়।
পানি দুষন
পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে পানি দুষিত হয়।তাহলে সমুদ্রের উদ্ভিদ এবং মাছের জন্য ক্ষতিকর হয়।সমুদ্রে কিছু উদ্ভিদ মানুষের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।কিন্তু পানি দুষিত হলে তা ব্যাহত হয়।তা আর হয় না।তারপর মাছ আর পাওয়া যায় না।পানিতে বিষাক্ত দ্রব্য অথবা দূষিত বর্জ্য পদার্থ মিশ্রণের ফলে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ার প্রক্রিয়াকে পানি দূষণ বলে।শহরে পানির সর্বরাহ হয় মূলত পার্শ্ববর্তী নদীগুলো থেকে। নদীর পানি বিশুদ্ধ করে খাওয়া ও ব্যবহার উপযোগী করা হয়।  শহরে যেসকল কারণে পানি দূষিত হয় সেগুলি হচ্ছে-কলকারখানার বর্জ্য নদীতে মিশে পানি দূষিত হয়।অনেক সময় পানির লাইন ফেটে যেয়ে এর ভিতর ময়লা-আবর্জনা প্রবেশ করে। এর ফলে পানি দূষিত হয়।নলকূপের পানিতে আর্সেনিক গ্রামে পানি দূষণের প্রধান কারণ।ফসলের ক্ষেতে কীটনাশকের ব্যবহার এবং বৃষ্টির পানিতে তা পুকুর, জলাশয়ের পানিতে মিশে পানি দূষিত হয়। একই পুকুরে কাপড় পরিষ্কার, মানুষ ও গবাদী পশুর গোছল করালে পানি দূষিত হয়।
এভাবে শহর ও গ্রামে পানি দূষিত হয় এবং খাওয়া ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে ওঠে।
পানি দূষণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি: পানি দূষণের কারণে বিভিন্ন ধরণের পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। যেমন-
পানিবাহিত রোগ:
ডায়েরিয়া
ব্যাকটেরিয়াজনিত:
টাইফয়েড
সংক্রমন
কলেরা, প্যারাটাইফয়েডজ্বর ও   বেসিলারী আমাশয়
ভাইরাল সংক্রমণ(জন্ডিস)
পোলিওমাইলিটিস হেপাটাইটিস সংক্রমণ
প্রোটোজল সংক্রমণ:
অ্যামোবিক আমাশয়
শব্দ দুষন
আরেকটি হল শব্দ দুষন।৮০ ডেসিবেলের বেশী শব্দ অতিক্রম হলে তার ক্ষতি হয়।শব্দের উৎস থেকে আধা মিটার দূরে ৮০ ডেসিবেলের বেশী গ্রহণযোগ্য নয়। কল-কারখানার শব্দ,গাড়ীর হর্ন, ঘণ্টার শব্দ ইত্যাদি কারণে শব্দ দুষিত হয়ে থাকে।
কঠিন বর্জ্য দুষন
কল-কারখানা,শিল্পজাত বর্জ্য,কৃষিজাত কারখানা,পারমাণবিক বর্জ্য,কঠিন খনিজ বর্জ্য ইত্যাদির দ্বারা পরিবেশের বিপর্যয় ঘটে।শিল্পের ব্যবহার দ্বারা পরিবেশ ক্ষতি হয়।কাগজ,ইট তৈরী করার দ্বারা এই ক্ষতি হয়ে থাকে।নগরায়ন এবং শিল্পয়ানের  ফলে তা হচ্ছে।একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, ১৭০০ সালে কার্বন-ডাইওক্সাইডের পরিমান ছিল ২৭৫ মিলিয়ন পি পি এম।১৯৯০ সালে তা হয়৩৫০ মিলিয়ন পি পি এম।তাপমাত্রা বাড়ছে।২০২৫ সালে তাপমাত্রা হবে ১।৫৮ ফারেনহাইট হবে।শেষ শতাব্দীতে দশ ফারেনহাইট বাড়বে।ফলে চল্লিশ বছরের মধ্যে ৮ ইঞ্চি পানি বাড়বে আর সবকিছু ডুবে যাবে।কার্বন-ডাইঅক্সাইড যেই সময় উদগিরণ করা হবে তার স্থায়ীত্ব থাকবে ৫০০ বছর।সি.এফ.সি এর হায়াত হলে ১৬৫ বছর।অর্থাৎ এসকল প্রভাব থাকবে ১০০-৫০০ বছর।এর ফলে সৃষ্ট হচ্ছে নানা রোগ।জাপানে বনভূমি ৬৭ ভাগ,রাশিয়াতে ৫১ ভাগ, ভারতে ২৭ ভাগ এবং মিয়ানমারে ৬৭ ভাগ।আর বাংলাদেশে ৭ ভাগ।এটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর।আমাদের শিল্প বেশী ক্ষতিকর।ট্যানারির দ্বারা দৈনিক ১৬ হাজার বর্গমিটার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে।আর সেগুলো হাস-মুরগী ও মাছ খাচ্ছে আর তা খাচ্ছি আমরা।
পানি দূষণ রোধে ইসলাম
পানি দুষণ রোধে ইসলামের ভূমিকা অত্যন্ত ব্যপক।এই পৃথিবির ৭০ ভাগ হল জল আর বাকী ৩০ ভাগ হল স্তল।এই পানির কথা কুরআনে মোট ৬৩টি জায়গায় ব্যবহৃত হয়েছে।এই পানি হতে সমগ্র সৃষ্টিজগতকে সৃষ্টি করা হয়েছে।আল্লাহ বলেন,
প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। [আম্বিয়াঃ৩০]
রাসূল(সাঃ) বলেন, প্রত্যেকটি জিনিস পানি হতে সৃষ্ট।
আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল পানি।একটি শরীরের ওজনের ৫০-৬০ ভাগ পানি থাকে।মেয়েদের শরীরের থেকে পুরুষের শরীরে পানি বেশী থাকে।একজন বয়স্ক লোকের শরীরে ৪০ ভাগ পানি থাকে।শিশুদের শরীরের আরও বেশী থাকে।তাদের শরীরে প্রায় ৮০ ভাগ থাকে।এই তথ্য কুরআনে প্রায় ১৪০০ বছর আগে দেওয়া হয়েছে।জীবকোষের মূলউপাদান প্রোটপ্লাজম যাকে জীবের প্রাণ বলা হয়, যার ৯৫ ভাগ পানি।আল্লাহ পাক বলেন, আল্লাহ্ আকাশ থেকে যে রিযিক (বৃষ্টি) বর্ষণ করেন অতঃপর পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর পুনরুজ্জিবিত করেন, তাতে এবং বায়ুর পরিবর্তনে বুদ্ধিমানদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। [জাসিয়াঃ৫]
১. আর্সেনিক রোধঃ বর্তমানে ভূগর্ভস্থ পানি আমরা খাই না যেহেতু সেখানে আর্সেনিক পাওয়া গেছে।যদিও আল্লাহ পাক তা খেতে আমাদের বলেন নাই।আমরাই তা খাই।আল্লাহ কুরআনে বলেছেন,আসমান থেকে যে পানি বর্ষণ করা হয় তা খেতে।তিনি কিন্তু বলেন নাই যে ভিতর থেকে পানি খেতে।মাটি থেকে যেই পানি উঠে তা হল বিপদ সংকেত।
২.বদ্ব পানিতে পেশাব না করাঃ পানি দুষন রোধের জন্য হাদীসসমূহ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তিনি উদ্বৃত করেছেন,যেমন তিনি বলেছেন, তোমরা বদ্ব পানিতে পেশাব করবে না।[মুসলিম] অন্য এক হাদীসে আছে,তোমরা পানিতেই পেশাব করবে না।আমরা বদ্ব পানিতে পেশাব না করলেও সকল ড্রেনের পানি নদীতে গিয়ে পড়ছে।তাহলে আমরা তো বদ্ব পানিতে পেশাব করছি।পুরো মুসলিম জাতি যদি হাদীস মানে তাহলে তো এই অবস্থা হত না।তাহলে পানিগুলো কোথায় যাবে?তার জন্য আল্লাহ পাক তো শোধনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।কিন্তু তা বর্তমানে শোধন না করে তা প্রবাহিত করা হচ্ছে সরাসরি।আবূ হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস যে, তোমরা স্থির পানিতে পেশাব করবে না। কারণ এখানে গোসল করা হয়।তাই এখানে কোনভাবে পেশাব করা যাবে না।আর পেশাবের ভিতর এমন কিছু উপাদান আছে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।তাই সেখানে কোনভাবে পেশাব করা যাবে না।তাই কোন কোন স্থানে দুষিত পানি ব্যবহারের ফলে হাতের তলায় ঘাও হচ্ছে।যদি বলা হয় তা বিজ্ঞানে আছে তাহলে তা মানি আর যদি বলি তা ধর্মে আছে তাহলে তাতে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
৩.উযু করার পূর্বে হাত ধোঁইয়াঃ  উযু করার পূর্বে পানির পাত্রের পানি যেন দুষিত না হয় এজন্য তার উচিৎ হাত ধুঁয়ে নেওয়া। বুখারী এবং মুসলিম শরীফের হাদীস তোমাদের ভিতর থেকে যদি কেউ ঘুম থেকে উঠে আর সে যেন হাত না ধুয়ে পানির পাত্রে হাত না দেয়।কারণ সে জানে না রাতে তার হাত কোথায় ছিল? পানির অপচয় করি বিভিন্নভাবে।অথচ রাসূল(সাঃ) বলেন, তুমি যদি সমুদ্রে থাক তাহলেও পানির অপচয় করবে না।
৪.পানিতে নিঃশ্বাস না ফেলাঃ  পানির বিশুদ্বতা রক্ষার জন্য ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীসে উদ্বৃত করেছেন যা হল, তোমরা পানিতে কেউ নিঃশ্বাস ফেলবে না। এটা করা একদম নিষেধ।কারন,মানুষ যখন শ্বাস ত্যাগ করে তখন তার ভিতর থেকে নানা জীবানু বের হয়।আর তা পানিতে নিক্ষেপিত হলে সেই পানি দুষিত হয়।তাছাড়া নাকের চুলে যেই ময়লা জমা হয় তা পানিতে পড়লে তা তার সাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে।এই বিষয়টি রাসূল(সাঃ)প্রায় ১৪শ বছর পূর্বে অতুন্ত চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।কিন্তু রাসূলের হাদীস হিসেবে আমরা এর গুরুত্ব খুব একটা দেই না।
৫. পানির পাত্র ঢেকে রাখাঃ রাসূল(সাঃ)বলেছেন, শয়নের আগে পানির পাত্র ঢেকে রাখ।পানিকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য এ হাদীস বলা হয়েছে।
৬. নবীজি(সাঃ) বলেছেন, সাতটি কাজের দ্বারা একজন মানুষ মৃত্যুর পর সওয়াব পেতে থাকে।তা হোল আলেম তৈরী করা,খাল খনন করা, পুকুর খনন করা, গাছ ফলন,মসজিদ নির্মাণ, নেককার সন্তান এবং উপকারী ইলম। এর ভিতর তিনটি কাজ পানির সাথে সম্পর্কযুক্ত।পানি দুষনের এই হাদীসগুলো মানলে পানি দুষন রোধ করা যাবে।
৭. পবিত্রতা অর্জনঃ কুরআনে বলা হয়েছে, ““যে নিজেকে (আত্মাকে) শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়।[শামসঃ৯] কেউ কেউ এখানে আধ্যাত্মিক পবিত্রতার কথা বলেন।কিন্তু এটি আধ্যাত্মিক পবিত্রতার পাশাপাশি শারীরিক পবিত্রতার কথা বলা হয়েছে।এই আয়াতটির গুরুত্ব অত্যাধিক বেশী।এ সুরার শুরুতে আল্লাহ বলেন, শপথ সূর্যের ও তার কিরণের,শপথ চন্দ্রের যখন তা সূর্যের পশ্চাতে আসে, শপথ দিবসের যখন সে সূর্যকে প্রখরভাবে প্রকাশ করে,শপথ রাত্রির যখন সে সূর্যকে আচ্ছাদিত করে, ।শপথ আকাশের এবং যিনি তা নির্মাণ করেছেন, তাঁর।শপথ পৃথিবীর এবং যিনি তা বিস্তৃত করেছেন, তাঁর, শপথ প্রাণের এবং যিনি তা সুবিন্যস্ত করেছেন, তাঁর, অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন, যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়।এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়। [শামসঃ১-১০] তাহলে এখানে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের শপথের মাধ্যমে এই দৈহিক এবং আত্মিক পবিত্রতার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।আল্লাহ পাক বলছেন, হে চাদরাবৃত।উঠুন, সতর্ক করুন। আপন পালনকর্তার মাহাত্ন্য ঘোষনা করুন,।আপন পোশাক পবিত্র করুন। এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন। [মুদাচ্ছিরঃ১-৫] এগুলো এজন্য পরিচ্ছনে থাকে।হাদীসে পবিত্রতার গুরুত্বের কতাহ তুলে ধরা হয়েছে।রাসূল(সাঃ) বলেন, আল্লাহ নিজেও পবিত্র এবং তিনি পবিত্রতাকে ভালবাসেন। আবার রাসূল(সাঃ) এ কথাও বলেছেন যে, পবিত্রতা হল ঈমানের অর্ধাংশ। আবার তিনি একথাও বলেছেন যে, যখন কুকুর তোমাদের লালা দেয় তখন ঐ জায়গাটি সাতবার ধুবে।সর্বশেষ মাটি দিয়ে ধুবে। তাহলে এখানে ছয়বার পানি দিয়ে পরিচ্ছন্ন করার পর একবার যদি মাটি দিয়ে পরিচ্ছন্ন করা হয় তাহলে তার ভিতর যেই জীবানু থাকার কথা তা আর থাকবে না।আর এই মাটিকে যদি আমরা দুষিত করি তাহলে কি করে আমরা কি করে মাটি ব্যবহার করব।রাসূল(সাঃ) এই দুআ করতেন, আল্লাহুম্মা ইন্নী আসয়ালুকাল হুদা অত্তুকা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা। এই আফাফার দ্বারা চারিত্রিক পবিত্রতা এবং এবং দৈহিক পবিত্রতা উভয়ের কতাহ বলা হয়েছে।আরও অসংখ্য হাদীসের দ্বারা তিনি পবিত্রতার কথা বলেছেন।এখন যদি একথা বলা হয় যে, পানি পবিত্র রাখা আমাদের একটা দায়িত্ব।তাহলে মানুষ তা গুরুত্বের সাথে করবে।তানাহলে করবে না।
বায়ু দুষণ রোধ ইসলাম
মানুষ প্রায় ৪০ কেজি বাতাস বহন করে।বায়ু পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা প্রত্যেক জীব-জন্তু গ্রহণ করে থাকে।একজন মানুষ দিনে প্রায় ১৬।৫ কেজি বাতাস গ্রহণ করে।প্রতি ৪ সেকেন্ডে একবার, এক মিনিটে ১৬ বার, ঘণ্টায় ১৬০ বার, দিনে ২৩০৪০ বার এবং বছরের ৮৪০৯৬০০ বার।ইহা ছাড়া কোন জীবের অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে থাকতে পারত না।বায়ুর ব্যাপারে কুরআনে বলা হয়,
আল্লাহ্ই বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর সে বায়ু মেঘমালা সঞ্চারিত করে। [ফাতিরঃ৯]
তিনিই বৃষ্টির পূর্বে সুসংবাদবাহী বায়ু পাঠিয়ে দেন। এমনকি যখন বায়ুরাশি পানিপূর্ন মেঘমালা বয়ে আনে [আরাফঃ৫৭]
রাসূল(সাঃ) বলেন, তোমরা বায়ুকে অভিশাপ দিও না।কারণ তা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা।আর যে অভিশাপ পাওয়ার যোগ্য নয় তার উপর অভিশাপ দেওয়া হলে তা নিজের উপর বর্তাবে। [তিরমিযী]
হয়েছে।উবাই ইবনে কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেন্, তোমরা বাতাসকে গালি দিও না।যদি তার ভিতর কোন খারাপ কিছু থাকে তবে তা থেকে পানাহ চাও আর ভাল কিছু থকলে তার জন্য কল্যাণ কামনা কর।
বায়ু দূষন রোধে ইসলাম বিভিন্নভাবে তাগিদ দিয়েছে।
১. বায়ুত অনিষ্টতা থেকে পানাহা চাওয়াঃ বায়ুতে যত ধরনের ক্ষতিকারক পদার্থ আছে তা থেকে পানাহা চাওয়ার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের হাত থেক রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।মুসলিম শরীফে হাদীস এসেছে যখন বায়ু প্রবাহিত হত তখন মহানবী (সাঃ) এই দুআ করতেন যে, বায়ুর ভিতর যা উত্তম তা আমি চাই আর যা ক্ষতিকর দিক তা থেকে পানাহা চাই। যখন মানুষ এরকম বায়ু নিয়ে গবেষণা শুরু করে নাই ঐ সময় এমন দুআ সত্যি খুব উৎসাহব্যঞ্জক।বায়ুর ক্ষতিকর দিকে থেকে পানাহা চাওয়া হল এবং উত্তম দিকগুলোর জন্য দুআ করা হল।পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর দিকগুলো অর্থাৎ সীসা,ক্যাডিয়াম,কার্বন মনোক্সাইডের ক্ষতিকর দিকেগুলো থেকে পানাহা চাওয়া হল।তাহলে বাতাসের ভিতর এমন কিছু ক্ষতিকর উপাদান আছে যা মানুষের সাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।যার দ্বারা সে সহজে জীবন-ধারন করতে পারবে না।আর সেই ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রাসূল(সাঃ) আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছে।এ বক্তব্যটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।বাতাসে যে ক্ষতিকর দিক আছে তা এই হাদীসের দ্বারা তুলে ধরা হয়েছে।আমরা এই হাদীস থেকে জানতে পারলাম যে বাতাসের ভিতর ক্ষতিকর প্রভাব বিরাজমান।এই সময় কেউ সেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে নাই।বাতাসের ভিতর কল্যাণকর দিক আছে এবং অকল্যাণকর দিক আছে তা বুঝানো হয়েছে।উবাই ইবনে কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেন্, তোমরা বাতাসকে গালি দিও না।যদি তার ভিতর কোন খারাপ কিছু থাকে তবে তা থেকে পানাহ চাও আর ভাল কিছু থকলে তার জন্য কল্যাণ কামনা কর। এখন আমাদের এই বিষয়টি গবেষণা করা উচিৎ যে বাতাসের ভিতর কত অকল্যাণকর জিনিস আছে।তা আমাদের এই গবেষণায় প্রমাণিত।তাহলে বাতাসের ভিতর যেসকল খারাপ দিক আছে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করতে হবে আবার সেই সাথে নিজেকেও তা থেকে মুক্ত করতে হবে। অর্থাৎ, ইসলাম বায়ু দুষন রোধ করার জন্য বিশেষ কিছু দিক নির্দেশনা প্রদান করেছে।এখন আমাদেরকে পরীক্ষা গবেষণা করে বের করতে হবে যে বাতাসের ভিতর কি কি ক্ষতিকর দিক আছে আর তা থেকে কীভাবে নিজেকে মুক্ত রাখা যায়।তারপর আমরা দেখি যে, মুহাম্মদ(সাঃ) যখন হিজরত করেন তখন মুহাম্মদ(সাঃ) এর বাসা চারদিকে ঘিরে রেখেছিল কাফিরগণ।তিনি যখন বালি নিক্ষেপ করেছিলেন তখন তাদের চোখ একেবারে স্তিমিত হয়ে যায় যার দরুন তারা চোখে কিছুই দেখতে পায় নাই।তাহলে ঐ বাতাসের ভিতর নিশ্চয় এমন কোন খারাপ উপাদান ছিল যা তাদের জন্য ক্ষতিকর ছিল।
২. ধূমপান না করার দ্বারাঃ ইসলাম মানুষকে ধূমপান না করার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দিয়েছে।একটি মানুষ ধূমপান করছে,আবার কেউ গাড়ী থেকে কালো ধোঁয়া নির্গমন করছে। কেউ যদি প্রকৃতপক্ষে মুসলিম হয়ে থাকে তাহলে তার দ্বারা এসকল খারাপ কাজ হতে পারে না।কেউ যদি মুমিন মুসলিম হয় তাহলে সে চিন্তা করবে যে, আমি যদি সিগারেট খাই তাহলে আমার দ্বারা অনেক মুসলিম ভাই কষ্ট পাবে সেই ই মনে করে সিগারেট খাবে না।আর যদি সে মুমিন না হয় তাহলে তা সে করবে।এই সিগারেটকে মাকরুহ বলা হলেও তা দ্বারা তিনটি হারাম হয় যা হল ১. অন্যকে কষ্ট দেওয়া, ২. অপব্যয়,  ৩. নিজের ক্ষতি হয়। তাহলে যে সিগারেট খায় সে যে একজন মহাপাপী তাতে কোন সন্দেহ নাই।সে জাহান্নামী হবে।কারণ সে নিশ্চিত মানুষের ক্ষতি করছে।ইসলাম কিন্তু এভাবে করে বাতাস দুষিত মুক্ত করতে বলে। ইসলাম এ আরও বলা হয়েছে,ঐ ব্যক্তি মুসলিম নয় যার হাত ও মুখ থেকে অন্য কোন মুসলিম নিরাপদ নয়।
৩. কষ্টদায়ক বস্তু সরানোর মধ্য দিয়েঃ রাস্তাঘাটে যদি কোন কষ্টদায়ক বস্তু থাকে তাহলে তা সরানোর মাধ্যমে বায়ু দূষণ রোধ করা যায় যা থেকে বায়ু দূষিত হতে পারে। তাই হাদীসে বলা হয়েছে, ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর হল রাস্তা থেকে কোন কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা।
৪. মাটিতে দাফন করাঃ কেউ যখন মারা যায় তখন তাকে ইসলাম সঙ্গে সঙ্গে কবর দিতে বলে যাতে করে পরিবেশের কোন ধরনের দূষণ না হয়। কুরআন পাঠ করলে আমরা আরেকটি বিষয় জানতে পারি যে, যে জিনিসটা পচে যায় তা মরে যাওয়ার পর মাটিতে পুতে ফেলতে হয়।আমরা কুরআন থেকে জানতে পারি যে, কাবিল যখন হাবিল্অকে হত্যা করে তখন তখন দুটি কাক সেখানে আসে আর তাদের একজন আরেকজনকে হত্যা করে বালি দেওয়ার মাধ্যমে হাবিলকে ঢেকে ফেলা হয়।তাহলে আমাদের কুরআন এই নির্দেশ দিচ্ছে যে্‌কেউ মারা গেলে তাকে মাটি দিতে হয়।কিন্তু আমরা মুসলিম হয়েও তা বুঝি না।কিন্তা তা যখন বিজ্ঞান বলছে এই কথা বলতে তখন আমরা মানছি।
৫. আগুন নিভানোর মাধ্যমেঃ তারপর হাদীসে বলা হয়েছে যে, তোমরা ঘুমানোর আগে তোমরা তোমাদের আগুন নিভিয়ে দাও। এই হাদীসের দ্বারা বায়ু দুষনের রোধের কথা বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে।কারন আগুন জ্বালানো থাকলে সেখানে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বাড়তে থাকে।আর অক্সিজেনের পরিমাণ কমতে থাকে।এতে করে বদ্ব ঘরে জীবন-যাপনকারী ব্যক্তি ক্ষতির সম্মুখীন হয়।তাই তিনি তা নিভাতে বলেছেন।হাদীসে আরও বলা হয়েছে আগুন হল তোমাদের শত্রু।তাই তোমরা ঘুমানোর আগে তা নিভিয়ে ফেল। তাছাড়া আগুন পরিবেশে কার্বনের পরিমান বাড়ায় আর অক্সিজেনের পরিমাণ কমায়।তাই ঘুমানোর আগে যে আগুন নিভাতে হয় তার দ্বারা পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা হয়।
৬. হাঁচি দানকালে মুখে হাতঃ রাসূল(সাঃ) হাচি কিংবা হাই তোলার সময় মুখে হাত দিতে বলেন যার দ্বারা ঐ হাচিদানকারী ব্যক্তি কিংবা হাইতোলাকারীর ব্যক্তির জীবানু অন্যের ভিতর প্রবেশ না করে।
৭. দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু আহার না করাঃ তারপর আমাদের রাসূল(সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি দুর্গন্ধযুক্ত দ্রব্য খায় সে যেন ঐ অবস্থায় মসজিদে না আসে। এর ভিতর কিন্তু পরিবেশকে রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে।কারন এর দ্বারা অন্য মানুষের ক্ষতি করতে নিষেধ করা হয়েছে।
শব্দ দূষণ রোধে ইসলাম
মানুষ বর্তমানে বিভিন্নভাবে শব্দ দুষন করছে।তা দূর করার জন্য ইসলাম কিছু বিধান দিয়েছে যেমনঃ
(ক) নিম্নস্বরে কথা বলার দ্বারাঃ যখন কী উঁচু গলায় কথা না বলে নিম্নস্বরে কথা বলবে তখন তার দ্বারা পরিবেশ দূষণ অনেকাংশে রক্ষা পাবে।আল্লাহ বলেন,
আপনি নিজের নামায আদায়কালে স্বর উচ্চগ্রাসে নিয়ে গিয়ে পড়বেন না এবং নিঃশব্দেও পড়বেন না। এতউভয়ের মধ্যমপন্থা অবলম্বন করুন। [বনী-ঈসরাইলঃ১১০]
মুমিনগণ! তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর তোমাদের কন্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উঁচুস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরূপ উঁচুস্বরে কথা বলো না। [হুজুরাতঃ২]
(খ) নীরবে যিকিরঃ যখন কোন একজন মুমিন বান্দা নিম্ন কণ্ঠে যিকির করতে থাকবে তাহলে এর দ্বারা পরিবেশ দুষন অনেকাংশে হ্রাস্ব পাবে। আল্লাহ বলেন,
তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক, কাকুতি-মিনতি করে এবং সংগোপনে। [আরাফঃ৫৫]
রাসূল(সাঃ) বলেন, নীরবে যিকির উত্তম
(গ)নীরবে দুআঃ ইসলাম সর্বদা মানুষকে নীরবে দুআ করতে বলে যার দ্বারা শব্দ দূষণ অনেকাংশ হ্রাস্ব পায়। এ ব্যাপারে রাসূল(সাঃ) বলেন,
নীরবে দুয়া জোড়ে দুয়া হতে উত্তম
(ঘ) নীরবে কুরআন পাঠঃ চুপি চুপি কুরআন তিলওয়াতের দ্বারা শব্দ দূষণ অনেকাংশে হ্রাস্ব পায়। হাদীসে বলা হয়েছে,
তোমরা কুরআন পাঠের সময় একে অপরের চেয়ে কন্ঠস্বরকে উঁচু করবে না।
উপরোক্ত নিয়ম-নীতি অনুসরণ করলে একজন মুসলিম শব্দ দূষণের হাত থেকে পরিবেশকে রক্ষা করতে পারে।
উপসংহার

পরিবেশ দূষণ রোধে ইসলানের ভূমিকা ব্যাপক,কেউ ইসলামী নীতিমালা অনুযায়ী জীবন-যাপন করলে পরিবেশ দূষণ রোধ করা অনেকটা সম্ভবপর হবে।

৩৮ তম বিসিএস এর রেজাল্ট

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এ কথা নিশ্চিত করেন। ...